অমরনাথ দত্ত এবং বিশাল রায়। ফাইল চিত্র।
চলতি বছরে আদি সপ্তগ্রামের একটি ঘটনা। এক পরিবারের হাতে শুকনো কিছু খাবার পৌঁছে দিতে গিয়েছেন ‘ব্যান্ডেল হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যরা। গৃহকর্ত্রী সঙ্কোচের সঙ্গে সেই খাবার নিতে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় উত্তর এল, খাবারের প্রয়োজন মিটল বটে, কিন্তু এই আকালে অসুস্থ ছেলেকে বাঁচাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তায় অসহায় মা। ‘‘এক বছর ধরে মানুষকে নিজেদের মতো করে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু একজন অসহায় মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে কতটা অসহায় লাগতে পারে, তা প্রথম টের পেয়েছিলাম সে দিন,’’ বক্তা ‘ব্যান্ডেল হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিশাল রায়।
গত ১ বছর ধরে কোভিডের কারণে বহু মানুষের কাজকর্ম বন্ধ। লোকাল ট্রেন চলে না বলে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। স্টেশনে থাকা ভবঘুরে, ভিক্ষুকদেরও পেটে টান পড়েছে বিপুল ভাবে। তাঁদের কথা ভেবেই একদিন শুরু এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। ‘‘তিন বন্ধুর সঙ্গে মিলে এই সংগঠনটা বানিয়েছিলাম। এক মাস যেতে না যেতেই এগিয়ে এলেন অনেকে। এগিয়ে এলেন স্কুলশিক্ষক অমরনাথ দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী। তাঁদের কারণেই বহু মানুষের পাশে থাকতে পারছি আমরা,’’ বলছেন গত বছর কলেজ পাশ করা বিশাল।
এই এক বছরে রেলস্টেশনে থাকা ভিক্ষুক, ভবঘুরে থেকে শুরু করে রোজগারহীন পরিবারের শিশুদের খাইয়েছেন এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। প্রথমে নিজেদের অর্থ খরচ করে। পরে অমরনাথ এবং অন্যান্যদের পরিচিত মহল থেকে সাহায্য এসেছে— সেই টাকায়। ‘‘খুব বেশি খাওয়ানোর সামর্থ আমাদের নেই। বেশির ভাগ সময়ে শুকনো খাবার দিই। কখনও রেঁধেও দিই। আমাদের ফ্ল্যাটের নীচে বাবা রান্না করেন। আমরা বন্ধুরা সেই খাবার পৌঁছে দিই,’’ বলছেন বিশাল।
তবে শুধু খাবার দেওয়া নয়, এখন শিশুদের জামাকাপড় থেকে মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার কাজও করছে এই সংগঠন। সংগঠনে এখন সব মিলিয়ে ২৮ জন সদস্য। বেশির ভাগই সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। ট্রেনে যে সব অন্ধ মানুষ গান গেয়ে ভিক্ষা করেন, সম্প্রতি তাঁদের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সংগঠনের তরফে। আগামী দিনে পরিকল্পনা রয়েছে নানা ভাবে মানুষের পাশে থাকার। তবু বিশালকে তাড়া করে আদি সপ্তগ্রামের সেই অসহায় মায়ের স্মৃতি। ‘‘খাবারের প্রয়োজন তো মিটল। কিন্তু প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার ওষুধ! না হলে ছেলেটাকে বাঁচাতে পারব না। তার কী হবে? কিছু সাহায্য করতে পারবেন?’’ সদ্য কলেজ পাশ করা বিশাল এই প্রশ্নের পিছনে এখনও ধাওয়া করছেন। ‘বিশাল’ নয় সহনাগরিকদের থেকে ‘সামান্য’ সাহায্যের প্রত্যাশা নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy