একটানা খেলা দেখা ডেকে আনবে নানা অসুখ। ব্যায়ামে আস্থা রাখুন।
গোটা ভারত তথা কলকাতায় এখন ভোট কেটে গিয়ে জায়গায় জায়গায় জোট। মূল আলোচনা বিশ্বকাপ কোন দেশের ঘরে উঠবে। তুঙ্গে উত্তেজনার চটকদার নাম ক্রিকেট-জ্বর।
তবে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মত এই জ্বর প্রাণঘাতী নয়। এ আদতে মশলা দেওয়া বিনোদনের জ্বর। প্রত্যাশার পারদ চড়ছে। সোফা বা চেয়ারে হেলান দিয়ে টিভির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে এক্সপার্ট কমেন্ট।
তবে এই দীর্ঘ দিন অনেকটা সময় ধরে একটানা ঘাড়-চোখ সোজা করে বসে বা কাত হয়ে শুয়ে একটানা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কোনও কোনও সময় শরীরই জানান দেবে উত্তেজনার মাঝেও কিছু বড় বিষয়ে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তাই ব্যায়াম ছাড়া গতি নেই।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাকের হানা! কোন কোন লক্ষণে হতে হবে সতর্ক? অসুখ ঠেকাবেন কী উপায়ে
কোনটা চিন্তার?
ফুটবল বিশ্বকাপের সময় অন্য রকম ছিল। তাতে রাত জেগে খেলা দেখার দরুণ শরীরের নানা জটিলতা ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে এ বছরের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারতে সম্প্রচার হওয়ার সময়টা বিকেল ৩টে থেকে। সুতরাং ঘুমের ঘাটতির ভয় নেই। তবে ভয় আছে ঘাড়, কাঁধ আর কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার।
ব্যাটিংয়ের মতই শরীরের অবস্থান
সোফাতে আধা শোয়া অথবা চেয়ারে আধা বসা-আধা শোয়া অবস্থায় টানা খেলা দেখলে বিশ্বকাপের শুরুর দিকেই আপানার ঘাড় আর কাঁধ কিন্তু একই ভাবে আক্রান্ত হবে।
পিঠ টানটান রেখে খেলা দেখুন। অবস্থান(পজিশন) রোটেট করুন মাঝে মাঝেই।
ব্যাটসম্যানরা স্ট্রাইক রোটেট করেন প্রতি কুড়ি-ত্রিশ মিনিট বাদে বাদে। আপনিও বসা বা শোওয়ার অবস্থান পাল্টান। উঠে একটু হাঁটাচলা করুন। না হলে ঘাড় আর কাঁধের পেশি একই ভঙ্গিতে থাকার দরুণ সঙ্কুচিত হবে ও আপনি ব্যথার শিকার হবেন।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ওজন, সঙ্গে হাঁটুর ব্যথা? অল্প পরিশ্রমের এ সব ব্যায়ামেই বাজিমাত!
ড্রিঙ্কস ব্রেক মানেই স্ট্রেচ
খেলা দেখতে দেখতে জলপানের বিরতিতে সহজ দু’টি স্ট্রেচ করুন।
ট্রাপিজিয়াস স্ট্রেচ: ঘাড়ের পাশাপাশি এই পেশীর স্ট্রেচ করলে একই ভঙ্গিতে থাকায় পেীর সঙ্কোচন এড়ানো যায়। ঘাড় বাঁ দিকে কাত করে বাঁ হাত দিয়ে টেনে রাখুন দশ সেকেন্ড। ব্যথা না লাগে ততটা টানুন। তিনবার করে দু’দিকে করুন জায়গায় বসে। (ভিডিয়ো দেখুন)
চিনটাক: ও ভাবে বসে থেকেই থুতনিটা (চিন) গলার দিকে নিয়ে মাথা পিছন দিকে চাপ দিয়ে ঠেলুন আর ছাড়ুন। মোট দশ পনেরবার। প্রিয় দলের জিততে ছয় বলে দরকার বারো রান? উফ! টেনশনই টেনশন! ব্যায়াম গুলো কেলার বিরতির সময় করুন। টেনশনের চাপ ঘাড়ে জাঁকিয়ে বসতে পারবে না।
কাঁধে নেই ভারতের ভার
আধশোওয়া বা কোমর এগিয়ে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসলে বুকের পিছনের মেরুদণ্ড গোলাকার ধারণ করে। কাঁধের পেশী শক্ত হয়। এক দেড় মাস এই জিনিস চলতে থাকলে নির্ঘাত রোটেটর পেশীর সমস্যা বা ফ্রোজেন শোল্ডার।
খেলা দেখুন স্ট্রেচ করুন
চেস্ট স্ট্রেচ: বসার চেয়ারে ব্যাকরেস্ট বা ঘরের গ্রিল দু’হাত দিয়ে পিছন দিকে ধরে শরীরটা সামনে নিন, যাতে কাঁধে টান লাগে। দশ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তিন বার রিপিট করুন। (ভিডিয়ো দেখুন)
রোটেটর স্ট্রেচ: চেয়ারে বসে ডান হাত কোমরে রাখুন ঠিক কোমর ধরে দাঁড়ানোর মত। এ বার বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের কনুইটা ধরে রাখুন ১০ সেকেন্ড। ডান-বাঁ দু’হাতই ১০ সেকেন্ড করে তিন বার (ভিডিয়ো দেখুন)। এতে আরাম পাবেন।
টুকটাক কুসংস্কার ক্রিকেট ভক্ত চালু ব্যাপার। খেলা দেখতে বসে এই টুকটাক দর্শকদের মধ্যে আরও বেশি। পর পর উইকেট পড়ছে— ওই তুই ঢুকবি না। রোহিত-ধওয়নের বড় পার্টনারশিপ চলছে, কেউ চেয়ার থেকে নড়বি না এমন কত কী আরকি। উত্তেজনায় কাঠ হয়ে ঘণ্টাখানেক চেয়ারে নট নড়ন চড়ন মানে কোমরের পেশী সঙ্কুচিত হওয়া। কোমর ধরে যাবে। যদি ৭ ঘণ্টার ম্যাচে এরকম টুকটাক ৪-৫ ঘণ্টা চলে, সেটা কিন্তু বিপজ্জনক। এখানেও ২০-৩০ মিনিট বাদে বাদে কুসংস্কার ঝেড়ে হাঁটাহাঁটি করুন বা উঠে দাঁড়ান।
আরও পড়ুন: এ সব উপায়েই মিটবে হজমের সমস্যা, কমবে মেদ! কিন্তু কী ভাবে?
ফিগ ৪ স্ট্রেচ: বসে এক পা অন্য পায়ের হাঁটুর উপর রাখুন। এ বার মেরুদণ্ড টানটান রেখে শরীরটা সামনের দিকে ঝোঁকান। দেখবেন কোমরের নীচের গ্লুটাস পেশীতে টান পড়ছে। ১০ সেকেন্ড করে দু’পায়েই তিন বার করে করুন। ৭ ঘণ্টার ম্যাচ হলে ৩ ঘণ্টা বাদে করতে পারেন।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: বসে ডান পায়ের হাঁটু সোজা রেখে বাঁ পায়ের হাঁটু ভাঁজ রাখুন। এবার মেরুদণ্ড টানটান রেখে সামনে ঝুঁকুন। দেখবেন থাইয়ের পিছনে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ছে। দু’পায়েই ১০ সেকেন্ড করে তিন বার। এটাও ৭ ঘণ্টার ম্যাচ হলে ৩ ঘণ্টা বাদে করুন। যাঁদের কোমরে আগে থেকেই ব্যথা আছে তাঁরা টিভি দেখতে দেখতেই কোমরের ব্যায়াম করে নিন।
বার্ড ডগ: ঠিক হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে থেকে ডান হাত সামনে বাড়ান কাঁধ বরাবর। একই সঙ্গে বাঁ পা টা কোমর বরাবর পিছন দিকে টানটান করে বাড়ান। ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। দু’দিকেই তিন বার করে।
টেনশন ভাঙান
যাঁরা বেশি টেনশনে ভোগেন, খেলার উত্তেজনার মুহূর্তে উঠে হাঁটাচলা করুন। ১০-১৫টি গভীর শ্বাস নিন অর্থাৎ পেট থেকে শ্বাস নিন আর লম্বা শ্বাস ছাড়ুন। এতে শরীর রিল্যাক্স হবে। টেনশন কাটানোর আর একটা উপায় হল খেলা শুরুর ৩০ মিনিট আগে আপনি আধ ঘণ্টার একটা ওয়ার্কআউট করে টিভির সামনে বসুন। দেখবেন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জমিয়ে বুম বুম বুমরার বোলিং বা বিরাট-রোহিতের ব্যাটিং বা ধোনির মস্তিষ্কপ্রসূত ছক কেমন উপভোগ করছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy