ডিমের সাদা অংশ না কি কুসুমও? খাওয়া নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। ছবি: শাটারস্টক।
আধুনিক জীবনযাত্রা ও খাওয়াদাওয়ার অনিয়মের জেরে শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ। আর তার হাত ধরেই ব্রাত্য হয় নানা খাওয়াদাওয়া। ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, ওবেসিটি, পলিসিস্টিক ওভারি— জীবনশৈলীর দোষে তৈরি হওয়া এ সব রোগের হানায় পাত থেকে বাদ হয়ে যায় অনেক প্রিয় খাবারদাবার।
এই যেমন ডিম। কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকেই বাদ দেন ডিমের কুসুম। নব্বইয়ের দশকে আমেরিকান হেলথ সেন্টারের একটি গবেষণা নাড়িয়েদিয়েছিল তামাম চিকিৎসক মহলকে। তখনই জানা যায়, হার্টের অসুখ ও কোলেস্টেরল বাড়ানোর কলকাঠি নাড়ে ডিমের কুসুম। একটি মাঝারি মাপের ডিম থেকে প্রায় ১৪৫-১৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। তার পর থেকেই পাত থেকে ডিমের কুসুম উধাও করতে শুরু করলেন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ।
চিকিৎসকরাও ধরেই নিয়ছিলেন, কোলেস্টেরল বেশি থাকলে ডিমের কুসুম নৈব নৈব চ। ফলে ভোজনরসিকদের দুঃখ উপচে পড়ল, সঙ্গে গরিব মানুষের পাতে প্রোটিনের একটি জরুরি অথচ সস্তা উপাদান সরে যাওয়ার উপক্রম হল। কিন্তু এই ক’বছরে আদৌ কি বদলেছে এই ধারণা? চিকিৎসকদের মত কি কোনও ভাবে বদলাতে পারল আধুনিক কোনও গবেষণা?
আরও পড়ুন: ডায়েট, শরীরচর্চার পরেও এই সব নিয়ম না মানলে কিছুতেই ঝরবে না মেদ
পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ বললেন, ‘‘এক সময় কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিমের কুসুম রাখা হত না রোগীর পাতে। কিন্তু আধুনিক বেশ কিছু গবেষণা, বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নানা রিপোর্ট ও ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর গবেষণা আমাদের অন্য ভাবে ভাবতে বাধ্য করে।’’
তেলে ভেজে বা মাখনে বেক করে ডিম খাবেন না, চেষ্টা করুন সেদ্ধ ডিমই খেতে।
কেন? পুষ্টিবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ডিমের মোট দু’টি অংশ। সাদা অংশ বা অন্ডিতে থাকে প্রোটিনের ভাগ আর কুসুমে কোলেস্টেরল, ভিটামিন বি এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলি সবই আমাদের নানা জৈবিক কাজে ব্যবহৃত হয়। কোলেস্টেরলেরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ থাকে। যেমন, পিত্তে উপস্থিত অ্যাসিড তৈরিতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে এটি। এ ছাড়া ভিটামিন ডি-র জোগান দিতে কাজে আসে কোলেস্টেরল। নানা যৌন হরমোন ক্ষরণেও ডিমের কুসুম সাহায্য করে। বরং ঠিকঠাক কোলেস্টেরলের জোগান না পেলে শরীর নিজেই তা বানিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তাই গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় ডিমের কুসুম।
আরও পড়ুন: বেড়ানোর সময়ে বাচ্চা ও বয়স্কদের জন্য সাবধানতা
তবে বেশি নয়, দিনে দু’টি ডিম কুসুম সমেত খান। কিন্তু সংখ্যাটা তার বেশি হলে খান সাদা অংশই। কারণ কোলেস্টেরলের আধিক্যও শরীরের জন্য ভাল নয়। তাই পাতে কুসুম-সহ ডিম রাখতেই পারেন দু’টি। তা বলে আবার তেলে ভেজে বা মাখনে বেক করে ডিম খাবেন না। চেষ্টা করুন সেদ্ধ ডিমই খেতে। তেল-মশলা থেকে বরং দূরে থাকুন। বাদ দিন ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড। এতেই কমবে কোলেস্টেরলের ভয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy