বার্ড ফ্লু হলে ডিম বা চিকেন খাওয়া বন্ধ করতে হবে, এমন কোনও বিধি নিষেধ নেই। ছবি—শাটারস্টক
নভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমতে না কমতেই দেশ জুড়ে পাখির মড়ক নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল। আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মারা পড়ার কারণ এইচ-৫ এন-১ ভাইরাসের সংক্রমণ, যার প্রচলিত নাম ‘বার্ড ফ্লু’। এই ফ্লু ভাইরাসের নানান স্ট্রেনের মধ্যে এ বছর আমাদের দেশে এইচ-৫ এন-১ ভাইরাসের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে। অনেকেই ভয় পেয়ে ডিম, চিকেন খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন, অনেকে আবার পোষা বিদেশি পাখিদের খাঁচা খুলে উড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।
তা হলে আবার কি এক মহামারি আসতে চলেছে! সেই আশঙ্কাকেউড়িয়ে দিলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়। কাক, শালিখ, চড়াই বা ঘুঘুর মতো পড়শি পাখিদের থেকে বার্ড ফ্লু ছড়ানোর কোনও আশঙ্কাই নেই। বরং যাঁরা মুরগির খামারে কাজ করেন ও মাংস কাটেন তাঁদের ক্ষেত্রে একটা ভয় থেকেই যায়, যদি মুরগির অসুখ থাকে তবেই। যোগীরাজ জানালেন, মুরগি বা হাঁসের খামার থেকে বাতাসে ভেসে রোগ ছড়ায় না। সংক্রমিত পাখির মাংস থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন যে, আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত পাখির থেকে মানুষে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। যাঁরা মাংস কাটেন বা সরাসরি কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে আছেন, তাঁদের মাস্ক ও গ্লাভস পরা বা হাত সাবান দিয়ে ধোয়া বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম মেনে চললে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। মানুষের বার্ড ফ্লু হলে একজনের থেকে আর একজনের সংক্রমণের সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ বলে ভরসা দিলেন দেবকিশোর গুপ্ত। তবে কোনও অবস্থাতেই সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা ঠিক নয়। যদিও এই ফ্লু একজন সংক্রমিত মানুষের থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা জানা যায়নি। কিন্তু আর পাঁচটা ফ্লু-এর মতো এই সম্ভাবনা যে একেবারে নেই তাও জোর দিয়ে বলা যায় না, বললেন যোগীরাজ। বার্ড ফ্লু হলে ডিম বা চিকেন খাওয়া বন্ধ করতে হবে, এমন কোনও বিধি নিষেধ নেই বলে দুই চিকিৎসকেরই অভিমত। তবে কাঁচা মাংস আলাদা জায়গায় ভাল করে ধুয়ে নিয়ে সুসিদ্ধ করে তবেই খাওয়া উচিত, ডিমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হাফ বয়েল বা আধ কাঁচা ডিম মাংস কোনও অবস্থাতেই খাওয়া উচিত নয়।
বার্ড ফ্লুর লক্ষণ
আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের মতোই এই অসুখের উপসর্গ। যোগীরাজ রায় জানালেন, অনেক সময় পাখির এই সংক্রমণ মানুষের শরীরে মারাত্মক উপসর্গ ডেকে আনতে পারে। অ্যাভিয়ান ফ্লু বা বার্ড ফ্লু হলে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও বমি ভাব এবং খাবারে অনিচ্ছার মতো সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর পর ক্রমশ সমস্যা কমতে শুরু করে। কিন্তু অনেক সময় ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ভয়ানক কাশি ও শ্বাসকষ্ট এবং এআরডিএস অর্থাৎ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেসের ঝুঁকি থাকে। এর থেকে সেপসিস ও মাল্টিঅরগ্যান ফেলিওরের সম্ভাবনাও থাকে। তবে জ্বর সর্দি মানেই বার্ড ফ্লু, এ রকমটা মনে করে আতঙ্কিত হতে মানা করলেন দেবকিশোর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, ১৯৯৭ সালে প্রথম মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে। সেই সময় প্রায় ৬০ শতাংশ সংক্রমিতের মৃত্যু হয়। সেই জন্যেই অসুখটি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিরোধের উপায়
যে কোনও ফ্লুর মতোই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একমাত্র উপায়। কোভিড ১৯-এর জেরে আমাদের মাস্ক পরার অভ্যাসকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে পারলে যে কোনও ফ্লু-র সংক্রমণ প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ছাড়া খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে নেওয়ার অভ্যাস করা জরুরি। মাংস বা ডিম খুব ভাল করে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কাঁচা মাংস খুব ভাল করে ধুয়ে নিয়ে হাত সাবান দিয়ে ধোয়া দরকার। মাংস ধোয়ার সময় কাছাকাছি যেন কোনও খাবার না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অকারণে আতঙ্কিত হবেন না, তবে সতর্ক থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন: ঘুমিয়ে ওজন কমানোর থেরাপি! জেনে নিন এর বিপদ
আরও পড়ুন : কোভিড পরিস্থিতিতে বেড়ানো, কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy