প্রতীকী চিত্র।
কেরলের অনেক জায়গায় পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়ার একটা রেওয়াজ রয়েছে। কলকাতাতেও, বিশেষ করে বর্ষায় সেই সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ প্রতি বছর বর্ষার মরসুমেই ডায়েরিয়া, ডিসেন্ট্রি-সহ পেটের রোগের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই সেই প্রবণতা ঠেকাতে পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়ার পক্ষে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
তাঁদের বক্তব্য, শহরের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে রাস্তার দু’ধারের জলের কল বা স্ট্যান্ডপোস্ট, টিউবওয়েল, এমনকি বাড়ির ভূগর্ভস্থ জলাধারও জলের নীচে চলে যায়। ফলে পানীয় জলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এখন শহরের প্রতিটি বাড়িতেই যে পানীয় জল পরিস্রুত করার ফিল্টার রয়েছে, এমন নয়। ফলে এই ক্ষেত্রে পানীয় জল ফুটিয়ে খেলে পেটের রোগের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। আবার বাড়িতে ফিল্টার থাকলেও এই পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে জল ফুটিয়ে খাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করছেন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘জলে সংক্রমণ রুখতে পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়া সহজতম পদ্ধতি। আমরা প্রত্যেকেই সেটা জানি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সহজ পদ্ধতিই প্রয়োজনের সময়ে অনুসরণ করি না। কারণ তা আমাদের সংস্কৃতিতে নেই।’’
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদারের মতে, কেরলের মতো কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গেও পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার। কারণ, তাতে জলে কোনও রকম প্যাথোজেন থাকে না। তাঁর কথায়, ‘‘পানীয় জল ফুটিয়ে প্রথমে তা ঠান্ডা করতে হবে। তার পরে উপরের অংশের জল তুলে খেলে পেটের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। নীচের দিকে যে অংশটুকু থিতিয়ে পড়েছে, তা ফেলে দিতে হবে।’’
কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, জলমগ্ন এলাকার রাস্তার কল বা স্ট্যান্ডপোস্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে জলে সংক্রমণ না ঘটে। জল নামলে ফের তা খুলে দেওয়া হবে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘তা ছাড়া জলমগ্ন এলাকায় স্ট্যান্ডপোস্ট বা টিউবওয়েলে জীবাণুনাশ করার জন্যও পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে পুরসভার জলের গাড়ির মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।’’ এমনিতেই গত মার্চে ভবানীপুর এলাকায় পানীয় জলের সংক্রমণের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার পর থেকেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে পুরসভা। পানীয় জলের পাইপলাইনে ছিদ্র মেরামতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট লাইনটি কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা-ও নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর-সহ শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় পানীয় জলে সংক্রমণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ওই সমস্ত এলাকায় ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।’’ বর্ষার সময়ে পেটের রোগ কী ভাবে বাড়ে, তা নিয়ে একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। অতীতের এমনই একটি সমীক্ষার উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, তপসিয়া, বেলেঘাটা, মানিকতলা, ফুলবাগান, ট্যাংরা, বেনিয়াপুকুর, তিলজলায় কলেরা-প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল। এখনও সেই ধারা রয়েছে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে জল ফুটিয়ে খাওয়াই সহজতম পথ। এ ছাড়া জলে ক্লোরিন ট্যাবলেট মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy