পলিগ্রাফ পরীক্ষায় উতরে যাওয়া কি সহজ? ছবি: সংগৃহীত।
‘হাসিনা দিলরুবা’ ছবির একটি দৃশ্য। এক যুবক খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে তাপসী পন্নু অভিনীত চরিত্র ‘রানি’র ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’ করানোর প্রস্তুতি চলছে তদন্তকারী অফিসারদের তত্ত্বাবধানে। পরীক্ষকের সামনে বসার আগে অনুমতি নিয়ে শৌচালয়ে যায় রানি। দেখা যায়, সেখানে গিয়ে ব্যাগ থেকে পিন বার করে পায়ের তলায় ফুটিয়ে দেয় সে। রক্ত বেরোতে শুরু করে। জুতোর আড়ালে ক্ষত লুকিয়ে রানি পলিগ্রাফ পরীক্ষায় বসে। নিজেকে রক্তাক্ত করার করার একটাই উদ্দেশ্যে— পলিগ্রাফ পরীক্ষায় পাশ করে যাওয়া। কিন্তু সত্যিই কি পলিগ্রাফ পরীক্ষায় নিজেকে আড়াল করার কোনও কৌশল রয়েছে?
পলিগ্রাফ পরীক্ষা চলাকালীন অভিযুক্ত যদি মিথ্যে বলেন, তা হলে সাধারণত তাঁর হৃৎস্পন্দনের হার দ্রুত হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, অত্যধিক ঘাম হওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা, ত্বকে বিভিন্ন বদলের মতো নানা পরিবর্তন দেখা যায়। কেউ অসত্য বলছেন কি না, এই দিকগুলিই সেটা বোঝার একমাত্র নির্ণায়ক। এখানেই একটা প্রশ্ন আসে, যদি কেউ ধরা দিতে না চান, তা হলে নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোনও কৌশল কি আছে? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, ‘‘সেটা খুব সহজ নয়। তবে আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অসত্য বলেন, তা হলে তা ধরা পড়বে কি না, সেটা একটা ভেবে দেখার বিষয়।’’
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার তদন্তভার গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। তদন্তের স্বার্থেই সিবিআই এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত-সহ কয়েক জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করানোর অনুমতি নিয়েছে আদালত থেকে। সেই তালিকায় রয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষও। শনিবার সন্দীপের পলিগ্রাফ পরীক্ষার কথা। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেই পলিগ্রাফ টেস্ট নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কী এই পরীক্ষা, কী ভাবে করানো হয়, এমন নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে অনেকেরই মনে হয়েছে, আদৌ কি এই পরীক্ষা তদন্তে কোনও নতুন দিক খুলে দিতে পারে? অভিযুক্ত কি কোনও ভাবে এই পরীক্ষার ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে পারেন? মনোরোগ চিকিৎসক কৌস্তভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিটি প্রশ্ন তিন বার করে করা হয়। অভিযুক্ত উত্তরে হ্যাঁ এবং না বলেন। যদি তিন বারই একই উত্তর আসে, তা হলে বোঝা যায় যে, তিনি মিথ্যে বলছেন না। আর যদি উত্তরে অসঙ্গতি থাকে, তখনই মনিটরে অভিযুক্তের নানা শারীরিক পরিবর্তন ফুটে ওঠে। তবে পলিগ্রাফ টেস্টের ক্ষেত্রে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলি নির্ণায়ক হয়ে ওঠে, সেটা যে সব সময় অসত্য বলার কারণেই হয়, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় ভয়ের কারণেও নাড়িস্পন্দন, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যেতে পারে। মানসিক চাপ থেকে রক্তচাপও বাড়ে। পরীক্ষা চলাকালীন এই শারীরিক বদল আসা মানেই কেউ সত্যি বলছেন না, সেটাও সব সময় নিশ্চিত ভাবে ধরে নেওয়া যায় না। ঠিক সেই কারণেই পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়। আবার কেউ যদি প্রচণ্ড অপরাধমনস্ক হন, মনের কথা প্রকাশ না করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে থাকেন, তা হলে পলিগ্রাফ টেস্ট তদন্তে কাজে আসতে না-ও পারে।’’
এই বিষয়ে সহমত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ সৌম্যজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় এমন হয় যে, সেই মুহূর্তে যা মনে হচ্ছে তারই উত্তর দিচ্ছেন অভিযুক্ত। পরে তদন্ত করে দেখা যায়, আসলে এমন কিছু ঘটেনি। এই কারণেই পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্টের উপর বিশেষ ভরসা করতে চায় না কোর্ট। তবে যেটা হয়, মনের উপর নিয়ন্ত্রণ সব সময় থাকে না। সেই কারণে অনেকেই ধরা পড়ে যান। আবার কেউ যদি এ ব্যাপারে দক্ষ হয়ে থাকেন, তা হলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। কোনওটারই নিশ্চয়তা নেই। অনেকটাই অভিযুক্তের মানসিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পরীক্ষায় সসম্মানে পাশ করে যাওয়ার কোনও কৌশল নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy