দ্রুত গতির যুগে মনের উপর চাপ বাড়ছে। ছবি: শাটারস্টক
কোভিড-১৯ সংক্রমণের জেরে কর্মব্যস্ত মানুষদের প্রায় সকলেই এখন দিনভর বাড়িতে বসে। টিভি দেখে আর বাড়ির টুকটাক কাজ করেও সময় যেন ফুরতেই চায় না। প্রথম কিছু দিন হঠাৎ ছুটি মনে করে ব্যাপারটা খারাপ না লাগলেও দীর্ঘ দিন গৃহবন্দি থাকায় মনে উপর চাপ এ বার ক্রমাগত বাড়ছে। তার উপর যোগ হয়েছে প্রতি দিন কোভিড সংক্রামক ও মৃতের সংখ্যার খবর। অঙ্ক যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে উদ্বেগ। শিশু থেকে বয়স্ক— বহু মানুষের মনেই নানা আশঙ্কা আর ভয় তৈরি হচ্ছে। যা ক্রমশ অবসাদে পরিণত হচ্ছে।
‘‘এই সময় অনেকে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন ঠিকই আবার অনেকের সে উপায়ও নেই। বেসরকারি চাকরিজীবীদের আশঙ্কাও বাড়ছে। তার সঙ্গে একটা অজানা অসুখের সঙ্গে লড়াই এমনিতেই ভয় ধরাচ্ছে। তার উপর আবার এই অসুখের কোনও ওষুধ এখনও নেই। তাই ভয়টাও বেশি। তবে সব ঘটনার মধ্যেই পজিটিভ দিক খুঁজে নিতে পারলে সমস্যা হবে না।’’ বললেন মনোবিদ কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসলে সমস্যাটা শুধু আমার-আপনার একার নয়। গোটা মানবজাতি আজ এক অদৃশ্য শত্রুর ভয়ে গৃহবন্দি। তাই যাঁরা বাড়িতে সময় দিতে পারেন না, তাঁরা এই সময়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। কেদারবাবুর অভিমত, কোনও কিছুতেই ভেঙে পড়লে চলবে না। প্রাণে বাঁচলে তবেই তো চাকরি থাকবে বা নতুন চাকরি হবে, এই ভাবে ভাবতে পারেন। নেগেটিভ চিন্তা মনের নানা সমস্যা ডেকে আনে, তাই এই চিন্তা-ভাবনা থেকে জোর করে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে নিজে তো বটেই, পরিবারের অন্যরাও অবসাদের শিকার হবেন। নিতান্ত প্রয়োজন হলে হাসপাতালের হেল্পলাইনে ফোন করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে জল বেশি খাচ্ছেন? শরীরের এ সব উপকারও হয়ে যাচ্ছে অজান্তেই!
মানসিক উদ্বেগকে অযথা প্রশ্রয় নয়।
‘‘অনেকেই সময় কাটাতে টেলিভিশন ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত খবরের মধ্যে ডুবে থাকেন। এর ফলে টেনশন, উদ্বেগ আর অবসাদ বাড়ে। মনে চাপ বাড়ার আরও নানা কারণের মধ্যে আছে অলস ভাবে সময় কাটানো। সারাটা দিনই কোনও না কোনও কাজে ব্যস্ত থাকলে অকারণ উদ্বেগ থাকবে না। আসলে আমাদের জীবদ্দশায় এই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি এই প্রথম। তাই বেশি রভাগ মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না কী করে এর মোকাবিলা করা উচিত। তাতেই বাড়়ছে চাপ।’’ —জানালেন বললেন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট স্মরণিকা ত্রিপাঠী। মন ভাল রাখার কিছু উপায়ও বলে দিলেন তিনি।
• দিনভর অলস ভাবে বিশ্রামে থাকলে মন একটা সময় মনে চাপ পড়বেই। তাই সকালে উঠেই ছাদে বা বারান্দায় গিয়ে ১০–১৫ মিনিট হাঁটুন বা গাছের পরিচর্যা করুন। প্রকৃতিকে অনুভব করার চেষ্টা করুন।
• প্রতিবেশী প্রাণী কাক, শালিখ, চড়ুই বা কুকুর, বেড়ালকে কিছু খেতে দিন। মন ভাল হবে।
• বাড়ির কাজে সবাই মিলে হাত লাগান। বাচ্চাকেও তার সাধ্য অনুযায়ী কিছু কাজের দায়িত্ব দিন।
• লকডাউনের একটা ভাল দিক পরনির্ভরশীলতা ছেড়ে সাবলম্বী হওয়া। ভেবে দেখুন, এক দিন গৃহ সহায়িকা না এলে আমরা নাস্তানাবুদ হতাম। এখন কিন্তু নিজেদের কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
• কাজ করুন ভালবেসে, বিরক্তি নিয়ে কাজ করলে কাজ আর মন দুই খারাপ হবে।
• অনেকের বাবা-মা কাছে না থাকায় দুশ্চিন্তা করছেন। চিন্তা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই নিয়ম করে দু’বেলা বাবা-মা বা নিকট জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিন। তাঁরা প্রকৃত কোনও সমস্যায় পড়লে স্থানীয় থানায় ফোন করে যোগাযোগ করুন।
আরও পড়ুন: লকডাউনের সময় ওজন কমাতে প্রাতঃরাশে রাখুন এই সব খাবার
যে কাজ আনন্দ দেয়, লকডাউনের সময় তাতে সময় দিন বেশি।
• আমাদের দ্রুতগতির জীবনে অনেক বন্ধুবান্ধব বা তুতো ভাইবোনের সঙ্গে যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই অবসরে সম্পর্কগুলো ঝালিয়ে নিন। ফোনে আড্ডা দেওয়ায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
• বাচ্চাদের আঁকা, গান শেখানোর পাশাপাশি ক্লাসিক বই পড়ে শোনান। ওদেরও গল্প বলতে বলুন।
• নিজেদের কোনও ভুলে যাওয়া শখ, যেমন: গান বাজনাই হোক বা গল্প-কবিতা লেখার অভ্যাস হোত, তা ঝালিয়ে নিলে মন ভাল থাকবে।
• গল্পের বই পড়ার সময় পাওয়া যেত না, এই অবসরে বইয়ের তাক থেকে বই পড়লে মন ভাল হবে।
• টিভিতে খবর না দেখে কার্টুন বা বেড়ানোর চ্যানেল দেখুন। তবে দিনের মধ্যে স্ক্রিন টাইম যেন দু’-তিন ঘণ্টার বেশি না হয় খেয়াল রাখবেন।
• রান্নার অভ্যাস ঝালিয়ে নিন। যা পাওয়া যাচ্ছে সেই সব সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে নতুন পদ রান্নার চেষ্টা করুন।
• কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতন থাকা ভাল, কিন্তু দিনভর পৃথিবীর কোথায় কত জন মারা পড়ছে সেই পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবেন না।
• করোনা-মুক্ত থাকতে মন ভাল রাখা জরুরি। অবসাদ ও অ্যাংজাইটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সুতরাং সুস্থ থাকার একমাত্র পথ মন ভাল রাখা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy