বাঙালি বাড়িতে টেবল এক সময়ে ছিল সাহেবি কেতা। বিশেষ করে, ডাইনিং টেবল বা সেন্টার টেবল। বড়জোর একটা পড়ার টেবল থাকত ঘরের কোণে। তা-ও ঈষৎ অবহেলায়। সেই টেবলের উপরে স্তূপাকৃতি বই থেকে শুরু করে থাকত জমানো কয়েনের স্তম্ভ, রেডিয়ো, পাথরের গ্লাসে ঢাকা দেওয়া জল, কলমদানি... আরও কত কী! কিন্তু দিনে দিনে গ্লোবালাইজ়েশনের হাওয়া লেগেছে প্রত্যেক ঘরে। এখন ঘরের দরকার অনুযায়ী বিবিধ টেবল প্রত্যেক ঘরে। তার সাজও আলাদা হয় টেবলের আকার, আয়তন ও ভূমিকা হিসেবে।
কোন টেবলের কেমন সাজ
• সেন্টার টেবল: সাধারণত বৈঠকখানায় এই টেবল থাকে সোফা ও চেয়ারের মাঝে। অনেকে দু’র্যাকের সেন্টার টেবল রাখেন। নীচের র্যাকে জমতে থাকে খবরের কাগজ। সেন্টার টেবল যেহেতু বসার ঘরে থাকে, তাই তা সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখাই শ্রেয়। সেখানে কাগজ জমিয়ে রাখলে কিন্তু ভাল দেখাবে না। তার চেয়ে সুন্দর প্রচ্ছদ আছে, এমন দু’চারটি বই রাখতে পারেন। তার পাশে একটা কাচের পাত্রে ভাসিয়ে দিতে পারেন বাগান থেকে তুলে আনা ফুল। তবে একই ভাবে সাজাতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পোর্সেলিনের মূর্তি রেখেও সাজাতে পারেন। তবে তার ভার যেন টেবল বইতে পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাকুল্যান্টস বা ছোট গাছও রাখতে পারেন, সঙ্গে অ্যারোমা ক্যান্ডল। ইনডোর গেম ভাল লাগলে সুন্দর কাঠের বা মার্বেলের দাবার বোর্ড বানিয়ে রাখতে পারেন তার উপরে। অবসরে সেখানে দাবা খেলাও যাবে।
• ডাইনিং টেবল: এই টেবলের সাজ হবে হালকা। যেহেতু খাওয়াদাওয়া করার সময়ে প্লেট, গ্লাস রাখার জন্য জায়গা প্রয়োজন, তাই বেশি ভারী জিনিস দিয়ে না সাজানোই ভাল। টেবলের আকার অনুযায়ী সাজান। দু’চারজন বসার মতো ছোট টেবল হলে, সাজানোর আলাদা শো-পিস ব্যবহার না করাই ভাল। বরং একটা সুন্দর রানার পেতে দিন। তার উপরে নুন আর মরিচদানি রাখুন নকশা করা। মুরগি, পেঁচা বা বেড়ালের মতো দেখতে চিনামাটির শো-পিসও রাখতে পারেন। ছোট রঙিন বয়ামে আচার রাখুন। এতেই রূপ খোলতাই হবে টেবলের। একান্তই ফুল দিয়ে বা গাছ দিয়ে সাজাতে চাইলে যথাসম্ভব ছোট গাছ বা ফুলদানি রাখুন। কুরুশে বোনা বা বেতের ম্যাট কিনতে পাওয়া যায়, তা-ও ব্যবহার করতে পারেন।
টেবলের আকার বড় হলে তাতে বিভিন্ন রকমের শো-পিস থেকে শুরু করে পেতলের বাসন দিয়েও সাজাতে পারেন। ফলের রেকাবি বা ঝুড়িও ভাল দেখায়।
• কর্নার টেবল: এই টেবলে মনের মতো জিনিস রাখতে পারেন। ভারী সাজ পছন্দ হলে কর্নার টেবলের পিছনের দেওয়ালে পেন্টিং রাখুন। পুরনো রেডিয়ো, দূরবিন ইত্যাদি জিনিস দিয়েও সাজাতে পারেন। বেশ নস্ট্যালজিক কর্নার পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া পোর্সেলিনের একটা ভারী মূর্তিও রাখতে পারেন। সেটাই স্টেটমেন্ট তৈরি করবে ঘরের। আবার বিভিন্ন রকমের ক্যান্ডল, বনসাই, চিনামাটির পাত্র দিয়েও সাজিয়ে ফেলতে পারেন কর্নার টেবল। বেশি জিনিসের ঘিঞ্জি সাজ পছন্দ না হলে একটা কুরুশে বোনা কভার দিয়ে ঢেকে তার উপরে অ্যান্টিক টেলিফোন বা গ্রামোফোন রেখে সাজানো যায়।
• রিডিং টেবল: সাজানোর চেয়েও গুছিয়ে রাখা বেশি দরকার। অনেকেই বই পড়ে তা ফেলে রেখে উঠে যান। পরে এসে আবার অন্য একটা বই টেনে পড়তে শুরু করেন। এ ভাবে পড়ার টেবল অচিরেই অবিন্যস্ত বইয়ে ভরে ওঠে। তার চেয়ে প্রত্যেকটা বই পড়ার পরে গুছিয়ে রাখার অভ্যেস করুন। পড়ার টেবলে সুন্দর রঙের টেবল ল্যাম্প রাখতে পারেন। বিভিন্ন বুকমার্কও সংগ্রহে রাখতে পারেন। পেন্ট করা কাচের বোতলে জল ভরেও রাখা যায়। দেখতেও ভাল লাগবে, দরকার মতো গলাও ভিজিয়ে নেওয়া যাবে। আর রাখতে পারেন গাছ। তবে একগাদা নয়, একটা বা দুটো। আর গাছের মাটি, শুকনো পাতা পরিষ্কার করবেন নিয়মিত।
• ড্রেসিং টেবল: সাজগোজের জিনিস থাকলেও এই টেবলের সাজ নষ্ট হতে সময় বেশি লাগে না। তাড়াহুড়োর সময়ে, লিপস্টিক, কাজলটা লাগিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েন। আর তা জমা হয় আয়নার সামনে। প্রথমেই এই অভ্যেস বদলান। আয়নার সামনে ফুল দিয়ে সাজাতে পারেন। একটা ফিলিগ্রি করা বা জয়পুরি গয়নার বাক্স রাখতে পারেন টেবলের উপরে। দেখতেও ভাল লাগবে। রোজকার কানের দুল রাখতে পারেন ওর মধ্যে।
অনেক সময়ে দেখা যায়, সাজানোর ভারে এতই ভারাক্রান্ত টেবল যে তাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই কোন টেবল কী ধরনের কাজে ব্যবহার করতে চান, সেটা মাথায় রেখেই সাজান। তা হলে সাজও সুন্দর হবে, ব্যবহারযোগ্যতাও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy