Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Clay artists

clay modelling: আদুরে সব

পেঁচা, সিংহ, দুর্গা থেকে শুরু করে কত কী তৈরি করা যায় মাটি দিয়ে। প্রয়োজন একটু ধৈর্য আর অনেকটা ইচ্ছেশক্তি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

সাত বছর ধরে মাটির পুতুল বানিয়ে চলেছেন মুর্শিদাবাদের লালবাগ অঞ্চলের বাসিন্দা তুহিন সেনগুপ্ত। বয়স সত্তরের দোরগোড়ায়। পেশা থেকে অবসর নেওয়ার পরে বাড়িতে বসেই সময় কাটত তাঁর। কিন্তু মন ভাল লাগত না। তার মধ্যেই শরীরে বাসা বাঁধে কর্কট রোগ। ফলে ক্রমশ হতাশা ঘিরে ধরে তাঁকে। তুহিন বললেন, ‘‘বছর দশেক আগে গালের ভিতরে ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসা চলছে ক্যানসারের। রেডিয়েশন চলত। মন মেজাজ একদম ভাল থাকত না। হতাশা কাটাতেই মাটি তুলে নিই হাতে। পুতুল গড়তে শুরু করি। ধীরে ধীরে হতাশা কেটে গেল।’’ আর এখন ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনে জয়লাভ করেছেন তিনি। তবে তার কৃতিত্ব তিনি এই পুতুলগুলোকেই দিতে চান। নিজের সৃজনশীলতাই তাঁকে আলোর পথ দেখিয়েছে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কিন্তু কোনও দিন যাঁর পুতুল তৈরির প্রশিক্ষণ নেই, হঠাৎ পুতুল তৈরির ধারণা পেলেন কী ভাবে?

পুতুল গড়া শুরু

আঁকাজোকার শখ তো ছিলই তুহিনের। তার উপরে বাড়ির কাছেই ঠাকুর তৈরির স্টুডিয়ো। ‘‘সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম অবসরে। দেখতাম, কী সুন্দর হাতের জাদুতে একের পর এক মূর্তি তৈরি করে ফেলেন তাঁরা। ওঁদের হাতের কাজ দেখেই ইচ্ছে করল কয়েকটা মূর্তি যদি আমিও বানাতে পারি।’’ সেখান থেকেই ঠাকুর তৈরির মাটি এনে কাজ শুরু করলেন। কোনও দিন এই কাজ শেখেননি বলে গোড়ার দিকে একটু অসুবিধে হত। কোনও ছাঁচও ব্যবহার করেন না তিনি। হাত দিয়েই কারুকাজ করতেন মূর্তিতে। ক্রমে হাতই হয়ে উঠল পুতুল তৈরির ছাঁচ। হয়তো একটা ছোট পেঁচা তৈরি করলেন, পেঁচার বুকের কাছে ছাপ তৈরি করতে কাঠি ব্যবহার করতেন। আবার কুকুর বা অন্য পশুপাখি বানালে তাদের চোখ কী করে করবেন? ভাবতে ভাবতে পেনের রিফিলের পিছন দিকটা দিয়ে অক্ষিকোটর তৈরি করে ফেলতেন। তুলির পিছন দিক দিয়েও কারুকাজ করতেন। সরু থেকে মোটা তুলি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। ঘরোয়া জিনিস দিয়েই গড়ে ফেলতেন এক-এক রকম পুতুল। পরে ক্লে মডেল তৈরির যে টুল সেট কিনতে পাওয়া যায়, সে সবের ব্যবহার শুরু করেন। ফলে পেঁচার কান বা পশুপাখির অবয়ব তৈরিতে সুবিধে হল।

এঁটেল মাটি ভাল বেশি

মাটির বিষয়টি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তুহিন বললেন, ‘‘আগে বোলপুর যেতাম, সেখানে সারা দিন ঘুরে ফেরার সময়ে হলুদ মাটি নিয়ে আসতাম। যাঁরা বালি বিক্রি করে, তাঁদের কাছ থেকে কালো মাটি কিনতাম। এতেও খুব ভাল পুতুল হয়। তবে সেই মাটি ভাল করে ধুয়ে বালি আলাদা করে নিতে হবে। প্রথম দিকে এমন নানা রকমের মাটি দিয়ে পুতুল গড়তাম। পরে দেখতাম, কিছু পুতুল ভেঙে যেতে লাগল। এঁটেল মাটিতে পুতুল ভাল তৈরি হয়। খুব মোলায়েম থাকায় তা গড়া যায় সহজে, পরে পোড়ালেও তা ভাঙে না। পরের দিকে বন্ধুবান্ধবকে দিয়ে গঙ্গার অন্য পাড়ে রাঢ় অঞ্চলের মাটি আনাতে শুরু করলাম। এই মাটিতেও খুব ভাল পুতুল তৈরি হয়।’’ তবে পুতুল তৈরির সময়েই জল দিয়ে তার গা মসৃণ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোথাও উঁচু-নীচু বা এবড়োখেবড়ো ভাব যেন না থাকে!

ফাইনাল টাচ

পশুপাখির অবয়ব বা মূর্তি দেখেই তিনি বানান পুতুল। যেমন গণেশজননীর অনুপ্রেরণায় পুতুল তৈরি করেছেন। পেঁচা, ঘোড়ার পাশাপাশি চশমা বা কলম রাখার স্ট্যান্ডও তৈরি করেছেন হাতে। পুতুল তৈরির পরে তা শোকানোও কিন্তু সময়সাপেক্ষ। পুতুলগুলো রোদে দিয়েই শোকান তিনি। চার দিন থেকে প্রায় ১ সপ্তাহ লাগে পুতুলগুলো ভাল করে শোকাতে। বর্ষায় আরও বেশি দিন লাগে। কিছু পুতুল পোড়ানোও হয়। পোড়ালে পুতুলের রং আসে টেরাকোটার মতো। পুতুল মজবুতও হয় বেশি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কিছু মাটি দিয়ে তৈরি পুতুল পোড়ালে ভেঙে যায়। মাটি বেশি ছিদ্রযুক্ত হলে তা কিন্তু পোড়ানো যাবে না।

সবশেষে পুতুলের উপরে পালিশ বা রং করার পালা। মাটির রং রাখতে চাইলে ভার্নিশ করে নিতে পারেন। আবার কালো, খয়েরি, লাল পালিশ করতে পারেন। এতে পুতুল যেমন দেখতে ভাল লাগে, তেমন টেকেও বেশি দিন।

বয়স যত এগোচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুতুল তৈরি। বয়সের কথা ভেবে বাড়ি থেকে বাধা এলেও সে দিকে তাঁর হুঁশ নেই। পুতুল তৈরির নেশায় রোজই তিন-চার ঘণ্টা কেটে যায় মাটি নিয়ে। মৃৎপুত্তলিকায় ভরে উঠছে তাঁর বাড়ি। কিছু উঁকি দেয় বইয়ের তাক থেকে বা জানালার পাশ থেকে আর কিছু পুতুল আবার শোভা পায় বন্ধুবান্ধবের বাড়ির অন্দরসাজে। লোকে যতই পুতুল বলুক, ওরা এখন পরিবারের সদস্য, তুহিনের আপনজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Clay artists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy