Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona

টাকা, মোবাইল স্ক্রিনে ২৮ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস?

কাচ কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে অথবা প্লাস্টিক কিংবা কাগজের টাকায় ঘরের তাপমাত্রায় ২৮ দিন টিকে থাকতে পারে এই ভাইরাস?

মোবাইল অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কারের প্রয়োজন। ফাইল ছবি

মোবাইল অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কারের প্রয়োজন। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৩৯
Share: Save:

টাকা, টাচ-স্ক্রিন মোবাইলের উপরিভাগ, কাচ, বাস কিংবা ক্যাবের হাতলে ২৮ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। অস্ট্রেলিয়ার বায়োসিকিউরিটি ল্যাবরেটরির গবেষণায় সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিপেয়ার্ডনেসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড ভাইরাস মারাত্মক শক্তিশালী। মসৃণ তলদেশ (সারফেস) যেমন কাচ কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে অথবা প্লাস্টিক কিংবা কাগজের টাকায় ঘরের তাপমাত্রায় (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ২৮ দিন টিকে থাকতে পারে এই ভাইরাস।

ভাইরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা বলছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে এক দিনের বেশি ভাইরাস বাঁচে না। শীতকালে এই ভাইরাসের প্রকোপ আরও বেশি বেড়ে যাওয়ার কথা, বলছে গবেষণা। তবে গোটা গবেষণাই অন্ধকারে করা হয়েছে যাতে অতিবেগুনি রশ্মির কোনও প্রভাব না থাকে। সরাসরি সূর্যালোক ভাইরাসকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে, এমনও জানিয়েছেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীদের দাবি, তুলনামূলক কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে এই ভাইরাস। অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও এসেছে তাঁদের গবেষণায়। এই গবেষণা সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর ডেবি ইগলসের বক্তব্য, “গবেষণা বলছে, সারফেসে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতার স্থায়িত্ব যা মনে করা হচ্ছিল, তার চেয়ে আরও বেশি। তাই বার বার হাত ধোওয়া এবং সারফেস স্যানিটাইজের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’’

করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে সরাসরি এলে কফ-কাশি, কথা বলা, গান গাওয়া এবং শ্বাসের মাধ্যমেও অপর ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। পৃষ্ঠতলে ভাইরাস কণা আটকে বসলে সারফেসেও টিকে থাকতে পারে তা। ভাইরাসের সংক্রমণ ফোমাইটের ভূমিকা রয়েছে, উল্লেখ করা হয়েছে এ কথাও।

আরও পড়ুন:কোভিড রুখতে প্রধান হাতিয়ার মাস্কই, বলছেন চিকিৎসকরা​

অগস্টে কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি পরীক্ষা করেছেন। একাধিক সারফেসের (কাচ, কাঠ, কাপড়, মোবাইলের স্ক্রিন) উপর এই পরীক্ষা করা হয়েছে। সেটি বলছে, তুলনামূলক ঠান্ডা, কম আর্দ্র আবহাওয়ায় পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি সময় টিকে থাকতে পারে এই ভাইরাস।

টাকা হাতে হাতে ঘুরছে, তাই সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে এমন। ফাইল ছবি

নন-পোরাস সারফেস বা মসৃণ তলদেশে (যেমন কাচ, টাচ স্ক্রিন মোবাইলের স্ক্রিন) ভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। কাপড় (পোরাস সারফেস)-এ ভাইরাস তুলনামূলক কম সময় বাঁচে। কৃত্রিম মিউকাস নানা সারফেসে বসিয়ে করোনাভাইরাস সেখানে কত ক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা দেখা হয়েছে। সেই গবেষণার ফল দেখে চিন্তায় পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা।

আরও পড়ুন:বিপদসঙ্কেত! ‘কেরলের শিক্ষা না নিলে পুজোর পর করোনা-সুনামি’​

যদিও সারফেস থেকে সংক্রমণের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা হলেও সংক্রমণ ছড়াতে কতটা ভাইরাস প্রয়োজন তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন এখনও। সারফেসে কত ক্ষণ ভাইরাস বেঁচে থাকছে, তা নিয়েও আরও গবেষণার প্রয়োজন, জানান ইগলস।

মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্ক এটিএম, বিমানবন্দরের চেক-ইন কিয়স্কে সবচেয়ে বেশি মানুষের সংস্পর্শ ঘটে। এগুলি নিয়মিত স্যানিটাইজ করা প্রয়োজন। সাধারণ ফ্লুয়ের চেয়েও এই ভাইরাস বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকে (প্লাস্টিক কিংবা ধাতব) টাকা বা মুদ্রায়। টাকা হাতে হাতে ঘুরছে, নানা জায়গায় ঘুরছে, এটাও একটা বড় কারণ সংক্রমণের, গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে সেটিরও।

অস্ট্রেলিয়ার এই গবেষণায় নিয়ে কী বলছেন রাজ্যের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা?

জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “বিশ্বব্যাপী যে গবেষণা এখনও পর্যন্ত স্বীকৃত, তা অনুযায়ী এই ভাইরাস পোরাস সারফেসে ৪৮ ঘণ্টা (কাপড়), নন-পোরাস (কাঠ, কাচ, স্টিল) ৭২ ঘণ্টা ও প্লাস্টিকে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণা হয়েছে গবেষণাগারের পরিবেশে। সেখানে সমস্ত বিধি মানা হয়েছে, ছিল না অতিবেগুনি রশ্মিও। তাই এর সঙ্গে সাধারণ ঘরের পরিবেশকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। নিয়ম করে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার বিষয়টিতেই জোর দিতে হবে।”

মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব। ফাইল ছবি।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির গবেষক শিল্পক চট্টোপাধ্যায় সুবর্ণর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি জানান, “ভাইরাস বেঁচে থাকার জন্য একটা হোস্ট প্রয়োজন, যাকে ঘিরে সে পুষ্টি পাবে। বেঁচে থাকবে। ২৮ দিন ধরে হোস্ট ছাড়া সে কী ভাবে বেঁচে থাকবে, এ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।”

আরও পড়ুন:পুজোর সময় রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে এই সব মানতেই হবে

মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, “২৮ দিন সারফেসে বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব। কারণ লালারস শুকিয়ে গেলে ভাইরাস সক্রিয় থাকতেই পারবে না। এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। প্রথমত অন্ধকারে এই পরীক্ষা করা হয়েছে, গবেষণাগারের পরিবেশ আর সাধারণ ঘরের পরিবেশ কখনওই এক নয়। তাই এখনই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ দেবকুমার গুপ্ত বলেন, “মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা, বার বার হাত ধোওয়া এ বিষয়গুলিতেই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এই ভাইরাসটি নতুন। তাই এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।”

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১

• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy