Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

পটাশিয়াম-সোডিয়ামের ঘাটতি, বিপদের সঙ্কেত!

কী ভাবে এর অভাব পূরণ করে সুস্থ থাকবেন, জেনে নিন বিশদে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়লেও বিপদ। আলস্য ও দুর্বলতার মতো লক্ষণ দেখা যায় সোডিয়াম বেড়ে গেলে বা হাইপারনেট্রিমিয়ায়। অতিরিক্ত মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে।

ঈপ্সিতা বসু
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

হঠাৎ কিছু দিন ধরে লক্ষ করছেন, পর্যাপ্ত ঘুম হলেও ক্লান্তি পিছু ছাড়ছে না। সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপও রয়েছে। এ ধরনের সমস্যা পটাশিয়াম-সোডিয়ামের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণও হতে পারে। কনসালট্যান্ট পালমোনোলজিস্ট ডা. অনির্বাণ দেবের কথায়, ‘‘পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম মিলেই তৈরি হয় মানবদেহের ইলেকট্রোলাইটস পরিবার। এ সব উপাদানের পরিমাণ কম-বেশি হলেই সৃষ্টি হয় ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা। সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের যে কোনও একটি বা একসঙ্গে দু’টির অত্যধিক অসামঞ্জস্য হলে জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।’’ স্নায়ু, মাংসপেশি ও হৃৎপিণ্ডের পরিচালনা থেকে দেহের নানা জটিল প্রক্রিয়া পরিচালনাই এদের কাজ। শরীরের এই সব ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কিন্তু বিভিন্ন হয়। পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পরিমাণ নানা কারণে কম-বেশি হতে পারে।

ডা. দেবের মতে, ‘‘ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হলে রক্তে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা কমতে পারে। অত্যধিক ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে গেলে লবণের মাত্রা কমে যেতে পারে। ডায়াবিটিস বা কিডনির অসুখ থেকে বেশি বা কম মাত্রায় মূত্র হলে কিংবা খাদ্যে লবণের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম হলেও ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অনেক সময়ে বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বা প্রেশারের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মিনারেলের ভারসাম্য নষ্টের কারণ হয়। অত্যধিক ডায়েট কন্ট্রোল করলেও কিন্তু সোডিয়াম, পটাশিয়াম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’

রোগের লক্ষণ

• রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কম বা হাইপোনেট্রিমিয়া হলে শরীরে তরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কিন্ত কতটা পরিমাণে এবং কত তাড়াতাড়ি এই মাত্রা কমছে, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটা পরিমাণে না কমলে বোঝা যায় না।

• মাইল্ড হাইপোনেট্রিমিয়া হলে হজমশক্তির সমস্যা, মাথা ধরা, বমি বমি ভাব, ঝিমিয়ে পড়া বা কোনও কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে যায়।

• আবার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে মডারেট হাইপোনেট্রিমিয়ায়। এর সঙ্গে পেশিতে টান, পেশির অসাড়তা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা, চেতনা কমে যাওয়া, উল্টোপাল্টা আচরণের মতো উপসর্গ তীব্র হাইপোনেট্রিমিয়ার লক্ষণ।

• রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়লেও বিপদ। আলস্য ও দুর্বলতার মতো লক্ষণ দেখা যায় সোডিয়াম বেড়ে গেলে বা হাইপারনেট্রিমিয়ায়। অতিরিক্ত মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে। ব্রেন সেল কাজ করে না। ভুলে যাওয়ার সমস্যা, ভাবাচ্ছন্নতা, এমনকি খিঁচুনিও হয়। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হলে কোমাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

• পটাশিয়ামের অভাব বা হাইপোক্যালিমিয়ায় হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়ার পরেও ক্লান্তি অনুভূত হলে পটাশিয়ামের ঘাটতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

• দীর্ঘদিন ধরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে শরীরে ইনসুলিন কম উৎপাদিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। এতে মাংসপেশির দুর্বলতা এবং মাংসপেশিতে ঘন ঘন টান লাগার মতো সমস্যাও তৈরি হয়। ডা. দেব জানালেন, ‘‘যদি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা ২.৫ মিলিমোলের নীচে চলে যায় এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, জীবনহানিও হতে পারে। এই পর্যায়ে প্যারালিসিস, মাংসপেশির টিসু ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।’’ অন্য দিকে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়লে বা হাইপারক্যালিমিয়ার কারণে হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকে জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে।

সাবধানতা জরুরি

• সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ভারসাম্যের অভাব যে কোনও বয়সেই হতে পারে। তবে শিশু, বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের এর কোপে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

• ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রোগটি প্রকট হলে অবিলম্বে ওই ওষুধ বন্ধ করতে হবে।

• শরীরে জল ও নুনের মাত্রা যাতে ঠিক থাকে, সে দিকেও নজর দিন। সারা দিনে কতটা জল খাচ্ছেন, তার উপরেই নির্ভর করে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ঠিক মাত্রা।

• যদি ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করেন, তা হলে পরিমাণ মতো জলও খাওয়া উচিত। স্বল্প মাত্রায় এই ভারসাম্যহীনতা সাধারণত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমেই ঠিক করে ফেলা যায়।

• ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইটস সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। যেমন কলা, আলু, ড্রায়েড অ্যাপ্রিকট, আমন্ড, ডাবের জল, সয়াবিন, ফল, আনাজপাতি, মাছ, মাংস খাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চিকিৎসক। তার সঙ্গে কিছু ওষুধও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

• সমস্যা জটিল হলে শিরার মাধ্যমে স্যালাইন বা অন্য কোনও ধরনের ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল প্রয়োগ করা হয়। কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে মূত্রের পরিমাণ কমিয়ে বা বাড়িয়েও ভারসাম্য ফেরানোর চেষ্টা করা হয়।

• সুস্থ হওয়ার পরেও লক্ষ রাখতে হবে, সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা যেন হঠাৎ করে বেড়ে না যায়। এমনকি চিকিৎসা চলাকালীনও খেয়াল রাখতে হবে, কারণ তখন তা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সময়ে বাড়তি সতর্কতা আবশ্যক।

পটাশিয়াম, সোডিয়ামের মাত্রা বারবার ওঠানামা করতে পারে, তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর একবার করে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। তবে ঠিক সময়ে ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ জটিল আকার ধারণ করে না।

মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

মেকআপ: চয়ন রায়

ছবি: অমিত দাস

ফুড পার্টনার ও লোকেশন: এপিসোড ওয়ান, তপসিয়া রোড

অন্য বিষয়গুলি:

Health Sodium Potassium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy