—প্রতীকী ছবি।
কখনও আনন্দে উৎফুল্ল, কখনও আবার অবসাদে আচ্ছন্ন। মন এতটাই খারাপ যে সপ্তাহ কেটে যায়, বিছানা ছেড়ে ওঠা মুশকিল হয়ে যায় রোগীর। মনের এই জটিল অসুখ, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণ এমনটাই। এর কিছু চিকিৎসাও আছে, তবে তা সীমিত এবং দীর্ঘমেয়াদি। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের মানসিক স্থিতি ফেরাতে প্রধান ওষুধ লিথিয়াম। সমস্যা হল, এটি রোগ নিরাময়ে কিছু ক্ষেত্রে কাজ দিলেও, ঠিক কী ভাবে কাজ করে, তা অজানা ছিল। এতে কোন রোগীর ক্ষেত্রে লিথিয়াম কাজ করে, আর কার ক্ষেত্রে নয়, সেটা বুঝতে সময় লেগে যায়। নতুন একটি গবেষণায় সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিকাল সায়েন্সেস’ (এনসিবিএস)-এর এক দল গবেষক। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘লায়েফ সায়েন্স অ্যালায়েন্স’ নামক জার্নালে।
এনসিবিএস-র ‘রোহিনী নিলেকানি সেন্টার ফর ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড’-এর গবেষণাপত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, মস্তিষ্ক-কোষে লিথিয়াম কী ভাবে কাজ করে। সেখানকার অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঘু পারিনজাত জানাচ্ছেন, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে ‘মুড স্টেবিলাইজ়ার’ ভীষণ জরুরি। এটি মস্তিষ্কের অতিসক্রিয়তাকে বা রোগীর মানসিক অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আর, এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘মুড স্টেবিলাইজ়ার’ হল লিথিয়াম।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সাধারণত কমবয়সিদের মধ্যেই দেখা দেয়। এই রোগীদের মধ্যে মূলত দু’ধরনের মানসিক অবস্থা ঘুরে-ফিরে দেখা যায়। এক, ‘মেনিয়া’ বা অতিরিক্ত উদ্যমী, দুই, চরম ‘ডিপ্রেশন’ বা অবসাদ। প্রথম ক্ষেত্রে, রোগীর সব কাজেই অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখতে পাওয়া যায়। এতটাই, যে তার জন্য বিপদে পড়তে হতে পারে। কিন্তু সেটা বেশি দিন নয়। কয়েক সপ্তাহ বা এক মাস এমন অবস্থা চলার পরেই দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। রোগীকে গ্রাস করে চরম অবসাদ ও হতাশা। তখন তাঁর কোনও কাজে মন নেই, খিদে নেই। কারও সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করে না, কথা বলতে ইচ্ছে করে না। রোগী হয়তো সাত দিন ধরে বিছানায় শোয়া।
এই পরিস্থিতিতে রোগ ধরা পড়ার পরেই চিকিৎসকেরা মুড স্টেবিলাইজ়ার অর্থাৎ, মানসিক স্থিতি বজায় রাখার জন্য ওষুধ দেন। এর অন্যতম হল লিথিয়ামের প্রয়োগ, যাকে 'গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড' চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয়। ওষুধটি অত্যন্ত সহজলভ্য, এটির দাম কম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই। তাই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য এই ওষুধ অত্যন্ত উপযুক্ত।
কিন্তু এই ওষুধ মস্তিষ্কের কোষের উপরে কী ভাবে কাজ করে, সেটা পরিষ্কার নয়। আরও বড় সমস্যা ওষুধটি সকলের শরীরে কাজ দেয় না। মাত্র এক তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে দেখা যায়। কিন্তু ওষুধটি কাজে দিচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য চিকিৎসকেদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিছু ক্ষেত্রে দেড় মাস বা তার-ও বেশি সময় লেগে যায় লিথিয়ামের প্রভাব বুঝতে। উল্টে ওষুধ কার্যকর না হলে (‘লিথিয়াম নন-রেসপন্ডার’) তার ব্যবহারের পরেও লক্ষণগুলি মাথাচাড়া দিতে পারে। বাড়তে পারে আত্মহত্যার প্রবণতাও।
ঠিক এই জায়গাটিই ভাবিয়েছে গবেষকদের। গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক শঙ্খনীল সাহা
বলেন, “বাইপোলার ডিসঅর্ডারের শিকার রোগীদের মধ্যে লিথিয়াম কাজ না দেওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা একটি বিশেষ (আইপিএসসি) প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট করে রোগীর ‘কর্টেক্স’ (মস্তিষ্কের বহিরাংশের)-এ পাওয়া যায় এমন স্নায়ুকোষ তৈরি করেছি। সেগুলির উপরে ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, কী ভাবে লিথিয়াম কাজ করে।” এই গবেষণাপত্রে তাঁদের দাবি যে, ‘ফসফ্যাটিডাইলিনোসিটল সিগন্যালিং’-এর দ্বারা একটি নির্দিষ্ট লিপিড, পিপ২-এর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে সম্ভবত লিথিয়াম মস্তিষ্কের অতিসক্রিয়তা কমিয়ে তাকে শান্ত করে। শঙ্খনীলের আশা, লিথিয়ামের এই কার্যপদ্ধতি জানা যাওয়ায় ভবিষ্যতে চিকিৎসা শুরুর আগেই বোঝা যাবে, কোন রোগীর ক্ষেত্রে লিথিয়াম কাজ করবে। কার ক্ষেত্রে করবে না। বিকল্প চিকিৎসা খুঁজতে হবে।
এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “মস্তিষ্কের কোষগুলির উপরে লিথিয়াম কী ভাবে কাজ করে, তা পরিষ্কার ভাবে জানা গেলে আগামী দিনে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে।” তবে তাঁর সংযোজন, রোগ এক হলেও বিভিন্ন মানুষের সমস্যা আলাদা, ফলে নিরাময়ের পথও আলাদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy