Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Hydroxychloroquine

কেন ভারতের কাছেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চাইছে আমেরিকা?

কেন এত চাহিদা? করোনা প্রতিরোধে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি আদৌ ‘গেম চেঞ্জার’?

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আঁকড়ে করোনা-মুক্তির খোঁজে আমেরিকা। ছবি: রয়টার্স।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আঁকড়ে করোনা-মুক্তির খোঁজে আমেরিকা। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ১৭:০৯
Share: Save:

করোনা ঠেকাতে ভারতের কাছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চেয়ে পাঠালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, ওষুধ না মিললে ‘ফল’ ভাল হবে না বলেও এল হুঁশিয়ারি। শুধু ট্রাম্পই নন, করোনার এই ‘মিরাকল’ ওষুধের রফতানিতে ভারতকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোও।

কিন্তু কেন এত চাহিদা? করোনা প্রতিরোধে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি আদৌ ‘গেম চেঞ্জার’? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘না। ‘গেম চেঞ্জার’ বলা যায় না একেবারেই। সারা বিশ্বেই করোনা আক্রান্ত দেশগুলিতে এই ওষুধ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। কোথাও ভাল কাজ দিচ্ছে, আবার কোথাও এই ওষুধ ডেকে আনছে অন্য রোগ। যে ওষুধ এখনও নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম মেনে একই রকম ফল সারা বিশ্বে দেখাচ্ছে না, তাকে কী করে গেম চেঞ্জার বলি! বরং আমেরিকা এই পরিস্থিতিতে কিছুটা খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। তাই ওদের দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কিছুটা ভাল কাজ দিয়েছে বলে, সেটার উপরেই মার্কিনিদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে।’’

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না দিলে ‘ফল’ ভুগতে হবে, ভারতকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে আশাবাদী আমেরিকা। চলছে পরীক্ষা। ছবি: এএফপি।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে গেম চেঞ্জার বলতে নারাজ করোনা-চিকিৎসায় যুক্ত থাকা জনস্বাস্থ্য বিশেষক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীও। তাঁর মতে, ‘‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কতটা কাজ করবে তা আমরা নিজেরাই জানি না। কন্ট্রোলড ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হলে তা জানা সম্ভবও নয়। বহু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরেও রোগ থেকে গিয়েছে, কোথাও সেরেওছে। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স মার্চেই এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনা মোকাবিলায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আমাদের দেশেও এর প্রয়োগ চলছে। এটা আদৌ এখানে কাজ দিচ্ছে কি না তা বলার মতো সময় এখনও আসেনি।’’

এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কী?

সুবর্ণবাবুর কথায়, ‘‘ক্লোরোকুইন ফসফেট ম্যালেরিয়া সারানোর ওষুধ। সিঙ্কোনা গাছ থেকে এর মূল উপাদান পাওয়া যায়। ক্লোরোকুইনের হাইড্রক্সিলেটেড সল্টকে বলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। ভারত সরকার একে প্রোফাইল্যাক্টিক বা রোগ প্রতিরোধে সাহায্যকারী ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করার অনুমোদনও দিয়েছে। তবে এই ওষুধ যে সফল ভাবে কাজ করছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ভারতে কি এটি প্রচুর উৎপন্ন হয়?

বায়োকেমিস্ট্রির গবেষক সৌরভবিকাশ রুদ্রর মতে, এই ওষুধ মূলত ম্যালেরিয়াপ্রবণ দেশগুলোতেই মেলে। ভারত ক্লোরোকুইন তৈরিতে বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্লোরোকুইন উৎপন্ন হয় এখানেই। এর আগে আফ্রিকায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও ওরা এখন ক্লোরোকুইনে ‘রেজিস্ট্যান্ট’ হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ ক্লোরোকুইনের সঙ্গে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ভাব করে নিয়েছে। তাই ক্লোরোকুইনে আর সে ভাবে কাজ হয় না সেখানে। বর্তমানে তাই আফ্রিকা সিঙ্কোনা চাষ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভারতে ছবিটা অন্য। এখানে সিঙ্কোনা চাষ ও ক্লোরোকুইনের উৎপাদন ও জোগান অনেক বেশি। কারণ ম্যালেরিয়াও অনেক বেশি। তাই সারা বিশ্বই ভারতের দিকে তাকিয়ে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জন্য। ভারত ইতিমধ্যেই ১০ কোটি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট ‘ইপকা ল্যাবরেটরিজ’ ও ‘জিডাস ক্যাডিলা’-কে তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে।

তবে চিকিৎসকদের এক শ্রেণি এই ওষুধটিকে মোটেও ‘নিরাপদ’ বলে দেগে দিতে রাজি নন। তাঁদের মতে, এই ওষুধের প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

আরও পড়ুন: খুব বিপদে পড়া দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো হবে: বিদেশমন্ত্রক​

করোনা ঠেকাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে চলছে পরীক্ষা। ছবি: রয়টার্স।

কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর অধিকর্তা অ্যান্টনি ফৌচি একেবারেই এই ওষুধ সুস্থ মানুষকে দেওয়ার পক্ষপাতী নন, জানিয়ছেন, সংশয় আছে আক্রান্তদের বেলাতেও। সম্প্রতি ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “কোভিড-১৯ ঠেকাতে কাজে লাগে জানা গেলেও যত ক্ষণ না কনট্রোলড ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হচ্ছে, নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না এই ওষুধ কতটা কার্যকর। বরং এর নানা রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।”

বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের অভিমত, “এই ওষুধের প্রয়োগ সব শরীরের জন্য নয়। হৃদরোগীদের একটা শ্রেণির ক্ষেত্রে এই ওষুধ ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ নামের হৃদরোগ ডেকে আনে। বেশ কিছু সমস্যা— যেমন সোরিয়াসিস, পরফাইরিয়া, লিভারের অসুখ, অ্যালকোহলিজম ইত্যাদি থাকলে ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় বড় ক্ষতি হতে পারে।’’

‘হু’-এর নির্ধারিত সবচেয়ে নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় ম্যালেরিয়ার কুইনাইন নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার কারণেই ‘নিরাপদ’ হিসেবে ‘হু’ গণ্য করে না।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy