Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona

ফুসফুস থেকে হার্ট...জটিল কোভিডে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী কী কী ক্ষতি হতে পারে

যে সমস্ত কোভিড রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তার মধ্যে মোটামুটি ৪৫ শতাংশ মানুষের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরও কিছু চিকিৎসা লাগে।

কোভিড সেরে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে। ছবি: রয়টার্স

কোভিড সেরে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে। ছবি: রয়টার্স

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ১০:৪১
Share: Save:

হালকা রোগে ভুগে যাঁরা সেরে গেলেন বা যাঁদের সংক্রমণ হলেও উপসর্গ তেমন হল না, তাঁদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয় না। মাঝারি রোগীদের কিছুটা হয়। বেশি হয় যাঁরা প্রায় মৃত্যুর দরজা থেকে ফেরেন, তাঁদের। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ প্রায় ৮০-৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগ মৃদুই হয়। ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তার মধ্যে মাত্র কয়েক জনকেই আইসিইউ-এ ভর্তি করতে হয়।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যে সমস্ত কোভিড রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তার মধ্যে মোটামুটি ৪৫ শতাংশ মানুষের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরও কিছু চিকিৎসা লাগে। ৪ শতাংশ মানুষকে কিছু দিন রিহ্যাবে রেখে চিকিৎসা করলে ভাল হয়। এক শতাংশ মানুষকেই কেবল কোভিডের জের বয়ে বেড়াতে হয় জীবনভর।

ফুসফুসে থাকে ক্ষতের দাগ

ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ ব্রেনান জানিয়েছেন, সেরে ওঠার দেড়-দু’মাস পরও কিছু রোগীর শুকনো কাশি থেকে যায়। থাকে বুকে জ্বালা ভাব। গভীর ভাবে শ্বাস টানতে, শ্বাস ধরে রাখতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়। এর প্রধান কারণ সংক্রমণ ও প্রদাহের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশের স্থায়ী ক্ষতি। যত নিউমোনিয়ার বাড়াবাড়ি হয়, ক্ষতি হয় তত। সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে ধূসর প্যাচ, যাকে বলে গ্রাউন্ড গ্লাস ওপাসিটি। রেডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, চিনের হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৭০ জন জটিল রোগীর মধ্যে ৬৬ জনেরই ফুসফুসের ক্ষতি হয়েছে। এদের অর্ধেকের মধ্যে পাওয়া গেছে ধূসর প্যাচ। এমনকি উপসর্গহীন কোভিড রোগীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। এবং তার কিছু দিন পরই জাঁকিয়ে বসেছে রোগ।

আরও পড়ুন: করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে কী কী প্রয়োজন? কী বললেন চিকিৎসকেরা?

এ ক্ষতি যে সহজে নিরাময়ের নয়, তার প্রমাণ আছে অতীতে। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, ২০০৩-২০১৮ পর্যন্ত ৭১ জন সার্স রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দেখেছেন, এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে এবং তার হাত ধরে দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা কমেছে তাঁদের। ৩৬ জন মার্স রোগীকে পরীক্ষা করেও এই একই রকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাও তো এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল একটি ফুসফুস। কোভিডে সংক্রমণ হচ্ছে দু’টি ফুসফুসেই।

ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানিয়েছেন, “কোভিডে সমস্যা আরও বেশি হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটুকু বলা যায় যে, জটিল নিউমোনিয়া বা এআরডিএস-এ ভুগে উঠলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, তা সারতে ৬-১২ মাস লাগে। তার পরও পুরোপুরি ঠিক হবে কি না বলা যায় না। এর উপর যদি হাঁপানি, সিওপিডি বা ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ ইত্যাদি থাকে, কার্যকারিতা ফিরে আসবে বড়জোর ৬০-৭০ শতাংশ।”

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, ফের মৃত্যু ডাক্তারের

রক্ষা নেই হৃদযন্ত্রেরও

আগে থেকে হৃদরোগ না থাকলেও আইসিইউ তে ভর্তি কোভিড রোগীদের প্রায় ১৯ শতাংশের হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হার্ট ফেলিওর, অ্যারিদমিয়া, হার্ট অ্যাটাক, সবই হতে পারে। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। হার্টের পেশী দুর্বল হয়ে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি হয় অনেকের। ফলে আগের মতো দৌড়ঝাঁপের জীবন আর ফিরে আসে না।

চিকিত্সক জানিয়েছেন, ‘‘ভাইরাসের প্রভাবে যাঁদের হার্টের পেশীতে সরাসরি প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিস হয়, সেই ক্ষতির রেশ থেকে যেতে পারে দীর্ঘ দিন। পেশী দুর্বল হয়ে রক্ত সরবরাহের ব্যাঘাত হয়। ওষুধপত্র খাওয়ার সঙ্গে ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিলে ও ডাক্তার না বলা পর্যন্ত পরিশ্রমের কাজ না করলে ৬-৮ সপ্তাহে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়।’’

কিডনি ও লিভার

‘‘কোভিডের জটিল পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতি হয় কিডনি ও লিভারের। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কম করে ৩-৪ সপ্তাহ। কখনও পুরো স্বাভাবিক হয় না। বিশেষ করে যদি আগে থেকে সমস্যা থাকে”— জানিয়েছেন সৌতিকবাবু।

আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা​

রক্তের সমস্যা

প্রায় ৩১ শতাংশ জটিল কোভিড রোগীর শরীরে প্রচুর পরিমাণে রক্তের ডেলা জমতে থাকে। এ থেকে নানা সমস্যা হয়। যেমন—

• ফুসফুসে জমলে পালমোনারি এমবলিজম নামের প্রাণঘাতী সমস্যা হতে পারে। আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৩-৩০ শতাংশের এই সমস্যা হয়। সেরে ওঠার পরও অনেকের ক্লান্তি, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট লেগে থাকে। চলাফেরা ও কাজকর্মে তার প্রভাব পড়ে।

• কারও রক্তের ডেলা পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। স্ট্রোক হয়। উহানের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সেখানে আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশের স্ট্রোক হয়েছিল।

• কারও হার্ট অ্যাটাক হয়। ফলে হার্ট আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে যায়।

• কিডনিতে জমলে কিডনির ক্ষতি তো হয়ই, ডায়ালিসিস করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেরে ওঠার পর কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়।

• পায়ের শিরায় জমে দেখা দিতে পারে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের জটিল অসুখ। বাড়ি যাওয়ার পর হঠাৎ রোগ দেখা দিতে পারে।

এ সব কারণেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরও বেশ কিছু দিন রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেয়ে যেতে হয় অনেক সময়।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE