Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Mental Health

mental health: মনের চাবিকাঠি হরমোনে

মনকেমনের কলকাঠি লুকিয়ে আছে কিছু হরমোনের তারতম্যে। কী করে তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৯:১৬
Share: Save:

শরীরের মতো মনও নানা লক্ষণে জানান দেয়, সে ভাল নেই। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামান্য সচেতন হলে এ-ও বোঝা যাবে, মন কেন ভাল নেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্য শরীরের চেয়ে আলাদা কিছুই নয়। শরীরের অনেক নিয়ন্ত্রকের মধ্যে অন্যতম যেমন বিভিন্ন হরমোন, তেমনই কিছু নির্দিষ্ট হরমোনের কমবেশির প্রভাব সরাসরি পড়ে মানসিক স্থিতিতে। সেরোটোনিন, ডোপামিন, নরএপিনেফ্রিনের মতো পরিচিত নামগুলি আদতে মস্তিষ্ক ও শরীরের উপরে কতটা কার্যকর, তা সমস্যায় পড়ার পরে আমরা উপলব্ধি করি। এই কার্যকারিতা খুবই সূক্ষ্ম অথচ প্রভাবশালী। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার।

মনের আয়না

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবীর মুখোপাধ্যায় জানালেন, রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে কিছু উপসর্গ, তার স্থায়িত্ব এবং সেগুলির কম্বিনেশনের ভিত্তিতে ব্রেনে সেরোটোনিন কিংবা ডোপামিন লেভেল কমবেশি হওয়া সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। সেই মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুরু করা হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।

সেই প্রাথমিক উপসর্গগুলি কী কী? যেমন, কারও যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়, অবসন্ন লাগে, কাজের ইচ্ছে চলে যায়, ধরে নেওয়া হয় ব্রেনে ডোপামিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। সেরোটোনিনের নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি। যেমন, হাল ছেড়ে দেওয়া, অপরাধবোধে ভোগা, আত্মহত্যার প্রবণতা... ইত্যাদি উপসর্গ বোঝায় সেরোটোনিনের মাত্রার হেরফের। এর প্রকাশও অনেক বেশি। ঘুমের সাইকল বিঘ্নিত হওয়া, যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়াও এর অন্যতম উপসর্গ। নরএপিনেফ্রিনের ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ বেশি প্রকট। সারা শরীরে ব্যথা বা জ্বালা করা, চিনচিন করার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

যেমন ডোপামিন মোটিভেশন, মনঃসংযোগ, ইমপালসিভিটি বাড়ায়। টিনএজাররা আবেগপ্রবণ হয়, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে সিদ্ধান্ত নেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বিবেচনা বোধ, কিন্তু ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কমে। ডোপামিন এগুলির নিয়ন্ত্রক। ঝিমিয়ে থাকা ব্রেনকে চনমনে করে তোলার জন্য নিকোটিন, ক্যাফিনের সাহায্য নেয় কেউ কেউ, যা স্টিমুলেট করে ডোপামিনের ক্ষরণ।

আমাদের অনেকেরই কোনও কোনও দিন মনে হয়, ‘আজ কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।’ অথবা, খুব মন খারাপ লাগছে। তার মানেই এটিকে অবসাদের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত নয়। যদি সেই মনোভাব দু’সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, সঙ্গে পাল্টে যায় শরীর-মনের আরও কিছু ব্যবহার— তবেই মনে করা হবে, সেই ব্যক্তি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এবং এর নেপথ্যে রয়েছে কিছু হরমোনের তারতম্য।

রোগের দাওয়াই

মনের অসুখের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই উপসর্গ দেখে, তার প্রকৃতি অনুধাবন করে তবেই হাইপোথিসিসে যান চিকিৎসকেরা। উপসর্গগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রকট হলে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার বিভিন্ন লক্ষণ যোগবিয়োগ করেও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সাবজেক্টিভ, অর্থাৎ চিকিৎসকের ব্যাখ্যা। এ প্রসঙ্গে ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সাধারণত লক্ষণ দেখে ঠিক করা হয়, চিকিৎসার প্রাথমিক এজেন্ট কী হবে। যেমন এসএসআরআই (সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর) এক ধরনের পরিচিত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, যা সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ানোর সহায়ক। যদি দেখা যায়, উপসর্গ খুব বেশি প্রকট, তখন এসএনআরআই (সেরোটোনিন-নরএপিনেফ্রিন রিআপটেক ইনহিবিটর) দেওয়া হয়, যা সেরোটোনিনও বাড়ায়, নরএপিনেফ্রিনও। রোগীর সিমটম প্রোফাইল দেখে চিকিৎসা করা হয়।’’

হরমোনের মাত্রা না মেপেও বিশেষজ্ঞদের পক্ষে তা নির্ধারণ ও চিকিৎসা করা সম্ভব। কারণ, চিকিৎসার দীর্ঘ ইতিহাসে এগুলি প্রমাণিত। এর নির্ণায়কগুলির বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডা. মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পুরোটাই আন্দাজে করা হয়, এমনটা নয়। এই প্যারামিটারগুলি একাধিক ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে স্বীকৃত। নিউরো-ইমেজিং এখন খুব অ্যাডভান্সড পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ব্রেনের কোন অংশে, কতখানি কাজ করছে সেরোটোনিন বা ডোপামিন, সেটা পরীক্ষা করে দেখার উপায়ও রয়েছে। কিন্তু তার সূক্ষ্মতা এতটাই যে, নির্ভুল এবং অত্যাধুনিক এই পরীক্ষা বহু খরচসাপেক্ষ। অ্যাভেলেবেলিটিও কম। প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে তাই সেটার প্রয়োগ অবাস্তব হয়ে যাবে। তাই গ্রোথ হরমোন, সেক্স হরমোনের মতো অন্য অনেক হরমোনের স্ক্রিনিং করা হলেও সেরোটোনিন, ডোপামিনের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হয় না।’’

ভাল আছি ভাল থেকো

সব অসুখের মতোই মনের অসুখেরও মাইল্ড, মডারেট, সিভিয়র— এই তিনটি প্রধান ভাগ হয়। শুধু ওষুধেই নয়, জীবনযাত্রার ধরন ও খাদ্যাভ্যাস পাল্টেও এই হরমোনের ব্যালান্স রাখা সম্ভব। তবে সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী। যেমন, কলার মতো ফল সেরোটোনিনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যে রোগী নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, সামাজিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে অসুবিধের সম্মুখীন হচ্ছে, নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা বাড়ছে— তার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য ওষুধই কার্যকর।

হরমোনের ওষুধ খেলেই বমি, হাত-পা কাঁপা-সহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে, এমন ধারণা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অচল। আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে পুরোটাই মনিটর করে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তাই শরীরের মতো মনখারাপও বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে দ্বিধা না করে পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy