মাসল পুল খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নানা কারণেই হঠাৎ আমাদের কোনও পেশিতে টান ধরতে পারে। আচমকা টান ধরলে যন্ত্রণা শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ সেই যন্ত্রণা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তা দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে যায়।
এই মাসল পুলের কারণ কী?
অনেক কারণেই মাসল পুল হয়ে থাকে—
• শরীরের যে কোনও একটি মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে। যেমন— দীর্ঘক্ষণ হাঁটা বা এক ভাবে কোনও কাজ করা, গাড়ি চালানো, কম্পিউটারে বসে বহুক্ষণ কাজ করা। এ সব ক্ষেত্রে কাফ মাসলে বা কাঁধ, ঘাড়, পিঠের মাংসপেশিতে টান ধরতে পারে।
• শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন হলে।
• ব্যায়াম বা খেলাধুলো বা যে কোনও শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্ম আপ না করলে।
• পেশি ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে।
• হঠাৎ ভারী কিছু তুলতে গেলে টান লেগেও এ ধরনের ব্যথা হয়।
• মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণেও মাসল পুল হতে পারে।
• শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের অভাব হলে।
মাসল পুল হলে কী করবেন?
হঠাৎ মাসল পুল হলে ঘাবড়াবেন না। বরং ঠান্ডা মাথায় এর সমাধান করুন।
যে জায়গায় পুল হয়েছে, সেখানে বরফ লাগাতে পারলে সবচেয়ে ভাল। সব সময়ে সেটা সম্ভব হয় না। রাস্তাঘাটে থাকলে বরফ পাওয়া যাবে না। তখন ঠান্ডা জলের ধারা দেওয়া যেতে পারে। পিঠে, ঘাড়ে বা কোমরে মাসল পুল হলে, সেখানে ঠান্ডা জলের বোতল চেপে ধরে রাখলেও ফল পাওয়া যাবে।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় আবার চারটি ব্যায়ামের কথা বলেছেন। যেগুলি নিয়মিত করলে মাসল পুল কম হবে। এমনকি হঠাৎ মাসল পুল হলেও এই ব্যায়ামগুলি করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যাবে।
ফিগার ফোর হিপ স্ট্রেচ
অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করার পরে উঠতে গেলে দেখা যায়, কোমরে টান ধরেছে। এ রকম মাসল পুল হলে ফিগার ফোর হিপ স্ট্রেচ করা যায়। হাঁটুর উপরে এক পা তুলে বসতে হবে। ওই ভাবে হাঁটুর উপরে পা তুললে দেখতে অনেকটা ইংরেজি চারের মতো লাগে (4)। এর পরে শরীর সামনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। দেখা যাবে হিপের অংশে টান পড়ছে। এই ভাবে দশ সেকেন্ড থাকতে হবে। পা পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে তিন-চার বার ব্যায়ামটি করলে আরাম পাওয়া যাবে। আর নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে কোমরে টান ধরা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি পা চেয়ারে তুলে দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকলে দেখা যাবে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরছে। এটা চেয়ারে বসেও করা যায়। একটি পা মাটিতে থাকা অবস্থায় অন্য পা সোজা করে সামনের দিকে টান করে শরীর ঝোঁকাতে হবে। পা শূন্যে না রেখে অন্য চেয়ারেও তুলে রাখা যায়। হ্যামস্ট্রিং পুলের জন্য এই ব্যায়ামটি অনবদ্য।
চেয়ার সাপোর্ট শোল্ডার ফ্লেক্সন:
ঘাড় বা পিঠের মাংসপেশিতে পুল হলে এই ব্যায়ামটি করা যায়। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সামনে কোনও চেয়ার বা গ্রিল থাকলে, দু’হাত সোজা করে সেটি ধরতে হবে। তার পরে পা সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। এটি করলেই পিঠের অংশের পেশিতে টান পড়ে। তবে নিয়মিত করার ফলে পিঠ এবং ঘাড়ে মাসল পুল কম হয়। মাসল পুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা করলে ব্যথা কমে অনেক হালকা লাগে।
ওয়াল সাপোর্টেড কাফ স্ট্রেচ
হাত দু’টি সোজা করে দেওয়াল ধরতে হবে। দেওয়ালে পুশ করার মতো জোর দিতে হবে। এর সঙ্গে হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে একটি পা এগিয়ে রাখতে হবে। অপর পা তিন ফুট মতো পিছন দিকে নিয়ে হাঁটু সোজা করে টানটান রাখতে হবে। পিছনের পায়ের গোড়ালি যেন মাটিতে চেপে থাকে। এ ভাবে কিছুক্ষণ থাকলে কাফ মাসলে টান পড়বে। এটি নিয়মিত করলে কাফ মাসল পুল কম হবে।
চিন্ময় রায় অবশ্য বললেন, ‘‘কাফ মাসল পুলের সঙ্গে জল কম খাওয়ার একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়লে কাফ মাসল পুল বেশি হয়। যাঁদের কাফ মাসল পুল বেশি হয়, তাঁদের ব্যায়াম করার পাশাপাশি বেশি করে জলও খেতে হবে। যাঁদের বেশি ঘাম হয়, তাঁদের এই কাফ মাসল পুল বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘামের সঙ্গেও শরীর থেকে অনেকটা সল্ট বেরিয়ে যায়। তাই নুন দিয়ে জল খাওয়া ভাল।’’
এমন কিছু ছোট ছোট জিনিস মাথায় রাখলেই মাসল পুল থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তথ্য সহায়তা: ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy