কোভিড-১৯-এর ভয়ংকর প্রাদুর্ভাব জনসাধারণকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ-সংক্রামক অসুখ সম্পর্কে উদাসীন করে তুলেছে– হৃদরোগ এদের মধ্যে অন্যতম। কোভিডের প্রাবল্য বেশি মানে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম, ব্যাপারটা এরকম একেবারেই নয়।
এ প্রসঙ্গে কলকাতা অ্যাপোলো গ্লেনইগলসের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ড. সুশান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা জানি যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব স্বাভাবিক জনজীবনকে যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, এমন অনেক অসংক্রামক রোগও আছে, যা রোগীদের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।’
ড. মুখোপাধ্যায় আরও জানান, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়ে সংশয়ী হওয়ায়, জরুরি অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রভূত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই, পৃথিবী জুড়ে বেড়ে চলেছে হৃদরোগের সমস্যাও। ডা. মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য উন্নততর চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভূত হচ্ছে– যা কিনা এই অতিমারী পরিস্থিতিতে ফলদায়ক।
এরকমই এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি হল: ‘মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি’। এই ধরনের চিকিৎসায় বুকে কয়েকটি খুব ছোট ছিদ্র করে (এক বা দু’ইঞ্চি) পাঁজরের মধ্য দিয়ে গোটা হার্ট অপারেশনটি করা সম্ভব। ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’র মতো ব্রেস্টবোন কেটে নয়, এই অপারেশনটি একেবারের নূ্যনতম। ডা. মুখোপাধ্যায়ের বলেছেন, এই সার্জারিতে রোগীকে অপেক্ষাকৃত কম দিন হাসপাতালে থাকতে হয়, বাইরে থেকে রক্তের প্রয়োজনীয়তাও কম হয়। সর্বোপরি রোগী খুব দ্রুত স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরতে পারেন।
‘আমরা কোভিডের সময়ে ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ সার্জারি করেছি এবং বেশিরভাগ ইস্কেমিক হৃদরোগের কারণে প্রয়োজনীয় করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি হয়েছে– যা কিনা একটি জরুরি সমস্যা। এবং যদি সঙ্গে সঙ্গে এর চিকিৎসা না করা হয়, একজন রোগীর মৃত্যুর সম্ভবনাও থাকে,’ বলেছেন ডা. মুখোপাধ্যায়।
ডা. মুখোপাধ্যায় বর্ণনা করেছেন, কীভাবে অ্যাপোলো কলকাতা গ্লেনইগলস হাসপাতাল অতিমারীর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে তাঁর বিভাগচালিত মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারিগুলি একটি কঠোর বিধি অনুসরণ করে থাকে। যে কারণে সমস্ত জায়গাগুলি বন্ধ এবং জীবাণুমুক্ত থাকে। এবং কোনও অপারেটিং থিয়েটারের এয়ার কলামের বায়ু অন্য অপারেটিং থিয়েটারের এয়ার কলামে প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি হয় না। তা সত্ত্বেও, অ্যানেসথেসিয়া চলাকালীন, রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ট্র্যাক্টটি বিচ্ছিন্ন থাকে এবং একটি বদ্ধ লুপ ভেন্টিলেটরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে যাতে থিয়েটার থেকে বায়ু তাঁদের শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমে প্রবেশ না করে।
ডা. মুখোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেছেন যে, রুগিদের কার্ডিয়াক সার্জারিতে ভর্তি করার আগে তাঁদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়ে থাকে, যাতে তাঁরা কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করা যায়।
‘অ্যাপোলো হাসপাতাল একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল। হাসপাতালটি হেপা ফিল্টার এবং এয়ারফ্লো সিস্টেমে সজ্জিত, যা ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাস প্রতিরোধ করে। অ্যাপলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরন্তর কোভিড সংক্রমণের পরীক্ষা করা হয় এবং সংক্রমণমুক্ত থাকলে তবেই কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমরা রোগীকে যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি। আমরা বলতে পারি না যে, এটাই ১০০ শতাংশ নিরাপদ ব্যবস্থা, তবে এই সময়ে রোগীর চিকিত্সা করার তিনটি দিক রয়েছে। এক, রোগীর নিরাপত্তা, দুই, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা এবং তিন, হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করা, তার সুরক্ষা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,’ জানিয়েছেন ডা. মুখোপাধ্যায়।
পরিশেষে, ডা. মুখোপাধ্যায় প্রত্যেককে এই কোভিড পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অবহেলা না করতে এবং কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। তাছাড়া, তিনি বেশ কয়েকটি মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক টিউমার সার্জারি সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য তাঁর বিভাগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘এই সার্জারিগুলিতে যে জাতীয় সূক্ষ্ণ কাটাছেঁড়া জড়িত ছিল, তা আর অন্য কোথাও বোধহয় সম্ভব হত না।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy