বস্তিবাসীদের টিকাকরণের দায়িত্ব নিচ্ছেন মুনমুন। নিজস্ব চিত্র
এ শহরের দেখভাল করেন কারা? তাঁদের চিনি তো আমরা? চিনলেও কৃতজ্ঞতা জানানোর অভ্যাস আছে কি? নেই। কারণ আমরা বুঝতেই পারছি না, ঠিক কাদের কথা হচ্ছে এখানে। বুঝলে তবে তো কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রসঙ্গ উঠবে। তবে কেউ কেউ বোঝেন। চেনেন। এবং পাশে দাঁড়ান। সেই তাঁদের মতো স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্যেই এ শহরের বস্তি অঞ্চলের মানুষও করোনার টিকার লাইনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। পকেটে টাকা না থাকলেও চিকিৎসা পাওয়ার আশা ধরে রাখছেন।
কলেজশিক্ষিকা মুনমুন বিশ্বাসও এমন কাজে যুক্ত। পাশে আছেন কলকাতার বস্তি অঞ্চলে বসবাসকারী বহু মানুষের। মনে করান, এ শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, নানা প্রান্তের বস্তির বাসিন্দারা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। কেউ বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কেউ বা রিকশা-টোটো চালান। পথঘাট সাফ করেন আরও কেউ। করোনার সময়ে এ সব নানা কাজেই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বহু মানুষের কাজ চলে গিয়েছে। সঙ্কটে দিন কাটছে অনেকের।
বিশেষ করে পরিচারিকা হিসেবে যাঁরা কাজ করেন, সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। শুধু প্রতিষেধক নেওয়া নেই বলেই কাজ হারাচ্ছেন বহু মহিলা। কারণ অনেক বাড়ির বাসিন্দারাই পরিচারিকার থেকে সংক্রমিত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। মুনমুন জানান, ইতিমধ্যে সরকারও পরিচারিকাদের চিহ্নিত করেছে করোনা ছড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে। সচেতন করা হচ্ছে সকলকে, যাতে দ্রুত প্রতিষেধক নেওয়া হয়। ‘‘কিন্তু চাইলেই তো আর সকলে পাচ্ছেন না। সে ব্যবস্থাই করছি আমরা,’’ বলেন মুনমুন।
মুনমুন ও তাঁর বন্ধুরা সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কবে কোথায় টিকাকরণের ব্যবস্থা হচ্ছে। সেই মতো বিনামূল্যে বস্তিবাসীদের প্রতিষেধক দেওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কাজটি সহজ নয়। এখন টিকা নিতে হাজার টাকা পর্যন্তও দিতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। তার পরেও করতে হচ্ছে অপেক্ষা। সেখানে বিনামূল্যের টিকা পাওয়া কি সহজ?
সহজ কাজ যে নয়, তা তো জানেন মুনমুন। তাই তো এ দফতর থেকে সে দফতর চিঠি লিখছেন রোজ। কোথাও সল্টলেকের ৪০ জন বস্তিবাসীর টিকার ব্যবস্থা হচ্ছে। কোনও দিন আবার বাসন্তী কলোনির ৩০ জনের হচ্ছে। এভাবেই রোজ অল্প অল্প করে এগোচ্ছে কাজ।
মুনমুন ও তাঁর বন্ধুরা হাল ছাড়েন না। কোথাও থেকে যদি কথা দেওয়ার পরেও তাঁদের ফেরানো হয়, হতাশ হন না। আবার পরদিন পৌঁছে যান অন্যত্র। আরও একদল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। জানেন, এভাবেই চেষ্টা চালাতে হবে। না হলে আরও অনেক বস্তিবাসী কাজ হারাবেন।
শুধু তো তা-ই নয়। তাঁরা কাজ করতে না পারলে শহরের বাকি বাসিন্দাদের দেখভালই বা করবেন কারা? তা কি ভেবেছেন কেউ? রিকশা চড়া বন্ধ হয়ে যাবে। সংসারের কাজে মিলবে না সাহায্য। তখন সকলে ভাল থাকবেন তো? অসহযোগিতার কথা উঠলে এমনই প্রশ্ন আসে মুনমুনের মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy