প্রতীকী ছবি। (ভিতরে চিকিৎসক কৃষ্ণ রেড্ডি নল্লামল্লা) ছবি: সংগৃহিত
করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় তরঙ্গ নিয়ে ভীত সরকার থেকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই তৃতীয় তরঙ্গ কেন আসবে বলে ধরে নিচ্ছেন সকলে। কী করেই বা এই তৃতীয় তরঙ্গের আসার সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে? কী করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা সম্ভব? এই ধরনের নানা প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মনে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক অলাভজনক থিঙ্কট্যাঙ্কের সর্বভারতীয় প্রধান চিকিৎসক কৃষ্ণ নল্লামল্লা উত্তর দিলেন যাবতীয় প্রশ্নের।
করোনার তৃতীয় ঢেউ কখন আসবে সেটা কি সঠিকভাবে বলা সম্ভব?
একটা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরও যখন রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ঠিক করে তৈরি হয় না, তখন একের পর এক ঢেউ আসতে বাধ্য। যাঁদের এই রোগ আগে হয়নি বা যাঁদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়নি, তাঁদের সকলেরই ঝুঁকি বেশি। প্রতিষেধক নেওয়ার পর বা একবার সংক্রমিত হওয়ার কতদিন পর অবধি একজনের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বহাল থাকবে, তা এখনই বলার সময় আসেনি। তাই এমনও হতে পারে সময়ের সঙ্গে কোনও কোনও মানুষের এই রোগের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা কমে গিয়েছে। নতুন ঢেউ আসার আরেক কারণ একটি ভাইরাসের বারবার রূপ পরিবর্তন করা। সে ক্ষেত্রেও মানুষের আগের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা আর কাজ করবে না। তাই কখন নতুন ঢেউ আসবে, তা সঠিক ভাবে বলা অসম্ভব। সবই নির্ভর করে একটি দেশের মানুষ কতটা সচেতন। কতটা কোভিডবিধি মানা হচ্ছে বা কত সংখ্যক মানুষের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে।
প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি ক্ষতি করেছে মানুষের। পরের ঢেউ কি আরও মারাত্মক হতে পারে?
দ্বিতীয় ঢেউয়ের মারাত্মক হয়ে ওঠার কারণ অনেক। একসঙ্গে সব কিছু ‘আনলক’ করে দেওয়া হয়েছিল। বিয়ে, নির্বচন, ধর্মীয় জনমিছিল— কোনওটাই তো বাদ পড়েনি। পাশাপাশি দায়ী ছিল ভারতীয় ডেল্টা প্রজাতি (বি১.৬১৭.২) । গত বছরের তুলনায় এই রূপান্তরিত ভাইরাস অনেক দ্রুত ছড়িয়েছিল। তৃতীয় ঢেউ কতটা মারাত্মক হবে তা নির্ভর করছে, দেশের মানুষ এবারে সঙ্কট থেকে কী ধরনের শিক্ষা নিচ্ছেন। এবং সঙ্গে ভাইরাসের নতুন প্রজাতি কত তাড়াতাড়ি রূপ পরিবর্তন করছে।
তা হলে বাঁচার উপায় কী?
সব রাজ্যের প্রত্যেকটা জেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সতর্কতা আরও বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আঞ্চলিক ছোট ছোট লকডাউন করতে হবে যাতে কোনও ভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। করোনা পজিটিভিটি’র হার ৫ শতাংশের নীচে রাখতে হলে এটাই একমাত্র উপায়। তাছা়ড়া কোভিড বিধি নিয়ে সারাক্ষণ সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জেলা স্তর থেকেই এমন ভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে যে কোনও রকম সঙ্কট সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকা যায়। পরিকাঠামো গড়ার পাশাপাশি আর্থিক দুরবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য যথাযথ নীতি নেওয়াও প্রয়োজন।
বাচ্চাদের ঝুঁকি কি সত্যিই বেশি?
তার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে স্কুলে বা বাইরে যায়নি তারা। এতদিন অনেকটাই সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু প্রতিষেধক পেতে তাদের এখনও অনেক দেরি। টিকার সঙ্কট কাটলেও ছোটদের ক্ষেত্রে টিকাকরণ কতটা নিরাপদ, সেই গবেষণা এখনও চলছে। ফলে তাদের আরও দেরি হবে। তবে ভয়ের কতটা কারণ আছে, তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে কোভিড মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি ছোটদের ক্ষেত্রে। তাদের মধ্যে গুরুতর কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। ভবিষ্যতেও তাই থাকবে আশা করা যায়।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি?
গোটা দেশের পরিকাঠামো আরও উন্নত করা প্রয়োজন। গ্রামীণ এলাকায় শুধু কোভিড নয়, অন্য সংক্রামক রোগও আটকাতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের কাছে আরও স্বচ্ছভাবে সচেতনতা বাড়ানোর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও গবেষক, এপিডেমোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞদের সাহায্য দরকার। প্রয়োজনে বেসরকারি ক্ষেত্রের সাহায্য চাইতে হবে যাতে নতুন ঢেউয়ের জন্য আরও ভাল ভাবে তৈরি থাকা যায়। তবে শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই নয়, কিছু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কিছু বদল আনা প্রয়োজন।
কী রকম?
যাঁরা স্বাস্থ্যবীমা দিচ্ছেন, তাঁদের আরও বেশি দায়বদ্ধ হতে বাধ্য করতে হবে। হঠাৎ কোনও বড় চিকিৎসার খরচ টানার জন্য ছোটখাটো ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সকলের জন্য খাবার, পানীয় জল বা থাকার জায়গার মতো সামাজিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। দ্রুত টিকাকরণ ব্যবস্থাও করতে হবে পাশাপাশি।
টিকাকরণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিত্য নতুন রূপান্তরিত প্রজাতির ক্ষেত্রে সেগুলো কতটা কার্যকরী হবে?
নতুন প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রতিষেধক কতটা কার্যকরী, তার গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। একদমই যে কাজ করবে, সেই সম্ভবনা অনেকটাই কমছে। নিত্য নতুন প্রজাতির ক্ষেত্রে এখনকার প্রতিষেধকগুলো কতটা কার্যকরী সেও গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি জেনোমিক পর্যবেক্ষণও জারি রাখতে হবে। যাতে আমরা বুঝতে পারি কী ভাবে রূপ বদলাচ্ছে ভাইরাস এবং ভবিষ্যতে তা নিয়ে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুত হতে পারি।
অ্যান্টিবডি ককটেল বা ডিআরডিও’র টু জি ড্রাগের মতো অনেক ওষুধ বাজারে আসছে। একসঙ্গে প্লাজমা থেরাপির মতো অনেক চিকিৎসার পদ্ধতি বাতিলও হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি খুব তাড়াহুড়ো করে নতুন চিকিৎসা শুরু করে দিচ্ছি?
আপতকালীন ব্যবহারের জন্য স্বীকৃতি পাওয়ার নানা রকম বিধি-নিয়ম রয়েছে। গত বছর যখন অতিমারির সম্মুখীন হতে হয়, তখন কোনও রকমও তথ্য কারুর কাছে ছিল না। থিয়োরিটিক্যাল অনুমানের উপর ভরসা করে অনেক চিকিৎসার পদ্ধতি দ্রুত শুরু করে দেওয়া হয়েছিল। সময় যত এগোচ্ছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য হাতে পাওয়া যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী বিধি-নিয়মে বদল আনা হচ্ছে। তাই এই রকম সময়ে হু, আইসিএমআর, সিডিসি, এফডিএ থেকে যে ধরনের নির্দেশিকা আসছে, চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের সেই অনুযায়ী চলা উচিত। রোজ প্রচুর নতুন তথ্য সামনে আসছে। সেগুলোয় বিভ্রান্ত না হয়ে এই সংস্থাগুলোর নির্দেশিকা মেনে চলাই শ্রেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy