ফিরাকি লেহঙ্গা (বাঁ-দিকে) এবং তাহিরা লেহঙ্গা।
ফিরাকি লেহঙ্গা (ছবিতে বাঁ-দিকে): হালকা গোল্ডেন টিসুর লেহঙ্গার সঙ্গে রয়েছে দু’টি দোপাট্টা। লেহঙ্গার বহর জুড়ে গোটা পাত্তি এমবেলিশমেন্ট। রয়েছে সুতো, মুক্তো, জারদৌসি, সিকুইন এবং দানার কাজ।
তাহিরা লেহঙ্গা: লাল ছাড়া বিয়ে যদি অসম্পূর্ণ লাগে, তা হলে বেছে নেওয়া যেতে পারে এই লেহঙ্গা। লেহঙ্গা এখানে বেরি শোরবে শেডের। গোলাপি এবং লাল মেশানো এই রং নজর কাড়বে বইকি! গোটা পাত্তি, সুতো, মুক্তো, জারদৌসি, সিকুইনের কাজে তাহিরা লেহঙ্গা অনন্যসাধারণ
নববধূর সাজ মানেই তাতে যেন লালের আধিক্য। তবুও যেন কোথাও তা অতিরিক্ত মনে হয় না। কিন্তু রং বদলানোই তো দস্তুর। জীবনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় মানুষের পছন্দ-অপছন্দ। তাই এখনকার পরিণীতারা সাজছেন এক এক রকম ভাবে। বিয়ের লাল রঙের একাধিপত্যকে ভেঙে দিয়ে তুলে নিচ্ছেন ব্যক্তিগত পছন্দের রং। আর সেখানেই স্বতন্ত্র হয়ে উঠছেন আজকের নারী। সম্প্রতি দ্য ওয়েস্টিনে একটি ফ্যাশন শোয়ে নিজের ব্রাইডাল কালেকশন তুলে ধরতে এসেছিলেন সেলিব্রিটি ফ্যাশন ডিজ়াইনার অনিতা ডোংরে। সেখানেই জানালেন আধুনিক নববধূর বদলে যাওয়া পছন্দের কথা।
রাজস্থানে বড় হয়ে ওঠার সুবাদে খুব ছোটবেলা থেকেই অনিতার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রাজস্থানি লোকগাথা, সেখানকার মানুষদের পোশাক-আসাক, তা পরার ধরন এবং সাজ। তাঁর সাম্প্রতিক ব্রাইডাল কালেকশনেরও নাম ‘জয়পুর লাভ’। পিঙ্ক সিটি নামে পরিচিত জয়পুর আদতেই বড় সুন্দর, স্নিগ্ধ। আর সেই স্নিগ্ধতাকে তুলে ধরতে অনিতার নববধূরা সেজে উঠেছেন গোলাপির নানা ধরনের শেডে। ‘‘যাঁরা সাবেক ঘরানা পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে আজও লাল পছন্দ। কিন্তু বাকিরা? কেউ গোল্ডেন, কেউ সিলভার, কেউ প্যাস্টেল শেড, কেউ তো আবার সাদা রংও বেছে নিচ্ছেন বিশেষ দিনটির জন্য,’’ বললেন অনিতা।
বলিউডের বড় বড় তারকার বিয়ে থেকে শুরু করে গোটা ভারতের নানা অঞ্চলের সাধারণ মধ্যবিত্তের বিয়েতেও অনিতা তৈরি করছেন পোশাক। এ দেশে পোশাক বিক্রির নিরিখে কিন্তু অনিতা ডোংরের নাম একেবারে উপরের দিকে থাকবে। এক দিকে তাঁর কিছু পোশাক যেমন মধ্যবিত্তের নাগালে, তেমনই রয়েছে দামি কুতুর আইটেমও। অনিতার অবশ্য কম দামে পোশাক তৈরির একটা বিশেষ কারণ রয়েছে। ‘‘ফ্যাশন শব্দটা শুধু একটি বিশেষ শ্রেণির সাধ্যের মধ্যেই থাকুক, এটা কখনও চাইনি। বরং সকলে যাতে সাধ্যমতো পোশাক বেছে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে পারে, সেটাই আমার লক্ষ্য। তাই অ্যান্ড, গ্লোবাল দেসির মতো লেবেল তৈরি করা,’’ বলছেন অনিতা।
সেলিব্রিটি ফ্যাশন ডিজ়াইনার অনিতা ডোংরে
অনিতার পোশাকে বরাবর থাকে প্যাস্টেল শেডের ছোঁয়া। চোখধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য নয়, বরং মন শান্ত করে দেওয়া সে সব রং। ক্রিম, পিঙ্ক, মিউটেড ব্লু, পেল গ্রিনের নানা শেডের পাশাপাশি আছে ওয়াইন রং। ব্রাইডাল কালেকশনে তিনি হালকা গোলাপি থেকে শুরু করে উজ্জ্বল রানি রঙের পোশাক তৈরি করেছেন। রয়েছে ভেলভেটের এমারেল্ড গ্রিন, গাঢ় মেরুনের কয়েকটি কাজ। তবে সবচেয়ে নজর কেড়েছে পোশাকের জমিতে সূক্ষ্ম জারদৌসি এমব্রয়ডারি ও নানা ধরনের এমবেলিশমেন্ট। শাড়ি বা লেহঙ্গার দোসর হয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজের সিল্কের বটুয়া।
ভারালি সেট: এমারেল্ড গ্রিনের শরারা ভেলভেটের ফ্যাব্রিকে তৈরি। সেট জুড়ে রয়েছে এমব্রয়ডারি। ডিপ ভি-লাইন গলার সঙ্গে মখমলি দোপাট্টা সামঞ্জস্য তৈরি করেছে। তবে দোপাট্টা নেওয়া হয়েছে আলতো ভাবে দু’হাতে জড়িয়ে। নেকলাইন ও গলার কাটিং এখানে মূল আকর্ষণ। (ডান দিকে) নয়না লেহঙ্গা: সাবেক লাল তো নয়ই, আবার ইদানীং কালের গোল্ডেন কিংবা সিলভারও নয়। প্যাস্টেল শেডের এই লেহঙ্গার রং খানিকটা ব্লাশ টোনের। ফাইন সিল্ক দিয়ে তৈরি লেহঙ্গায় দু’ধরনের রঙের কাজ। গোটা পাত্তি, জরি, মুক্তো ছাড়াও আছে রেশম ও জারদৌসি এমব্রয়ডারি
নানা ধরনের প্যাস্টেল শেড নিয়ে কাজ করলেও অনিতার ব্যক্তিগত পছন্দ সাদা রং। তিনি বলছেন, ‘‘এত নিউট্রাল রং... গভীরতাও মন ছুঁয়ে যায়। সাদা নিয়ে যতই কাজ করা হোক না কেন, তা অতিরিক্ত নয়।’’ দেশের নানা প্রান্তে হাতে তৈরি কাজ নিয়ে শুরু করেছেন আলাদা লেবেল ‘গ্রাসরুট’। বাংলার বয়নশিল্পে মুগ্ধ অনিতা বললেন, ‘‘এখানকার মানুষের খুব ছোটখাটো জিনিসের সূক্ষ্মতাকে বুঝতে পারার মন রয়েছে। বাংলার খাদির কাপড় নিয়ে কাজ করতে চাই।’’
কল্পিত শেরওয়ানি (বাঁ-দিকে): জমকালো রং নয়, অথচ হালকা শেডের শেরওয়ানি যাঁদের পছন্দ, তাঁরা বেছে নিতে পারেন গোল্ড এবং ক্রিম টিসুর এই শেরওয়ানি। গোটা শেরওয়ানির জমি জুড়ে রয়েছে নিখুঁত এমব্রয়ডারি। অমৃতা শাড়ি: লেহঙ্গা পরুন বা না পরুন, শাড়ি ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ। হাতে বোনা কনটেম্পোরারি এই শাড়িতে রয়েছে বেনারসির বুনন। স্লিভলেস ব্লাউজ়ের সঙ্গে এমারেল্ড গ্রিন এই শাড়ি যেমন ফ্যাশনেবল, তেমনই আভিজাত্যের পরিচায়ক।
ফ্যাশনে তারকা নয়, অনিতাকে অনুপ্রাণিত করে মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ। ‘‘রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামে এমন মেয়ে-বৌ আছেন, যাঁদের শাড়ি-লেহঙ্গার রং, ডিজ়াইন আর তা পরার ধরন দেখে তাক লেগে যায়। খুঁজলে বাংলাতেও এমন নারী পাওয়া যাবে। তাঁদের ফ্যাশন সেন্স অসাধারণ,’’ বলছেন অনিতা। আর ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠার মন্ত্র? ‘‘সিম্পলিসিটি,’’ জবাব অনিতার।
ছবি: সন্দীপ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy