রোজকার খাওয়া যাওয়া, শরীরচর্চা, মন মেজাজ সব কিছুর ওপর নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ছবি—শাটারস্টক
লকডাউনের সময়সীমা বাড়ুক বা উঠে যাক, করোনাভাইরাসের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও বিশেষ কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তাই এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সব হাতিয়ার শানিয়ে রাখতে হবে আমাদের। গৃহবন্দি থাকলেও নিতান্ত দরকারে বাইরে বেরোতেই হয়। নিয়ম কানুন মেনে চললেও কখনও কখনও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তাই থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে কোভিড ১৯-এর সঙ্গে লড়াই অনেক সহজ হয়। ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ৭০–৭৫ শতাংশ আসে আমাদের রোজকার খাবার থেকে। আর বাকি ২৫–৩০ শতাংশ নিয়মিত ব্যয়াম ও কায়িক শ্রম থেকে গড়ে ওঠে, বললেন কনসালট্যান্ট ডায়টিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট রেশমি রায়চৌধুরী। ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্যে কার্যকর ভূমিকা নেয় ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আর দুটি অত্যন্ত দরকারি খনিজ জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম। এবং অবশ্যই উচ্চমানের প্রোটিন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ বা ফাইবার অপ্রয়োজনীয়। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবার খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া আরও একটা কথা জেনে খুশি হবেন যে, আমরা ভারতীয়রা যে মশলা খাই তার অনেকগুলিই অজস্র মিনারেলস ও অ্যান্টঅক্সিড্যান্টের আকর। তবে খুব বেশি তেল ঝাল মশলা দিয়ে রান্না করা ঠিক নয়। এর ফলে একদিকে সবজির গুণ চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, অন্য দিকে হজম হতে অসুবিধে হয়। রেশমি রায়চৌধুরী বললেন, একটা কথা খুব ভাল করে জেনে রাখা দরকার যে, এমন কোনও ম্যাজিক ফুড নেই যা খেলে রাতারাতি কংক্রিটের ইমিউনিটি তৈরি হবে। রোজকার খাওয়া যাওয়া, শরীরচর্চা, মন মেজাজ সব কিছুর ওপর নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাই সঠিক খাবার নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত এক্সারসাইজ ও স্ট্রেস মুক্তির জন্য মেডিটেশন করলে ভাল হয়।
ভিটামিনে ভরপুর ফল
ভিটামিন সি-র প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা মোসাম্বি বা কমলালেবুর কথা ভাবি। কিন্তু জেনে রাখুন প্রায় সব রকম ফলে ভিটামিন সি আছে। পাতিলেবু, আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আঙুর, পেয়ারা, আপেল, পেঁপে, শসা, কলা, তরমুজ... যা ফল পাওয়া যাবে কিনে রাখুন। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিনের বেশি বাজারে না যাওয়াই ভাল। কিনে রেখে দিতে পারেন। রোজ নিয়ম করে অন্তত দু’তিন রকম ফল খাওয়া উচিত। রোজ ফল খেতে ভাল না লাগলে দই মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেলে ভাল লাগবে।
বেগুন, কুমড়ো, ঢ্যাঁড়স, টোম্যাটো খেতে ভুলবেন না
লকডাউনের সময় মনের মতো সবজি পাওয়া মুশকিল। তবে বাজারে বেগুন, কুমড়ো, পটল, ঢ্যাঁড়স, গাজর, টম্যাটো পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের মতো কিনে রাখা যায়। অনেকেই ভাবেন বেগুনের কোনও উপকারিতা নেই। কিন্তু জেনে রাখুন, এই সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার আছে। মাঝে মাঝে কলমি শাক, নটে শাক, লাউ বা কুমড়ো শাক খাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টোম্যাটোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। চেষ্টা করুন প্রতিটি রান্নায় টোম্যাটো দেওয়ার। তবে অনেকে কাঁচা টম্যাটো খান। এই সময়ে কাঁচা স্যালাড না খাওয়াই ভাল। বাজার থেকে কেনা শাক, সবজি, ফলমূল ভাল করে রানিং ওয়াটারে ধুয়ে নিয়ে শুকিয়ে তবেই ফ্রিজে রাখতে হবে। অনেকেই সবজি খাওয়া পছন্দ করেন না। কিন্তু গৃহবন্দি অবস্থায় কেবল আলু আর ভাত রুটি খেলে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়বিটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ডাল ও সবজি খাওয়া দরকার। আর লকডাউনের বাজারে খিচুড়ি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার। দু’তিন রকম ডাল সহযোগে খিচুড়ি প্রোটিন ও ভিটামিনে ভরপুর। তবে সপ্তাহে এক দু’দিনের বেশি খিচুড়ি না খাওয়াই ভাল।
আরও পড়ুন: লকডাউনে গৃহবন্দি অবস্থায় মানসিক অবসাদ কাটাবেন কী ভাবে?
হলুদ, কালোজিরে, আদা, রসুন
হলুদ ছাড়া ভারতীয় রান্না হয় না বললেই চলে। কারক্যুমিন শব্দটা খুব চেনা না হলেও হলুদের প্রধান উপাদান হল এই কারক্যুমিন। এটি একটি অত্যন্ত উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে নিয়মিত হলুদ খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ আর এক গ্লাস গরম জলে একটা গোটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে। কোভিড–১৯ ছাড়াও যে কোনও অসুখকে দূরে রাখার অন্যতম উপায় এই ভাবে ইমিউনিটি বাড়ানো। রসুনে থাকা অ্যালিসিন অসুখ বিসুখকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। রসুনে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া রান্নায় ব্যবহৃত আদায় থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম হল ইমিউনিটি বুস্টার। কালোজিরেতে থাকে নানান মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। বাঙালি রান্নায় কালোজিরে ব্যবহার করা হলেও বিদেশে এই মশলার ব্যবহার ছিল না। কিন্তু ইদানীং ইউরোপ বা আমেরিকায় কালোজিরের তেল খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। চেষ্টা করুন রান্নায় কালোজিরে ব্যবহার করার। রান্নায় আদা, রসুন, হলুদ, কালোজিরে ব্যবহার করা দরকার। এ ছাড়া নিয়ম করেও কাঁচা হলুদ ও রসুন খাওয়া উচিত।
এ ছাড়া প্রতি দিন সকালে উঠে খালিপেটে এক গ্লাস গরম জলে একটা পাতিলেবুর রস, এক টুকরো আদা ও রসুন পেষা এবং এক টুকরো হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন। এ ছাড়া আধ চামচ হলুদ বাটা বা গুঁড়ো ও ১/৪ চামচ কালোজিরে গুঁড়ো লেবুর জলে মিশিয়ে পান করুন। এটি খেলে ইমিউনিটি বাড়বে। করোনাভাইরাসকে জব্দ করতে এটি সাহা?য্য করবে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বন্ধ পার্লার, বাড়িতে থেকেই রূপচর্চা করুন এ সব কৌশলে
দই খেতে ভুলবেন না
ল্যাকটোব্যাসিলাস গোত্রের বন্ধু ব্যাকটেরিয়া আমাদের রোগ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, ল্যাকটোকক্কাস ল্যাকটিস ক্রিমোরিস জাতীয় এই বন্ধু ব্যাকটেরিয়া থাকে দইয়ে। তাই প্রতি দিন দই খাওয়া উচিত। সকালে জলখাবারে দই খেতে পারেন, কিংবা মিড মর্নিং এ দইয়ের ঘোল, লাঞ্চে দই বা রায়তা, নানা ভাবে দই খাওয়া দরকার। এক দিকে যেমন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে, অন্য দিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাড়িতে থাকুন এবং অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে পুষ্টিকর খাবার খান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy