Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID Deaths

১৭ শতাংশ কোভিড মৃত্যুর নেপথ্যেই দূষিত বায়ু

সমীক্ষা অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ভারতে কোভিড ১৯-এ যত মৃত্যু হয়েছে, তার ১৭ শতাংশ বায়ুদূষণের (মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দূষণ) সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিষাইছে বায়ু: দূষিত ধোঁয়ায় ঢেকেছে শহরের আকাশ। বৃহস্পতিবার, বাইপাস সংলগ্ন ধাপা এলাকায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বিষাইছে বায়ু: দূষিত ধোঁয়ায় ঢেকেছে শহরের আকাশ। বৃহস্পতিবার, বাইপাস সংলগ্ন ধাপা এলাকায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

প্রতি বছর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তেমনটাই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢুকে তাকে ক্রমশ দুর্বল করে দেয়, যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু বার্ষিক বায়ুদূষণের সঙ্গে এ বার যোগ হয়েছে সার্স-কোভ ২ ‘রেসপিরেটরি’ ভাইরাসের সংক্রমণ। যার প্রধান লক্ষ্য সেই ফুসফুসই!

ফলে আগামী তিন মাস শীতের মরসুমে, অর্থাৎ নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে কী পরিস্থিতি হতে চলেছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, কলকাতা-সহ দেশের বায়ু শীতে আরও দূষিত হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে তাঁদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিয়োলজি’ (ইএসসি)-র জার্নাল ‘কার্ডিয়োভাস্কুলার রিসার্চ’ (সিভিআর)-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষা।

দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বায়ুদূষণের কারণে দুর্বল ফুসফুস সার্স-কোভ ২ ভাইরাসে সংক্রমিত হলে কী ভাবে তা মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সেই সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে। এমনিতে বায়ুদূষণ ও কোভিড ১৯-এর পারস্পরিক ‘সম্পর্ক’ মৃত্যুর জন্য কতটা দায়ী, তা নিয়ে অন্য একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। কিন্তু অনেকে মনে করছেন, সিভিআর-এর এই সমীক্ষা বিশ্বের দেশভিত্তিক বায়ুদূষণের অবস্থা ও তার জন্য কোভিডে মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বড় প্রামাণ্য গবেষণা।

আরও পড়ুন: এক জন ‘সুপার স্প্রেডারে’ আক্রান্ত কত, বাড়ছে শঙ্কা

ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ভারতে কোভিড ১৯-এ যত মৃত্যু হয়েছে, তার ১৭ শতাংশ বায়ুদূষণের (মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দূষণ) সঙ্গে সম্পর্কিত। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘কার্ডিয়োভাস্কুলার রিসার্চ’-এর প্রেস অফিসার এমা ম্যাসন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘ভারতে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে দূষিত বায়ু ওই ১৭ শতাংশ মানুষের ফুসফুস এবং কার্ডিয়োভাস্কুলার সিস্টেমকে এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল যে, যখন তাঁরা কোভিড ১৯-এ সংক্রমিত হয়েছেন, সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি।’’

আরও পড়ুন: দাঁতে কালচে ছোপ, মুখে দুর্গন্ধ? কী কী মানলে সহজেই সমাধান​

জোধপুরের ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর ‘পালমোনারি মেডিসিন’ বিভাগের অ্যাডিশনাল প্রফেসর নবীন দত্তও বলেন, ‘‘দূষিত বায়ু, অর্থাৎ বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) ক্রমাগত শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুসে ঢোকার কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আক্রান্তদের কেউ কেউ সুস্থও হয়ে উঠতে পারতেন।’’ ‘ইন্ডিয়ান চেস্ট সোসাইটি’র সদস্য, পালমোনারি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বি বি মাথুরের কথায়, ‘‘বিশ্বে কেন, আমাদের দেশেই প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ দূষিত বায়ু। করোনা সংক্রমণ এই পরিস্থিতিকে আরও সঙ্কটজনক করে তুলেছে।’’

শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রূপরেখা তৈরি করতে গত বছর কলকাতা পুরসভার তরফে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছিল। স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে শহরের বায়ুদূষণ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তার সম্ভাব্য দিশা খুঁজে পাওয়াই ছিল ওই কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য। কমিটির চেয়ারম্যান তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বায়ুদূষণের নিরিখে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি, এই তিন মাস এমনিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্য বছরগুলিতে যেখানে রাসায়নিক বা ভৌত কারণে দূষিত বায়ু ফুসফুসকে দুর্বল করে, সেখানে এ বছর ‘বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টর’ অর্থাৎ কোভিড-১৯ যুক্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। আরও সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।’’ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব রেসপিরেটরি কেয়ার’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্থার সদাননধম বলেন, ‘‘বায়ুদূষণের কারণে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা না হারালে হয়তো ফুসফুস কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারত। যে হেতু তা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত, তাই সেই লড়াই সে চালাতে না পেরে কোভিডের কাছে হেরে গিয়েছে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy