— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
যে কোনও অস্ত্রোপচার, বিশেষ করে পেট বা সংলগ্ন এলাকায় কোনও বড় সার্জারির পরে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে মানেই রোগী সুস্থ হয়ে আগের মতো জীবনযাত্রায় ফিরে যাবেন, এ ধারণা ঠিক নয়। যে কোনও অস্ত্রোপচার থেকেই সেরে উঠতে, অর্থাৎ রিকভার করতে সময় লাগে। সেই সময়টা শরীরকে দিতে হয়। বিশেষ করে এই সময়ে ডায়েট মেনটেন না করলে সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে অচিরেই।
এ প্রসঙ্গে ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘অপারেশনের প্রস্তুতি কিন্তু শুরু করা হয় অনেক আগে থেকেই। কী ধরনের সার্জারি করা হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে ডায়েট। তবে প্রধানত প্রোটিন-বেসড, ক্যালরি-নির্ভর ডায়েট শুরু করে দেওয়া হয় সার্জারির বেশ কিছু সময় আগে থেকেই।’’ এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি। সার্জারির সময়ে, তার ঠিক আগে ও পরে রোগী সলিড খাবার প্রায় কিছুই খেতে পারেন না। খালি পেটে বা লিকুইড ডায়েটের উপরে নির্ভর করে থাকতে হয় তাঁকে সেই সময়টা। কাজেই বড় অপারেশনের সময়ে রোগীর যাতে নিউট্রিয়েন্ট লস না হয়, তাই আগে থেকেই দেহকে প্রস্তুত রাখতে হয়। সেই কারণেই অস্ত্রোপচার হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকে প্রোটিনজাত খাবার, হাই-ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে বলা হয় রোগীকে।
সমস্যার উদ্রেক
সার্জারি হলেই যে দু’টি সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়, তা হল রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশনের সম্ভাবনা। এই দু’টির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয় সবচেয়ে বেশি। রক্তক্ষরণের ফলে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে সব সময়ে আয়রন-রিচ ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। পোস্ট সার্জিক্যাল দুর্বলতা কাটাতে প্রোটিনজাত খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম রাখতেই হবে ডায়েটে। তবে কী ধরনের অস্ত্রোপচার, তার উপরে নির্ভর করবে খাবারের ধরন। যেমন, কিডনির রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোটিন খেতে হবে মেপে। জল খাওয়ার মাপও সে ক্ষেত্রে পাল্টে যায়। আবার অন্য দিকে, কারও গলব্লাডার বাদ গেলে তার পর থেকে হালকা ডায়েট মেনটেন করতে হবে সেই রোগীকে। গাইনিকোলজিক্যাল সার্জারির ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেও খাদ্যাভ্যাসের বড় ভূমিকা থাকে।
শরীরের প্রত্যেক অঙ্গেরই নির্দিষ্ট কাজ থাকে। তাই কোনওটি শরীর থেকে বাদ গেলে সেই অনুযায়ী খাপ খাইয়ে নিতে হবে খাদ্যাভ্যাসও।
প্রস্তুতি আগে থেকেই
পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, বিদেশে মেনে চলা হলেও আমাদের দেশে প্রি-সার্জারির প্রস্তুতি তেমন নেওয়া হয় না। ‘‘এরাস প্রোটোকল অনুযায়ী সার্জিক্যাল নিউট্রিশনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ নিয়ে তেমন সচেতনতা না থাকলেও এখন ধীরে ধীরে তা বাড়ছে,’’ বললেন কোয়েল। ‘এরাস’-এর পুরো কথাটি হল— এনহান্সড রিকভারি আফটার সার্জারি। এই প্রোটোকল সার্জারির আগে, সার্জারির সময়ে ও তার পরের পুরো সময় জুড়েই প্রযোজ্য। অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হতে গেলে এই প্রোটোকল মেনে চলতে হবে।
চলো নিয়ম মতে...
যে কোনও অস্ত্রোপচারের পরে হালকা অথচ পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল বললেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে অনেকে কলা বা দই খেতে বারণ করেন, ক্ষত শুকোবে না এই আশঙ্কায়। প্রকৃতপক্ষে এই ভয় অমূলক। দই যেমন সহজপাচ্য, হজমে সাহায্য করে। কলায় থাকে ভিটামিন, যা টিসু রিকভার করতে সাহায্য করে।’’ রোগী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরলেও তাঁকে প্যাকেটজাত খাবার, ভাজাভুজি বা মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে অন্তত এক মাস। পরবর্তী ডায়েট মেনটেন করে চলাই বেশির ভাগ রোগীর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ নিয়ম মেনে না খাওয়াটাইহল সমস্যা ফিরে আসার অন্যতম কারণ।
অস্ত্রোপচার মানেই শরীরে একটা বড়সড় ধাক্কা। কাজেই সুষম খাদ্যাভ্যাস ও শারীরচর্চার মাধ্যমে পুরনো ‘আমি’কে ফিরিয়ে আনাই হোক লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy