প্রতীকী ছবি।
মুক্ত সম্পর্ক। অথবা ‘ওপেন রিলেশনশিপ’। ইংরেজি নামটা বেশি পরিচিত বটে, তবে বাঙালিদের মধ্যে কম দেখা যায় না এমন সমীকরণ। একই সময়ে একাধিক সম্পর্কে থাকা। কোনও রকম রাখঢাক না করে। একের বেশি সম্পর্কে যে জড়াতে পারেন, সে বোঝাপড়া আগে থেকেই থাকে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। এটাই এর শর্ত। সম্পর্কের এমন ধরন কতটা কার্যকর হচ্ছে? জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকছে তো? নাকি অল্পেই জটিল হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি?
বিশ্ব জুড়ে এখন মুক্ত সম্পর্কের জয়জয়কার। খোলামেলা জীবন কাটাতে চান যাঁরা, তেমন অনেকেই এ ধরনের সমীকরণ বেছে নিচ্ছেন। সঙ্গী থাকবে, কিন্তু সে বাঁধনে থাকবে না প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোর। অনেকেরই দাবি, এতে সম্পর্কের মধ্যে থেকেও ভাল ভাবে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকে। গতিবিধি থাকে মুক্ত। কিন্তু প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে বোঝাপড়া নষ্ট হয় না। ফলে সম্পর্কের মেয়াদ বাড়ে।
নেটমাধ্যমেও এখন প্রকাশ্যে লেখা হয় নিজের জীবনে সম্পর্কের পরিস্থিতি। কেউ লেখেন একা, কেউ বিবাহিত। কেউ বলেন একটি সম্পর্কের মধ্যে আছেন। কেউ আবার জানান, মুক্ত সম্পর্কে রয়েছেন। সেই মুক্ত সম্পর্কে থাকার সংখ্যা বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। অন্যান্য সম্পর্কের সংখ্যা যত কমছে, একাধিক প্রেমের সম্পর্কে ঢুকে জীবন স্বচ্ছন্দ করার চেষ্টা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন দেশ-বিদেশের মনোবিদেরা।
প্রেম নিয়ে রক্ষণশীল হওয়ার সময় আর নেই বলেই মনে করে এ প্রজন্মের একটি বড় অংশ। অনেকেই বলে থাকেন, এক-একটি প্রেমের সম্পর্ক এক-এক ধরনের হয়। ফলে একাধিক প্রেম মনে পূর্ণতা আনে বলেই বক্তব্য মুক্ত সম্পর্কে বিশ্বাসীদের। কিন্তু এতে কি মনোমালিন্যের জায়গা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে না? মুক্ত সম্পর্ক সুন্দর হতে পারে তো? এ প্রশ্ন এখনও রয়েছে অনেকের মনে।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন অনেকের সঙ্গেই কথা বলেন, যাঁরা মুক্ত সম্পর্কে থেকেছেন কিংবা থাকছেন। ফলে এই ধাঁচের সম্পর্কের সুবিধাজনক দিকের পাশাপাশি কিছু অসুবিধার কথাও তিনি উল্লেখ করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সম্পর্কে যে দু’জন রয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিস্থিতিটি একই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুভব করছেন না তাঁরা। ফলে এক জন ভাল থাকলেও, মুক্ত সম্পর্ক খারাপ থাকার কারণ হচ্ছে অপর জনের ক্ষেত্রে।’’
তবে কি সম্পর্কের এই ধাঁচের প্রতি ভরসা নেই তাঁর? তেমনটাও বলছেন না মনোবিদ। বরং তাঁর বক্তব্য, বুঝেশুনে ঢুকতে হবে সম্পর্কে। যাতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া নষ্ট না হয়। যেমন অনুত্তমা মনে করেন, মুক্ত সম্পর্কের প্রথম শর্ত হল, দু’জনকেই গোটা বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এবং সম্মত হতে হবে। কিছুটা বলা হল, আর বাকিটা লুকনো থাকল— এমনটা এ ক্ষেত্রে চলে না। মুক্ত সম্পর্কের শর্তে কোনও রাখঢাক থাকলে মুশকিল।
তার মানে কি তিন জনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে, সকলকে সব বিষয়ে জানাতে হবে? মানে কার সঙ্গে কোন কথা বলছেন, বাকি দু’জনকেও তা বলতে হবে?
মোটেই নয়। বরং উল্টোটাই। মুক্ত সম্পর্কে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঙ্গীর জীবন সম্পর্কে কোন কথা জানতে চাওয়া যাবে, আর কোনটা যাবে না, খেয়াল রাখা দরকার। প্রত্যেক সঙ্গীকে সব কথা বলা বাধ্যতামূলক না-ই হতে পারে। তবে এক ধরনের পারস্পরিক স্বচ্ছতা ও বোঝাপড়া থাকলে তবেই মুক্ত সম্পর্ক সাধারণত দু’জনকেই সমান ভাবে ভাল রাখতে পারে বলে মত অনুত্তমার।
খেয়াল রাখতে হবে আরও একটি দিকে। একাধিক সম্পর্কের মধ্যেও কোনটি প্রাথমিক গুরুত্ব পাবে, তা পরিষ্কার থাকা দরকার। এবং দু’তরফেরই সে বিষয়ে সম্মত হতে হবে। তবেই জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব। দু’জনের জীবনের অন্যান্য সঙ্গীর উপস্থিতির সংখ্যা এবং সময়ে যদি বেশি তারতম্য থাকে, তা হলেও কিন্তু অনেক সময়ে মুক্ত সম্পর্কের মধ্যে বহু অপ্রাপ্তির আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy