প্রতীকী ছবি।
হাওড়ার কাজিপাড়া লেনের এক পরিবারে কোভিড-১৯-এর আক্রান্তের খোঁজ পেয়ে পাড়ার লোকজন ওই বাড়ির সদস্যদের নানা ভাবে হেনস্থা শুরু করেন।
মধ্যমগ্রামের পূর্ব উদয়রাজপুরে বাড়ির এক জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পাড়ার লোকজন তাঁদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য জোর করেন।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক সিস্টার ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পর বাড়িওয়ালা তাঁকে সেই দিনেই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন।
এসএসকেএম হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার উত্তর ২৪ পরগণা থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহ থেকে হাসপাতালে আসতেন। লকডাউন হওয়ায় দু’জন সিনিয়র নার্সের সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকছিলেন। রাতে ডিউটি সেরে ফেরার পর জানতে পারলেন, বাড়িওয়ালা পর দিনই তাঁদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুকুম দিয়েছেন।
দিনের পর দিন এই যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে, তা কি হওয়া উচিত? প্রতিবেশী কারওর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হলে কি তাঁকে সপরিবার পাড়া থেকে উৎখাতের চেষ্টা করা উচিত? একেবারেই নয়। যদি জানতে পারেন পাশের বাড়ির কোনও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখন অবশ্যই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী।
একনজরে দেখে নিন এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত?
• প্রথমেই যাচাই করে নিন তিনি সত্যিই করোনা আক্রান্ত কিনা অথবা সর্দি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ আছে কিনা। এ রকম কিছু থাকলে সেই পরিবারের মানুষ হয়তো নিজেরাই ডাক্তারের কাছে যাবেন। যদি সাহায্য চান, তাঁদের সাহায্য করুন। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দিন।
• বাড়ির অন্যদের গৃহবন্দি থাকার জন্যে অনুরোধ করুন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য চাইতে পারেন।
• আক্রান্তের পরিবারকে বাইরে যেতে মানা করুন। তাঁদের রোজকার খাবার ও ওষুধের দরকার হতেই পারে। তাই ফোনে তাঁদের দরকারের কথা জেনে নিয়ে বাজার দোকান করে দরজার বাইরে পৌঁছে দিয়ে আসুন।
• পাশাপাশি দরজা থাকলে দরজার হাতল বা নবে হাত দিলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নিজের বাড়ির দরজা নিয়ম করে জীবাণুমুক্ত করা উচিত। নব বা হাতল সাবানজল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
• সিঁড়ি, লিফট জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া দরকার।
• বাড়ির অন্যদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কিনা খবর নিতে ভুলবেন না।
• মুখোমুখি বা পাশাপাশি জানলা থাকলে তা বন্ধ করে রাখাই শ্রেয়। যদিও কোভিড ১৯ ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, তবুও এইটুকু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
• বাড়িতে থাকলে খাবার আগে তো বটেই, মুখে চোখে হাত দেওয়ার আগেও হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক।
• রোগী বা তাঁর পরিবারকে একঘরে করে রাখবেন না, ভাইরাস কিন্তু কারওকেই ছেড়ে কথা বলে না। সুতরাং সতর্ক থাকুন, কিন্তু অহেতুক আতঙ্ক ছড়াবেন না।
আরও পড়ুন: কোভিডে আক্রান্ত অফিসার, দিল্লিতে সিল করা হল নীতি-আয়োগ ভবন
সাইকিয়াট্রিস্ট অমিতাভ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অতিমারি হওয়ার কারণে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ে অনেকে নানা দোলাচলে ভুগছেন। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস হেঁটে হেঁটে কারও বাড়িতে ঢুকে পড়ে না। এদিকে সোসাল ডিস্ট্যান্স-এর তোয়াক্কা না করে বাজারে ভিড় করছেন, অন্যদিকে পাড়াপড়শির হাঁচি-কাশি হলে তাঁকে একঘরে করে পাড়া ছাড়া করার চেষ্টা মানসিক অসুখের লক্ষণ বলে মনে করেন অমিতাভবাবু। অনেকের মনে সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল কাজ করে, এঁরা মনে করেন যাঁর যা-ই হোক না কেন আমার কিছুই হবে না। পাশের বাড়ির লোক আক্রান্ত হলেই এদের অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। এঁদের জন্যঅমিতাভবাবু কয়েকটি পরামর্শ দিলেন।
• কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ মানেই যে মৃত্যুর পরোয়ানা তা কিন্তু নয়। এই কথা মনে রেখে নিজেই নিজের কাউন্সেলিং করা উচিত।
• মনে রাখবেন, যাঁরা কোভিড রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন খুব ছোঁয়াচে রোগ হলে তাঁদের, বিশেষ করে সাফাইকর্মীরা সবার আগে আক্রান্ত হতেন বা তাঁদের মৃত্যু হত। তাঁরা যখন নিরাপদে আছেন, যথাযথ পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে সমস্যা হবে না।
• বেশিরভাগ মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত খারাপ ভাবনা ভেবে ফেলেন। যেমন, যদি রোগটি হয়, বাড়ির সবারই হবে, হয়তো মারা যাব। হাসপাতালে জায়গা পাব না, এই সব নেগেটিভ ভাবনা ত্যাগ করতে হবে।
• ঠাণ্ডা মাথায় যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
• পাড়াপ্রতিবেশী বিপদে পড়লে তাঁদের পাশে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনার বিপদের দিনে তাঁদেরই সাহায্য লাগবে। হয়তো পাশের বাড়ির কোভিড-মুক্ত মানুষটির রক্ত থেকে পাওয়া প্লাজমা আপনার নিকটজনের জীবন বাঁচাবে।
আরও পড়ুন: ৫ দিন মেয়ের দেহ আগলে রাখলেন মা, আতঙ্ক বেলঘরিয়ায়
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy