অসুখের গতি-প্রকৃতি বুঝতে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে রাজ্যে। ছবি: পিটিআই।
শুরু হল সেরোলজিকাল সার্ভে। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের গ্রিন-অরেঞ্জ ও রেড জোন মিলিয়ে অনেকগুলো জেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে রক্তের নমুনা সংগ্রহ চলছে। আইসিএমআর-এর নির্দেশ মেনে এই কাজে নেমেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্যকর্তারা। আপাতত কয়েকটি জেলাকে নির্বাচন করলেও পরিস্থিতি বুঝে সব জেলাতেই এই কাজ শুরু করবে আইসিএমআর। কলকাতাতেও শুরু হয়েছে অ্যান্টিবডি টেস্ট। নাইসেডে পাঠানো সে সব নমুনা চেন্নাইয়ে পরীক্ষা হবে।
পুরসভার অধীনে ১১টি ওয়ার্ডের কয়েকশো বাসিন্দার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে অ্যান্টিবডি আছে কি না, থাকলে কী মাত্রায় আছে তা মাপা শুরু হল। উদ্দেশ্য নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কলকাতাবাসীর শরীরে কতটা প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে ও রোগ কী ভাবে ছড়াচ্ছে তা বুঝে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
অ্যান্টিবডি কী
অ্যান্টিবডি হল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সূচক। শরীরে যখন কোনও ক্ষতিকর বস্তু প্রবেশ করে, তা সে জীবাণু হোক বা বিষ, শরীর তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে তাকে ধ্বংস করতে। সে সময় বিভিন্ন পর্যায়ে রক্তে যে সমস্ত যোদ্ধা তৈরি হয় তারাই অ্যান্টিবডি। এগুলো এক ধরণের প্রোটিন, যার নাম ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা আইজি।
আরও পড়ুন: আরও বাড়বে সংক্রমণ, এটা অপরিকল্পিত লকডাউনেরই ফল
সকলের প্রথমে যারা যুদ্ধে নামে, তারা ইমিউনোগ্লোবিউলিন-এম বা ‘আইজিএম’। এরা জীবাণুর গতি রুদ্ধ করার চেষ্টা করে, চেষ্টা করে তাকে আটকাতে। এ রকম আরও কয়েকটি প্রাথমিক স্তরের অ্যান্টিবডি রয়েছে। তারা এঁটে উঠতে না পারলে কিছু দিন পরে কাজে নামে আরও শক্তিশালী যোদ্ধার দল, যাদের নাম ইমিউনোগ্লোবিউলিন-জি বা ‘আইজিজি’। এরা জীবাণু বা অ্যান্টিজেনের উপর চালায় সাঁড়াশি আক্রমণ। জিতে গেলে শরীর রোগমুক্ত হয় এবং এরা দীর্ঘ দিনের জন্য থেকে যায় রক্তে। রক্ত পরীক্ষায় এদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেলে বোঝা যায় জীবাণু শরীরে ঢুকেছিল, তাতে হয় তিনি সেরে গিয়েছেন, নয়তো এখনও ভুগছেন।
টেস্টের ভাল-মন্দ
খুব সহজে ও কম খরচে এই পরীক্ষা করা যায়। এবং এমন সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় যাতে অতিমারির সঙ্গে লড়াই করা সহজ হয়। যেমন, সমাজের কত জনের মধ্যে রোগ ছড়িয়েছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না, অতিমারির গতি-প্রকৃতি কেমন, রোগ ছড়াচ্ছে না তার প্রকোপ কমছে, যে পথে অতিমারি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে তা সফল না ব্যর্থ।
রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রমণের অঙ্ক বুঝতে চাইছে আইসিএমআর। ফাইল চিত্র।
তবে এর কিছু অসুবিধাজনক দিকও আছে। যেমন, এটি সরাসরি টেস্ট নয়। ইনডিরেক্ট টেস্ট। অর্থাৎ যে জীবাণু থেকে রোগ হয়েছে, এ ক্ষেত্রে সার্স কোভ-২, তাকে হাতেনাতে ধরার পরীক্ষা নয় এটি। জীবাণু ঢোকার ফলে শরীরে যে সমস্ত পরিবর্তন হয়েছে, আইজিজি, আইজিএম নামের যে সব যোদ্ধা তৈরি হয়েছে, তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করার পরীক্ষা। ফলে জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার পর যত ক্ষণ না অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে আইজিজি, তত ক্ষণ এই পরীক্ষা করে লাভ নেই। কারণ সংক্রামিত হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে। আবার আগে যদি অন্য কোনও ভাইরাস দিয়ে সংক্রামিত হয়ে থাকেন, বিশেষ করে করোনাভাইরাস গোত্রের কোনও ভাইরাস দিয়ে (সাধারন সর্দি-কাশির মূলেও ৩-৪ ধরনের করোনাভাইরাসের হাত থাকে), সে বাবদ যে আইজিজি রক্তে থেকে গিয়েছে, তার কারণেও রিপোর্ট পজিটিভ আসতে পারে। তা ছাড়া শুধু এক বার অ্যান্টিবডি টেস্ট করেই কোভিড হয়েছে কি হয়নি তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। একাধিক বার পরীক্ষা করতে হয়। পজিটিভ এলে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে হবে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে।
ধরা যাক, ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এল। বিশেষজ্ঞরা যদি মনে করেন আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করবেন। বাকি ৬০ জনের নাম রেখে দিতে হবে ডাটাবেসে। ৩-৪ সপ্তাহ পরে আবার পরীক্ষা হবে। তখন আরও কয়েক জনের রিপোর্ট পজিটিভ এলে বোঝা যাবে সংক্রমণ হয়েছে এক মাসের মধ্যে। সেই হিসেবে এলাকায় তখন রোগ নিয়ন্ত্রণের নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাববেন না, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞের
কী ভাবে হয় পরীক্ষা
এই পরীক্ষা দু’ভাবে করা যায়। কার্ডের মাধ্যমে ও ল্যাবরেটরিতে এলাইজা পদ্ধতিতে। কার্ডে করলে ব্যাপারটা খুবই সহজ, কার্ডের উপর দু’-ফোঁটা দিয়ে দিলেই হাতে হাতে ফল। ঠিক প্রেগনেন্সি টেষ্টের মতো। যে কোনও জায়গায় করা যায়। খরচ কম। অ্যান্টিবডি পজিটিভ না নেগেটিভ তাও বোঝা যায়। তবে সেই পজিটিভ ফল যে কোভিডের কারণেই, তা সব সময় নয়।
এলাইজা টেস্ট সেই তুলনায় অনেক উন্নত। রক্তে কোভিডের অ্যান্টিবডির সঙ্গে অন্য রোগের অ্যান্টিবডির কিছুটা ভেজাল থাকলেও, যেহেতু ডাইলিউশন মেথডে টেস্ট হয়, ভেজালের পরিমাণ কমতে কমতে এক সময় নগণ্য হয়ে যায় বলে এই টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসা মানে রোগটা কোভিড-ই। ধরা যাক, একটা রক্তের নমুনায় ১০০টা কোভিডের অ্যান্টিবডির সঙ্গে ১০টা অন্য রোগের অ্যান্টিবডি মিশে আছে। এ বার এর মধ্যে সব পরিমাণ জল মেশালে ভেজালও অর্ধেক হয়ে যাবে। আবার তাতে সম পরিমাণ জল মেশালে ভেজাল আরও অর্ধেক হয়ে যাবে। এ ভাবে ৮ গুণ, ১৬ গুণ, ৩২ গুণ পর্যন্ত ডাইলিউট করা হয়, ফলে এক সময় কার্যত ভেজাল আর থাকে না। কোন পর্যায়ের ডাইলিউশন পর্যন্ত রিপোর্ট পজিটিভ আসছে তা দেখে রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়।
কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জায়গায় এই পরীক্ষা করা হচ্ছে এলাইজা পদ্ধতিতে। ফলে এই উদ্যোগ অতিমারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy