বাচ্চাদের ডায়ারিয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। ছবি: শাটারস্টক
চিনের উহান থেকে আসা নভেল করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করতে গিয়ে কলকাতা সহ শহর-মফস্সলের মানুষ ইদানিং পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিয়েছেন। তবে প্রকৃতি বিরূপ হলে সত্যিই মানুষ খুব অসহায় হয়ে পড়ে। নিম্নচাপের কারণে লাগাতার বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে পানীয় জল দূষিত হয়ে পড়ছে। আর যে সব অঞ্চলে বন্যা হয়েছে, সেখানকার অবস্থা তো আরও করুণ। পানীয় জল সংক্রমিত হয়ে পড়লে ডায়ারিয়ার ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়। এদিকে পেটখারাপ বা পেটে ব্যথা হোক কিংবা বমি, নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভেবে মানুষজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছেন।
নিকাশি জল কোনও ভাবে পানীয় জলে মিশে জল বা খাবার বাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করলেই ডায়ারিয়া সহ অন্যান্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, বললেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়। বাচ্চাদের ডায়ারিয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। কোভিড পরিস্থিতে বাচ্চারা এখন প্রায় গৃহবন্দি। স্কুল চলছে অনলাইনে। বিরক্ত হয়ে ছোটরা কখন কী করে, ঠিক নেই। ওদের সাবধানে না রাখলে ডায়ারিয়ার ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একাধিক বার শৌচালয়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ার পর পরই সিংহভাগ রোগীরই সমস্যা চলে যায়। কয়েকটি ক্ষেত্রে রোগ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আসলে এই সমস্যা মারাত্মক হয় নিজেদের দোষে, বললেন পল্লব চট্টোপাধ্যায়। ডায়ারিয়ার উপসর্গ শুরু হলেই রোগীকে নিয়ম মাফিক ওআরএস খাওয়ালে অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছনো আটকে দেওয়া যায়। অবশ্য নাগাড়ে মলত্যাগের পাশাপাশি যদি বমি শুরু হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্য বাড়িতে না রেখে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: প্রতিবেশী বা আবাসনে কেউ করোনা আক্রান্ত? যা যা খেয়াল রাখতেই হবে
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া— দু’রকম জীবাণুর সংক্রমণের কারণে ডায়ারিয়া হতে পারে। জীবাণুর কারণে ডায়ারিয়া হলে যেসব উপসর্গ দেখা যায় সেগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ছোট হোক বা পূর্ণবয়স্ক, সকলেরই একই ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
শুরুতে পেটে অস্বস্তি দিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হয়। এ ছাড়া হজম ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়, পেটের মধ্যে নানা শব্দ হয়, ব্লোটিং বা গ্যাসের জন্যে কষ্ট হয়, শরীর আনচান করে, পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব, খাবার দেখলেই রাগ হয় খাওয়া তো দূরের কথা। এরকম হলেই জোর করে খাবার খাওয়ালে বমি সহ অন্যান্য কষ্ট বেড়ে যায়। তাই এই অবস্থায় জোর করে খাওয়াবার চেষ্টা করবেন না। কেন না এর পরেই শুরু হয় ডায়ারিয়া ও বমি।
বমি পায় ও বারংবার বমি হয়। একাধিক বার জলের মত পাতলা পায়খানা হয়। মলের সঙ্গে মিউকাস ও রক্ত থাকতে পারে। সামগ্রিক ভাবে রোগী অত্যন্ত অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে জ্বর থাকতে পারে। শরীরে জল কমে যায় বলে প্রস্রাব কমে যেতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা শুরু হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে রোগীকে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন দেওয়া দরকার। এমন অবস্থা যেন না হয়, ডাক্তারের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে রোগীর ডিহাইড্রেশন শুরু হয়ে গেল। তাই বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হলেই ওআরএস খাওয়ানো শুরু করতে হবে। তা ছাড়া, এখনকার কোভিড পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি সময় লাগে। তত ক্ষণে রোগীর সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, বললেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ মৌপিয়া চক্রবর্তী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওআরএস দিতে পারলে ভাল হয়। না হলে বাড়িতে নুন-চিনির জল তৈরি করে রোগীকে অল্প অল্প করে বারে বারে দিন। ওআরএস বাড়িতে বানানোর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এক লিটার জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। বা পরিচ্ছন্ন পানীয় জলে চা-চামচের আধ চামচ নুন ও ছয় চামচ চিনি ভাল করে গুলে নিন। এই জল বারে বারে রোগীকে দিতে হবে অল্প অল্প করে। শৌচাগার যাওয়া কিছুটা কমলে তখন প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: ফল বা সব্জি ধোওয়ার ক্ষেত্রে এখন কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল যে, বর্ষার সময় যে কলিফর্ম জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার কারণে অ্যাকিউট ডায়ারিয়া হয়, তা শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্যে বেশি বিপজ্জনক। বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম এবং বারংবার সংক্রমণে ভোগে, এই ধরনের শিশুদের ডায়ারিয়া হলে বাড়তি যত্ন করা দরকার। আবার বেশি বয়সে এক দিকে শরীরে নানা অসুখ যেমন ডায়াবিটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ, প্রস্টেটের সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে এই বয়সেও ডায়ারিয়া হলে রোগীকে সাবধানে রাখা জরুরি, বললেন ইন্টারন্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ পুষ্পিতা মণ্ডল।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওআরএস তো দিতেই হবে। ফাইল ছবি।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওআরএস তো দিতেই হবে। অনেক সময় জল বা ওআরএস দিলে বমি হয়ে যায় বলে বয়স্ক রোগীরা জল পান করতে চান না। বাবা মায়েরা বাচ্চাদের জল দিতে দ্বিধা করেন। কিন্তু এমনটা কখনই করবেন না। ১০০ মিলি জল পান করলে খুব বেশি হলে ৬০ মিলি বেরিয়ে গেলেও বাকিটা শরীরে থেকে যায়। জলের অভাবে ডিহাইড্রেশন হলেই বিপদ। তাই রোগীর রিহাইড্রেশনের দিকে নজর দেওয়া উচিত, বললেন পুষ্পিতা মণ্ডল। তবে ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়ারিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যাতে সংক্রমণ বেড়ে না যায়।
এই ধরনের ডায়ারিয়ায় নরফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। কোন রোগীকে কী ডোজে ওষুধ দেওয়া হবে, তার অন্যান্য শারীরিক অবস্থা কেমন ইত্যাদি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করেই চিকিৎসক ওষুধ দেন। তবে ডায়ারিয়া হলেই দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। আর ডায়ারিয়া সেরে গেলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। কোর্স সম্পূর্ণ না করলে পরে আর ওষুধে কাজ হবে না। ইদানীং বাচ্চাদের ডায়ারিয়া হলে জিঙ্ক ট্যাবলেট দেওয়া হয়। যে ওষুধই দেওয়া হোক না কেন, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই দেওয়া উচিত। ডায়ারিয়া প্রতিরোধ করতে সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলের ব্যাপারে খেয়াল রাখা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy