শারীরিক মিলন থেকেও ছড়াতে পারে ডেঙ্গি। (ফাইল চিত্র)
হেমন্তের অকালবৃষ্টিতে হঠাৎই রাজ্যে ছড়িয়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ। এই রোগ মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় মশার (স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতি) মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ানোর পরে সেই মশা অন্য ব্যক্তিকে কামড়ালে তিনিও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন।
ইতিমধ্যে স্পেনের স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে, মশার কামড়-ই নয়। যৌন সংসর্গ থেকেও সংক্রামিত হতে পারে এই রোগ। মাদ্রিদের বাসিন্দা দুই যুবকের রক্তে পাওয়া গিয়েছে ডেঙ্গির জীবাণু। তাঁদের মধ্যে একজন অগস্ট মাসে কিউবা ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মাদ্রিদে ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়। সম্প্রতি তাঁর পুরুষসঙ্গীও ডেঙ্গি আক্রান্ত। তিনি গত কয়েক মাসে স্পেনের বাইরে যাননি। এমনকি, মাদ্রিদে ডেঙ্গির কোনও উপদ্রবও ছিল না। তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি যৌন সঙ্গম হয়েছে। স্পেনের জনস্বাস্থ্য দফতরের দাবি, শারীরিক মিলনেই কিউবাফেরত পুরুষের থেকে তাঁর সঙ্গী মধ্যে ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছে।
চমকপ্রদ হলেও এই দাবি অস্বাভাবিক নয়। জানাচ্ছেন চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। তাঁর কথায়, রক্ত-সহ মানবদেহের অন্যান্য জলীয় অংশের মাধ্যমে ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়। যদিও সেই সম্ভাবনার হার কম। কিন্তু অসম্ভব নয়। সংক্রামক ও ট্রপিক্যাল ব্যাধি বিশেষজ্ঞ নন্দীর কথায়, ফ্ল্যাভি ভাইরাস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ডেঙ্গির জীবাণুর সংক্রমণের মূল লক্ষ্য রক্তের লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা। মশা কামড়ানোর পরে তিন থেকে ছ’দিন সময় লাগে ডেঙ্গির উপসর্গ প্রকাশ পেতে।
আরও পড়ুন: ফুসফুসের অসুখে ডেঙ্গি ভয়ানক হতে পারে
আশ্চর্যজনক তথ্য হল, সংক্রামিত হওয়ার পরে ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ প্রকাশই পায় না। ডাক্তারি পরিভাষায় তাঁরা ‘ক্যারিয়ার’। নিজেদের অজান্তেই বহন করে নিয়ে চলেছেন ডেঙ্গির জীবাণু। তাঁদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দাবিয়ে রেখে দেয় অসুখকে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় যখন তাঁদের কামড়ানোর পরে স্ত্রী এডিস মশা অন্য কাউকে কামড়ায়। দ্বিতীয় ব্যক্তির হয়তো ইমিউনিটি পাওয়ার দুর্বল। ফলে তিনি ডেঙ্গির কোপে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন।
তবে ডেঙ্গি মানেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়বে, তা নয়। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী জানালেন, ডেঙ্গি আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের দেহে উপসর্গ প্রকাশ পায়, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তা সর্দি-কাশি-জ্বরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতেই। বাকিদের মধ্যে জ্বরের পাশাপাশি দেখা দেয় হাত-পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা, গাঁটের যন্ত্রণা, এমনকি, চোখের পেশিতে ব্যথাও। ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় সিম্পল আনকম্প্লিকেটেড ডেঙ্গি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই উপসর্গ জটিল হয়ে ওঠে। সংক্রামিত হয় লিভার, ফুসফুস, ব্রেনের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেক্ষেত্রে তাঁরা ‘সিভিয়ার কম্প্লিকেটেড ডেঙ্গি’-র শিকার।
আরও পড়ুন: হাঁপানি রুখতে সচেতন হোন
রোগের জটিলতা যা-ই হোক না কেন, ডেঙ্গি সংক্রামিত হয় রক্ত এবং মানবদেহের অন্য জলীয় অংশের দ্বারা। সেন্ট্রোম্যাপের অধিকর্তা অমিতাভ নন্দীর কথায় সরাসরি মশার কামড় ছাড়া আরও কিছু ভাবে ছড়াতে পারে ডেঙ্গি। সেগুলি হল:
• ব্লাড ট্রান্সফিউশন
• অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারো প্রতিস্থাপন
• অঙ্গ প্রতিস্থাপন
• সদ্যোজাতকে স্তন্যপান
• যৌন সংসর্গ
• ল্যাব অ্যাক্সিডেন্ট, অর্থাৎ পরীক্ষা করার সময় সিরিঞ্জ ভেঙে বা অন্য কোনও ভাবে ডেঙ্গি জীবাণুর সংস্পর্শে এলে। এইভাবে রোগীর থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হন।
অর্থাৎ, এইচআইভি-র মতো ডেঙ্গির ক্ষেত্রেও এ সব ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন দরকার। অভিমত, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর। তাই তিনি বলেন, ডেঙ্গি সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া অবধি যৌন সংসর্গ বা স্তন্যপান থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করলেন পুরুষের বীর্যে জিকা ভাইরাস থেকে যায় সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। ফলে তাঁর থেকে আক্রান্ত হন তাঁর যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনী। তবে, এইচআইভি-র মতো ডেঙ্গিতেও বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সমকামী জুটিদেরই।
স্পেনের সাম্প্রতিক ঘটনাকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র বা ইসিডিসি বলেছে ‘অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত’। তাদের মতে, স্পেনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের দাবি সত্যি হলে এটাই হবে বিশ্বে পুরুষ থেকে পুরুষসঙ্গীতে সংক্রামিত ডেঙ্গির প্রথম নিদর্শন। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় যৌন সঙ্গমের ফলে নারী থেকে পুরুষে ডেঙ্গি ছড়ানোর প্রমাণও এসেছে স্পেনের স্বাস্থ্য দফতরের হাতে।
চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর কথায়, এখনই এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু ঘটেনি। কারণ সরাসরি মশা ছাড়া এ ভাবে ডেঙ্গি ছড়ানোর হার খুবই কম। কিন্তু একটি প্রবাদবাক্য সব সময় স্মরণীয়, সাবধানের মার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy