অনেক ব্যাকটিরিয়াই আমাদের শরীরের মধ্যে থাকে। তাদের মধ্যে কিছু বন্ধু ব্যাকটিরিয়া, কিছু শত্রু। আবার কিছু ব্যাকটিরিয়া কাজে লাগলেও, কিছু ক্ষেত্রে তা শত্রু। যেমন ই কোলাই। কী ভাবে এই ব্যাকটিরিয়া কাজ করে, কী ধরনের অসুখ হতে পারে... এ বার জেনে নেব একে-একে।
ই কোলাই কী?
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘এসচেরিকিয়া কোলাই হল এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া, সহবাসী প্যাথোজেন যা মানুষ ও পশুদের অন্ত্রে থাকে। এটি আমাদের শরীরে ভিটামিন বি-৯ এবং বায়োটিন তৈরি করে, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। বায়োটিন আবার আমাদের নখ, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরি। অন্ত্রে থাকার ফলে সেখানে অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি আটকায় এটি। ই-কোলাই ফাইবার জাতীয় খাদ্য হজম করতেও সাহায্য করে। কিন্তু কখনও কখনও সেটা যদি অন্য অঙ্গে চলে যায় তখনই হয় বিপত্তি। ক্যানসার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এইচআইভি-র রোগীরা যে ওষুধ খান, সেগুলি ইমিউনোসাপ্রেসিভ হয়। অর্থাৎ শরীরে অনাক্রম্যতা (ইমিউনিটি) কমিয়ে ফেলে। তখন এই ব্যাকটিরিয়াগুলি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।’’ আর সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এর একটি সাধারণ লক্ষণ হল ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই। যেহেতু পায়ুছিদ্র এবং মূত্রছিদ্র পাশাপাশি রয়েছে, অনেক সময়ে এই ব্যাকটিরিয়াগুলি মূত্রনালিতে অসাবধানবশত চলে গেলে মূত্রনালিতে সংক্রমণ (ইউটিআই) হয়।
ইউটিআই কাদের হয়?
মেয়েদের, বিশেষত বয়স্ক মহিলাদের, এবং ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের শরীরে নানা ধরনের এনজ়াইম ও হরমোন থাকে, যেগুলি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মহিলাদের মেনোপজ়ের সময়ে কিছু বিশেষ হরমোন শরীরে নিঃসরণ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এঁদের ইউটিআই বেশি হয় বলে জানালেন ডা. মণ্ডল। তিনি এ-ও বললেন, ‘‘ছোট ছেলে শিশুদের অনেক সময়ে যৌনাঙ্গের মুখের চামড়া বন্ধ থাকার ফলে ফাইমোসিস হয়। এর ফলে মূত্র ঠিক মতো নির্গত হতে পারে না। তার ফলে এরা ইউটিআই-তে ভুগতে পারে।’’
এর লক্ষণ কী?
ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল জানালেন, সাধারণত ইউটিআই হলে কয়েকটা মূল লক্ষণ দেখা যায়— জ্বর হবে কিংবা জ্বর জ্বর ভাব থাকবে, তলপেটে ব্যথা বা চাপ চাপ ভাব থাকবে। বারবার প্রস্রাব হবে, মূত্রের স্থানে পচা মাছের মতো দুর্গন্ধ থাকবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চুলকানিও থাকতে পারে। ফলে এই ধরনের লক্ষণ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং তাঁর কথা মতো পরীক্ষা করাতে হবে। না হলে যদি ব্যাকটিরিয়াগুলি কোনও কারণে কিডনিতে পৌঁছে যায়, তা হলে পায়েলোনেফ্রাইটিস-এর মতো গুরুতর সমস্যাও হতে পারে। এটা এক প্রকার বৃক্কে সংক্রমণ। এ ক্ষেত্রে জ্বর, বমি ভাব, পেটে ব্যথা করা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আর এটা যদি কোনও কারণে বেড়ে যায় তা হলে সেপসিস বা কিডনি ফেলিয়োর-ও হতে পারে।
ইউটিআই-এর জন্য কী পরীক্ষা করতে হবে?
সাধারণ মূত্র পরীক্ষা (ইউরিন কালচার) করলেই কিন্তু ইউটিআই ধরা যায়। কিন্তু কারও যদি বারবার ইউটিআই হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সিসটোস্পোকি করতে হয়। ইউরিনারি ব্লাডারের মধ্যে ক্যামেরা দিয়ে দেখে নেওয়া হয় কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। পায়েলোনেফ্রাইটিস পেটের সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে।
এর চিকিৎসা কী?
বেশি করে জল খেতে হবে, চিকিৎসকের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা— এগুলি করলেই সাধারণত ইউটিআই সেরে যায়। বারবার ইউটিআই হলে অনেক সময়ে চিকিৎসকরা যোনিতে হরমোন জাতীয় মলম লাগানোর পরামর্শ দেন।
এই সময়ে খাওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না। কিন্তু কিছু জিনিস যেমন বেশি চা-কফি, অ্যালকোহল কিংবা লেমন জুস ব্লাডার ইরিটেশন বাড়িয়ে দেয়। আর যাঁদের ঘন ঘন ইউটিআই হয়, তাঁদের ক্র্যানবেরি জুস খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন
ডা. মণ্ডল।
ই-কোলাই এর ফলে কী রোগ হতে পারে?
ডা. মণ্ডল বললেন, ইউটিআই হয়। তা ছাড়া অন্ত্রের সংক্রমণও হতে পারে। পরিচ্ছন্নতার অভাবে, কাঁচা বা পচা মাংস, মাছ খেলে, কাঁচা দুধ ফুটিয়ে না খেলে অন্ত্রে ই-কোলাই-র যে সংক্রমণ হতে পারে, তা অন্ত্রে স্টিগা নামে একটি টক্সিন তৈরি করে, যা অন্ত্রের ভিতরের দেওয়াল নষ্ট করে দিতে পারে। এর ফলে পেট ব্যথা, ডােয়রিয়া, নসিয়া এবং ভীষণ ক্লান্তি ভাব আসতে পারে। এটি যাচাই করতে মল পরীক্ষা করতে হয়। তার পরে অন্ত্রে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই রোগ নিরাময় করা হয়। অন্য কোনও অ্যান্টিবায়োটিক কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাজ করবে না, বরং তার উল্টো ফল হতে পারে। ভারতে এই রোগ কম দেখা গেলেও বিদেশে এই রোগের হার বেশ বেশি। কিন্তু আমাদের দেশের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
ইউটিআই-এ মূত্রের রুটিন ও কালচার পরীক্ষা করে জানা যায়, কোন ব্যাকটিরিয়ার কারণে সংক্রমণটি হয়েছে। না হলে ভুল অ্যান্টিবায়োটিকের ফলে
অসুস্থতা জটিল পর্যায়ে চলে
যেতে পারে।
মডেল: মৌমিতা সরকার
ছবি: সৌরভ মুখোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy