প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
সম্ভাব্য ত়ৃতীয় ঢেউ আটকাতে দেশজুড়ে টিকাকরণের উপর জোর দিচ্ছ কেন্দ্রীয় সরকার। কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি এখন বাজারে হাজির স্পুটনিক-ভি-ও। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহে জোর কদমে টিকাকরণ করা সম্ভব হবে বলেই আশা করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর মাঝেও প্রতিষেধক নেওয়া নিয়ে নানা রকম দ্বিধা রয়েছে মানুষের মনে।
কোন প্রতিষেধক বেশি কার্যকরী, কোভিড হয়ে গেলে প্রতিষেধক নিতে হবে কি না, এবং কোন সময় নিলে সবচেয়ে বেশি কাজ করবে প্রতিষেধক, এই ধরনের নানা প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মনে। বিশ্বজুড়ে যে ক’টা কোভিড-প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে, তার প্রত্যেকটাই নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা দিনে এবং রাতে আলাদা ভাবে কাজ করে। হয়ত সেই কারণেই সকালবেলা টিকা নিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয়।
দিনে বা রাতে যে কোনও সময়ে যদি আপনি সংক্রমিত হন, ধরে নেওয়া হয়, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা একই ভাবে লড়াই শুরু করবে। তবে হালের গবেষণা বলছে, দিনে এবং রাতে সেই লড়াই করার ক্ষমতাটা একটু বদলে যায়। আমাদের দেহের প্রত্যেকটা কোষ, এমনকি রোগ-প্রতিরোধক কোষগুলি দিনের বিভিন্ন সময় আলাদা করে বুঝতে পারে।
বডি ক্লক এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থায় অনেক ধরনের কোষ মজুত। তারা সারাক্ষণ গোটা শরীরে ঘোরাফেরা করে পর্যবেক্ষণ করছে কখন কোনও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের শরীরের একটা স্বাভাবিক ঘড়ি (বডি ক্লক) রয়েছে। সেটা নির্ধারণ করে দিনের কোন সময় কোন কোষ কোথায় মজুত থাকবে।
সহজ ভাষায়, দিনেরবেলা শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে এই রোগ-প্রতিরোধক কোষগুলি মজুত থাকে। কারণ ধরে নেওয়া হয়, এই সময় শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এবং রাতে এই কোষগুলি শরীরের বিভিন্ন অংশে চলাচল করে। সারাদিনে তারা যে রোগগুলির সঙ্গে লড়াই করেছে, রাতে সেটারই একটি স্মৃতি তৈরি হয় শরীরের মধ্যে। যাতে পরের দিন ফের একই রোগের সঙ্গে লড়তে গেলে এই স্মৃতির সাহায্যে আরও ভাল ভাবে কোষগুলি তৈরি থাকতে পারে।
আমাদের ‘বডি ক্লক’ অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কাজ করে। তাই গবেষণায় দেখা গিয়েছে হেপাটাইটিস বা ইনফ্লুয়েন্জার মতো ভাইরাস দিনের কোন সময় আক্রমণ করছে, তার উপর নির্ভর করবে একজন ব্যক্তি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে একেকটা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই সময়টা আলাদা। গবেষণায় এও বলা হয়েছে, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ডাক্তাররা আমাদের কোন ওষুধ দিনের কোন সময় খেতে হবে, জানিয়ে দেন। কোনওটা সকালে বেশি কাজ করে, কোনওটা রাতে।
প্রতিষেধক ও বডি ক্লক
প্রতিষেধক যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, তারাও কোনও একটা প্যাথাজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার স্মৃতি তৈরি করে। এবং শরীরের বডি ক্লক অনুযায়ী সেই স্মৃতি তৈরির ক্ষমতায় হেরফের হয়।
২০১৬ সালে একটা র্যান্ডমাইজ্ড ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে ৬০ বছরের বেশি ২৫০ জন ইনফ্লুয়েন্জার প্রতিষেধক নেন সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে। যাঁরা দুপুর ৩ থেকে ৫টার মধ্যে নিয়েছিলেন, তাঁদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যাঁরা সকালে নিয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে।
আরও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে প্রাপ্তবয়স্করা সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে টিবি’র প্রতিষেধক নেন, তাঁদের প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেক বেশি কাজ করছে, যাঁরা দুপুরের পর নিয়েছিলেন, তাঁদের তুলনায়। অনেকেই মনে করেন, ঘুমের সঙ্গে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা জুড়ে রয়েছে। সে কারনেই টিকা নেওয়ার আগে-পরে ভাল করে ঘুমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। যদিও সরাসরি এর দুইয়ে যোগ কী ভাবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, আমাদের ঘুমের সময় রোগ প্রতিরোধক কোষগুলো শরীরের কোন অংশে থাকছে এবং কী ‘স্মৃতি’ তৈরি করছে, তার একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাই প্রতিষেধকও আমাদের বডি ক্লক অনুযায়ী কাজ করে।
কোভিডের প্রত্যেকটা প্রতিষেধকের এফিকেসি যথেষ্ট বেশি। এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যে সময় পাচ্ছেন, সেই সময়ই নিয়ে নেওয়া উচিত। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কোনও কারণে কম, তাঁরা যদি সময়টাও খেয়াল রাখতে পারেন, তা হলে প্রতিষেধকের কার্যকরিতা নিয়ে আরেকটু বেশি নিশ্চিত থাকা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: সংবাদ সংস্থা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy