বেপরোয়া: বাড়ছে সংক্রমণ। তবুও মাস্ক ছাড়াই পথে গোটা পরিবার। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) সম্পর্কে ভুল ধারণা। আর সেখানেই করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। কলকাতা-সহ দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, ‘আমার ইমিউনিটি ভাল, অতএব আমার কিছু হবে না’—এই মনোভাব জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশের মধ্যেই কাজ করছে। ফলে নিয়ম মানার ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে একটা বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। যা আদতে আক্রান্তের সংখ্যাই বৃদ্ধি করছে ক্রমশ।
বিশেষজ্ঞেরা এও জানাচ্ছেন, মৃত্যুহার কম বা সুস্থতার হার বেশি, এ নিয়ে ক্রমাগত প্রচার চললেও সংক্রমণের হার (ইনফেকশন রেট) নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত করোনা থেকে মুক্তির আশা নেই। বরং এই ধরনের প্রচারে মানুষের মধ্যে নিশ্চিন্তবোধ এবং রোগ সম্পর্কে উপেক্ষার মনোভাব তৈরি হচ্ছে, যা সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেশে দৈনিক প্রায় এক লক্ষ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। সেই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
বেলেঘাটা আইডি-র সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, করোনায় সুস্থতার হার বেশি, অতএব করোনা হলেও চিন্তার কী আছে। ঠিক সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে। এই মনোভাব কাজ করছে অনেকের মধ্যেই। তাঁর কথায়, ‘‘তা ছাড়া মানুষ রাস্তাঘাটে বেরোচ্ছেন। কমিউনিটি ইন্টার্যাকশন হচ্ছে, যেখানে সংক্রমণ প্রতিরোধের নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ‘মিউটেশনেই বেশি সংক্রামক হচ্ছে ভাইরাস’
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকার জন্যই করোনায় উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বেশি, এই কথাটিরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল যেমন জানাচ্ছেন, উপসর্গহীন রোগী বেশি থাকায় হয়তো হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। কিন্তু তাতে নিশ্চিন্ত বোধ করলে ভুল হবে। কারণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকার জন্য কেউ সংক্রমিত হয়েও উপসর্গহীন থাকলেন ঠিকই। তবে তাঁর মাধ্যমে যখন পরিবারের বয়স্ক মানুষ, বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে বা যাঁরা ‘ভালনারেবল’ এমন মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়, তখন পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মৃত্যুহার ১.৬ শতাংশের বিষয়টিও তখন গৌণ হয়ে যায়। সুখেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘১.৬ শতাংশ মৃত্যুহারের মধ্যে আমার বা অন্য কারও পরিবারের কেউ থাকবেন কি না, সেটা কিন্তু কেউই জানি না। ফলে সে ক্ষেত্রে এই সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের কোনও মূল্য নেই। আমি সংক্রমিত হতে পারি কি পারি না, এক জন সাধারণ মানুষ হিসেবে সেটাই আমার প্রশ্ন!’’
এমনিতেই মাস্ক না পরা, দূরত্ব-বিধি না মানা-সহ জনগোষ্ঠীর একটি শ্রেণির বেপরোয়া মনোভাব রয়েছে। যা শুরু থেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। তার সঙ্গে বর্তমানে সুস্থতার হার ক্রমশ ভাল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রচার চলছে।
সেটা অযথা ‘প্যানিক’ তৈরি না করা বা আশ্বাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে ঠিকই। কিন্তু দেশের কোভিড ১৯-এর অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর এক গবেষকের কথায়, ‘‘প্রতিদিন এত লক্ষ লোক সুস্থ হয়ে উঠছেন, অতএব আমার কোভিড হলে চিন্তা নেই, ঠিক সুস্থ হয়ে যাব— এই মনোভাব নিয়ম মানার ক্ষেত্রে একটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সুস্থ হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত কত জনকে আমি সংক্রমিত করতে পারি, সেই বিষয়টি সেখানে গুরুত্বই পাচ্ছে না।’’
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডি এন রাও জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে করোনা রোগীর প্রায় সব কেসই ‘কন্ট্যাক্ট কেস’। অর্থাৎ পরস্পরের সংস্পর্শে আসার জন্যই দেশে নতুন কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্ক না পরলে এবং দূরত্ব-বিধি না মানলে এই সংখ্যা আরও বাড়তেই থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy