শাকিরা (বাঁ দিকে) ও ডেভিড বেকহ্যামের এই ট্যাটুতেই মাত গোটা দুনিয়া।
১৬ বছরের স্বপ্নিল ডেভিড বেকহ্যামের ফ্যান। ১৭ বছরের রিয়ামা আবার ক্রিকেট পাগল। ব্র্যান্ডন মাকালামকে যেন চোখে হারায়। বুয়া আবার শাকিরার ভিডিওর কালেকশনে রেকর্ড করতে চায়। চেস্টার বেনিংটনের গান মোবাইলে ভর্তি করে রেখেছে বিপাশা। জলপাইগুড়ি শহরের এমন ‘ফ্যান’দের এক সূত্রে বেঁধে দিচ্ছেন কয়েক জন শিল্পী। সূত্র একটাই— ‘ট্যাটু’। কারণ, কিংবদন্তী ফুটবলার থেকে কিউয়ি অধিনায়ক, পপ তারকা থেকে রকস্টার— এঁদের শরীরে থাকা ট্যাটু চোখ ধাঁধিয়ে দেয় ফ্যানদের। এখন ওই ট্যাটুই অন্যতম ‘স্টাইল সিম্বল’।
ফুটবল আইকন বা পপ তারকাদের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকার উৎসাহী তরুণ-তরুণীদের পছন্দের বিষয় হয়ে উঠেছে এই ট্যাটু। ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি ছাড়াও দার্জিলিং, গ্যাংটক এমনকী অসম থেকেও ট্যাটুর টানে এই শহরে আসছেন অনেকে।
বছর পাঁচেক ধরে জলপাইগুড়িতে শুরু হয়েছে ট্যাটুর ব্যবসা। ধীরে হলেও তার চাহিদা বেড়ে চলেছে। শুরুতে তিন চারটে পার্লারে ওই ট্যাটু আঁকা হত। এখন রমরমিয়ে চলছে ট্যাটুর ব্যাবসা। ট্যাটুর টানে শহরের তরুণ-তরুণীদের আনাগোনায় ওই পার্লারগুলি হয়ে উঠেছে ‘ফ্যাশন ট্রেন্ড পয়েন্ট’।
ট্যাটু স্টুডিওতে রং-বেরঙের আলো, নানা ভাবে সাজানো আকর্ষণীয় দেওয়ালে ছবি, নানা ধরনের মূর্তি। সঙ্গে নাগাড়ে বাজতে থাকা ইংরেজি রক-পপ গানের পরিবেশ মনে করায় পশ্চিমী সংস্কতিকে। এক জন ট্যাটু শিল্পী তথা ব্যবসায়ী স্বরূপ দত্তের কথায়, ‘‘আমরা দীর্ঘ ৫বছর ধরে এই ব্যাবসায় রয়েছি। প্রথমে যখন ব্যাবসা শুরু করি তখন শহরে ট্যাটু নিয়ে এতটা আগ্রহ ছিল না। এই শহরের তরুণ প্রজন্মের চিন্তাধারায় তখনও ট্যাটু জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আজ চিত্রটা অনেক বদলেছে। ট্যাটু নিয়ে উৎসাহ বেড়েই চলেছে। কমবয়সী তরুণ-তরুণীরা তো বটেই মাঝবয়সীরা এমনকী গৃহবধূরাও অনেকে এখন ট্যাটু করাতে প্রচণ্ড আগ্রহী।
কেবল ট্যাটুই নয় ‘পিয়ার্সিং’ অর্থাৎ ঠোটে, জিভে দুল পড়াও হয়ে উঠেছে ছেলেদের নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড। এর চল তরুণীদের মধ্যেও বাড়ছে।
হাতে, পায়ে শরীরে নানা নকশা রং-বেরঙের ট্যাটু এঁকে প্রিয়জনের নাম লেখার চল এতদিন ছিলই। তাতে নতুন সংযোজন ‘আন্ডার লিপ ট্যাটু। তাতে ঠোঁটের ভেতর ট্যাটু এঁকে প্রিয়জনের নাম লেখা হয়। কলেজের এক ছাত্রীর কথায়, ট্যাটু অবশ্যই এখন একটি অন্যতম ‘ফ্যাশন টুল’। নিজের প্রিয়জনের নাম শরীরের কোথাও লিখে রাখতে একটু যদি ব্যাথা হয়, তাতে পরোয়া নেই।’’ জানা গিয়েছে, গত ৫ বছরে জলপাইগুড়ি শহরে ট্যাটুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০শতাংশ। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ করে ১৮ থেকে ২০বছর বয়সীদের মধ্যে এর চাহিদা প্রায় ৪২শতাংশ। ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে চাহিদা ৫০ শতাংশ ছুঁয়েছে। শহরের মাঝ বয়সীদের মধ্যেও এখন ট্যাটুর চাহিদা ২০শতাংশের কাছাকাছি।
কোথাও ডিজাইন আবার কোথাও ট্যাটু আঁকতে সময় কতক্ষণ তার ভিত্তিতে দাম ঠিক হচ্ছে। আবার অনেক স্টুডিওতে ট্যাটু করতে খরচ ঠিক হয় সেটা কত ইঞ্চির তার ভিত্তিতে। কোথাও হাজার টাকা দিলে, কোথাও ৫০০ টাকা ফেললেই মিলছে শরীরে ট্যাটুতে এঁকে প্রিয়জনের নাম লেখার সুযোগ। জলপাইগুড়ি শহরে বেশকিছু ‘রকব্যান্ড’ –এর সঙ্গে নাচের স্কুল রয়েছে। তাতেও ট্যাটুর চাহিদা বেড়েছে।
চাহিদা বাড়লেও রয়েছে কিছু দায়বদ্ধতাও। ১৮ বছরের নীচে কেউ ট্যাটু করতে এলে প্রয়োজন হচ্ছে অভিভাবকদের অনুমতির বিষয়টিও। নির্দিষ্ট একটি ফর্মে অভিভাবকরা সই করে দিলে তবেই কচিকাঁচাদের ট্যাটু করা হচ্ছে। ট্যাটু শিল্পীদের কথায়, ‘‘এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তা আমরা মানতে বাধ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy