গোটা প্রক্রিয়াটি ঘিরে একাধিক ঝুঁকি ও সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
মায়ের জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হবে মেয়ের শরীরে। এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগে এমনই এক অস্ত্রোপচারের সলতে পাকানোর কাজ চলছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে প্রথম এমন প্রতিস্থাপন সফল হলে জন্ম থেকে জরায়ুহীন বা অস্ত্রোপচারে জরায়ু বাদ গিয়েছে, এমন মহিলাদের কাছে সন্তানলাভের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াটি ঘিরে একাধিক ঝুঁকি ও সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘পিজিতে এই প্রতিস্থাপন হলে তা হবে দেশে সরকারি স্তরে দ্বিতীয় বার। চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি মাইলফলক পার করবে রাজ্য। কিন্তু সেই পথে যে বাধাগুলি রয়েছে তাতে আদৌ কতটা সাফল্য আসবে, সেই সংশয় থাকছেই।’’
এর সঙ্গেই রয়েছে মোটা খরচের ধাক্কা। ২০০০ সালে সৌদি আরবে প্রথম জরায়ু প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়। ২০১৪-তে সুইডেনে চিকিৎসক মট ব্র্যানস্টর্মের হাত ধরে প্রথম ওই প্রতিস্থাপন সাফল্যের মুখ দেখে। ২০১৬ সালে আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে এর পরের প্রতিস্থাপন হয়। পরের বছরেই পুণের গ্যালাক্সি কেয়ার হাসপাতালে বিশ্বের চতুর্থ প্রতিস্থাপনটি করেন শৈলেশ পুনটামবেকার।
২০১৫ সালে চিকিৎসক ব্র্যানস্টর্ম কলকাতায় আসার পরে শহরের কয়েক জন চিকিৎসক বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি এবং সামগ্রিক পরিকাঠামোর অভাবে এ রাজ্যে ওই অস্ত্রোপচার আর হয়নি। সম্প্রতি পিজিতে এক তরুণীর শরীরে তাঁর মায়ের জরায়ু প্রতিস্থাপন করা যায় কি না, তার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। বছর আটেক আগে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই অস্ত্রোপচারে রোগীর ঝুঁকি অনেক বেশি। আমেরিকায় হওয়া প্রতিস্থাপনও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কোনও কারণে এক মাসের মধ্যে প্রতিস্থাপিত জরায়ু বার করে ফেলতে হয়েছিল।’’ বিশ্বে এখনও যতগুলি জরায়ু প্রতিস্থাপন হয়েছে, তার সাফল্যের হার স্পষ্ট নয় বলেই জানাচ্ছেন শহরের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকেরা।
তা হলে কেন এই অস্ত্রোপচার? প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনে হয়, এর পিছনে প্রচ্ছন্ন পারিবারিক চাপ থাকে। যাতে সেই নারী নিজের গর্ভে সন্তানধারণ করতে পারেন। আবার নিজের গর্ভস্থ সন্তানের বিষয়টি এক জন মহিলার কাছে বড় মানসিক সান্ত্বনা।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘অনিশ্চয়তা থাকলেও এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এত বড় অস্ত্রোপচারে রোগীর মারাত্মক কিছু হতে পারে, সেই আশঙ্কাতেই ওই কাজে এগোইনি। তবে অন্যেরা ওই পথে এগোতেই পারেন।’’
স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অন্যের অঙ্গ যাতে গ্রহীতার শরীর প্রত্যাখ্যান না করে, সে জন্য জরায়ু প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এক জন গ্রহীতাকে আজীবন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখার ওষুধ (ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি) খেয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই ‘ইমিউনোসাপ্রেসিভ’ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আবার জরায়ু প্রতিস্থাপন হলেও সন্তানধারণ করতে আইভিএফের সাহায্য নিতে হয়। নলজাতক শিশুর প্রক্রিয়া চলার সময়েও ‘ইমিউনোসাপ্রেসিভ’ ওষুধ খেতে হয়। অভিনিবেশের কথায়, ‘‘ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আচমকা গর্ভপাত, বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সেখানে নলজাতক পদ্ধতিতে গর্ভদাত্রী মায়ের (সারোগেট মাদার) সাহায্য নিলে নিজের জিনের সম্পর্কযুক্ত সন্তানলাভ সম্ভব। তাতে ঝুঁকি ও সন্তানের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও নেই।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সারা জীবন যাতে ওষুধ খেতে না হয়, সে জন্য একটি বা দু’টি সন্তানের জন্মের পরে ওই জরায়ু ফের বাদ দেওয়াই শ্রেয়।
তবে চিকিৎসাশাস্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানানোর পক্ষেই কথা বলছেন এক সময়ে রাজ্যে জরায়ু প্রতিস্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া শল্য চিকিৎসক মাখনলাল সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দীর্ঘ। এই প্রতিস্থাপনের বিশেষজ্ঞও হাতেগোনা। তবু চিকিৎসাশাস্ত্রের স্বার্থে এর সদর্থক দিকটি দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy