বিয়ের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর। অথচ, এখনও সন্তান আসেনি প্রিয়ঙ্কার জীবনে। নানা বাঁকা কথা, গ্লানির পর্ব পেরিয়ে শেষমেশ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে জানা গেল, ‘ভিলেন’ আসলে টিউমর। বিনাইন টিউমর, যার পোশাকি নাম ফাইব্রয়েডস। সাধারণত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের জরায়ুতেই এই ধরনের টিউমরের উপস্থিতি দেখা যায়।
ফাইব্রয়েডস মানেই কি ক্যানসার?
অনেকে মনে করেন যে, ফাইব্রয়েডস মানেই ক্যানসার। ধারণাটি ঠিক নয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ৩৫০ জন রোগীর মধ্যে ফাইব্রয়েডসের খোঁজ পাওয়া গেলে হয়তো দেখা যায়, এক জনের ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এর কোনটি যে ক্যানসার হবে, কোনটি হবে না, তা আগাম বলা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে এলডিএইচ-এর রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং সঙ্গে আলট্রাসাউন্ড করে একটি ডপলার স্টাডি করা হয় টিউমরটিতে শিরার সংখ্যা এবং রক্ত সরবরাহ কেমন, তা দেখে নেওয়ার জন্য। যাঁদের শিরার সংখ্যা বেশি, তাঁদের ফাইব্রয়েড ম্যালিগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু বেশি।
নানা ধরন
ফাইব্রয়েডস সাধারণত তিনটি জায়গায় তৈরি হতে পারে। যেমন, প্রথমত, জরায়ুর দেওয়ালের বাইরের দিকে, যাকে সাবসেরাস বলে। দ্বিতীয়ত, জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে, যাকে ইন্ট্রামিউরাল বলে এবং তৃতীয়ত জরায়ুর যে অংশ থেকে পিরিয়ডস হয়, সেই ক্যাভিটি-তে। একে সাব-মিউকাস বলে। এই তিন নম্বরটি অর্থাৎ সাব মিউকাস ফাইব্রয়েডসই সবচেয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে। এতে পিরিয়ডসের সময়ে পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়, অত্যধিক ব্লিডিং হয় এবং পিরিয়ডসও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মেনে হয় না। এমনও দেখা গিয়েছে, সাব মিউকাস ফাইব্রয়েডসের কারণে সারা মাস ধরে ব্লিডিং চলছে। একটা ছোট্ট ০.৫ সেন্টিমিটারের ফাইব্রয়েডও সমস্যায় ফেলতে পারে। এগুলোই বারবার মিসক্যারেজ এবং সন্তান না-হওয়ার জন্য দায়ী। কারণ, জরায়ুর যে অংশে ভ্রূণ থাকে, ঠিক সেই অংশেই এই টিউমরটি অবস্থান করে।
লক্ষণ কী?
সাধারণত অনিয়মিত পিরিয়ডস, অত্যধিক রক্তপাত এবং বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা দেখা দিলেই ফাইব্রয়েডস আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এর আলাদা কোনও লক্ষণ নেই। তবে, অনেক সময়ে হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়াও ফাইব্রয়েডসের লক্ষণ হতে পারে। এমনও উদাহরণ আছে, যেখানে বাড়ির লোক মেয়েটিকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন সে প্রেগন্যান্ট, এই ভেবে। ৭-৮ মাসের প্রেগন্যান্সিতে জরায়ুর আকার যেমন হয়, এই ক্ষেত্রেও পেটের আকার তেমনই হয়েছে। অথচ চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখলেন, েসখানে বিরাট বড় ফাইব্রয়েডস!
সেই কারণেই চিকিৎসকরা মহিলাদের ক্ষেত্রে বছরে এক বার আলট্রাসাউন্ড করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতেই ফাইব্রয়েডসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
সারবে কী করে?
ডা. চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ছোট্ট একটা ডে কেয়ার সার্জারির মাধ্যমে সাব মিউকাস ফাইব্রয়েডসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। জরায়ুর মধ্যে ক্যামেরা দিয়ে দেখে হিস্টেরোস্কোপ-এর সাহায্যে টিউমারটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সকালে ভর্তি হলে সাধারণত বিকেলের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিনটা বিশ্রামে থেকে পর দিন থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। কিন্তু সার্জারি ছাড়া সাধারণ মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টে এতে উপকার মেলে না।
অন্য দু’ধরনের ফাইব্রয়েডস যদি খুব বেশি গোলমাল না করে, তা হলে সার্জারি না করলেও চলে। তবে এগুলোও নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়। ফাইব্রয়েডসের আকার ৬ সেন্টিমিটারের বেশি হয়ে গেলে তখন সার্জারি প্রয়োজন। সাবসেরাস ফাইব্রয়েডস যেমন খুব সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু এই ধরনের ফাইব্রয়েডও খুব বড় হয়ে গেলে তা মূত্রথলি বা মলদ্বারের পথটিকে আটকে দেয়। ফলে মলমূত্র ত্যাগের সময়ে ব্যথা হতে পারে।
ইন্ট্রামিউরাল অর্থাৎ দেওয়ালের ভিতর দিকে যেগুলো থাকে, সেগুলোর কারণে অনেক সময়ে তলপেটে ব্যথা হয়। পিরিয়ডস অত্যধিক বেশি হয়।
মেনোপজ়ের পর ব্লিডিং কি ফাইব্রয়েডের জন্য হয়?
ডা. চট্টোপাধ্যায় জানালেন, পোস্ট মেনোপজ়াল ব্লিডিং অন্য বিষয়। পিরিয়ডের পর জরায়ুর লাইনিং ৪ মিলিমিটারের নীচে থাকা উচিত। যদি ট্রান্সভ্যাজাইনাল সোনোগ্রাফি করে দেখা যায়, ৪ মিলিমিটারের বেশি আছে, সেই ক্ষেত্রে জরায়ুর মধ্যে ক্যামেরা দিয়ে দেখে বায়োপসি করতে হয়। পোস্ট মেনোপজ়াল রোগীর যদি আগে থেকেই ছোট একটা টিউমর থাকে ও হঠাৎ বেড়ে ৫-৬ সেন্টিমিটার হয়ে যায়, তা হলে আরও পরীক্ষা করা দরকার। কালার ডপলারে যদি দেখা যায় যে, খুব বেশি শিরা রয়েছে, এলডিএইচ-ও বেশি আছে, সেই ক্ষেত্রে ধরেই নিতে হবে ওটা সারকোমা বা ক্যানসারের দিকে টার্ন নিয়েছে।
রোগ ধরা পড়ার পরে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করবেন, ততই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy