সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল গড়ানোর মতো সমস্যা যদি চলতেই থাকে, তা হলে সাইনাসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
রাতে ঘুমোতে গেলেই নাক বন্ধ হয়ে আসছে। ঘুম থেকে উঠেও নাক বন্ধ। সারা ক্ষণ মাথা ব্যথা, হাঁচি ও সর্দির সমস্যা যদি লেগেই থাকে, তা হলে সতর্ক হন। সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশি হতেই পারে। কিন্তু সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল গড়ানোর মতো সমস্যা যদি চলতেই থাকে, তা হলে সাইনাসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
সাইনাস কী?
মানুষের মাথার খুলির মধ্যে অনেকগুলি গহ্বর বা ফুটো থাকে। যেমন ধরুন নাকে, কপালে, নাকের ঠিক দু’পাশে। এই গহ্বরগুলিকেই সাইনাস বলে। সাইনাসের আবার অনেক ভাগ আছে। যেমন, ফ্রন্টাল সাইনাস (কপালে), ম্যাক্সিলারি সাইনাস (নাকের দু’পাশে গালে), এটময়েড সাইনাস (চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে) এবং স্ফেনয়েড সাইনাস (চোখের পিছনে)। এদের একত্রে বলা হয় প্যারানেজ়াল সাইনাসেস।
এই গহ্বরগুলির অভ্যন্তর ভাগ অনেকটা নাকের মতোই। ফলে নাকে যেমন মিউকাস থাকে, এই গহ্বরগুলিতেও মিউকাস থাকে। এই প্রত্যেকটি সাইনাসই অস্টিয়ামের সাহায্যে নাসিকাগহ্বরের সঙ্গে যুক্ত। সেগুলি স্বাভাবিক নিয়মেই প্রত্যেক দিন নাসিকা গহ্বর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ বার এই সাইনাসের মিউকাস যদি বেরোতে না পারে, তখনই সমস্যা শুরু হয়। যাকে বলা হয় সাইনাসাইটিস।
রোগের লক্ষণ
যে কোনও অসুখের লক্ষণ বোঝা দরকার। মূলত নাকে সর্দি, হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া, মাথার যন্ত্রণা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ... এগুলিই রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। রোগ বাড়লে জ্বরও আসতে পারে।
মনে রাখবেন
সাইনাসাইটিস বাড়লে মাথা ধরার প্রবণতাও বাড়ে। সর্দি না কমালে কিন্তু মাথায় বাম লাগিয়ে এর থেকে মুক্তি পাবেন না। তবে মনে রাখতে হবে, সাইনাসাইটিস সম্পূর্ণ না সারলেও জীবনযাপনে বদল আনলে এই রোগের দাপট অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়
রাতে ঘুমোতে গেলে অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালাতে হয়। এতে মুখের ভিতরটা শুকিয়ে যায়। এর থেকে মুখেও ইনফেকশন হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
উপশম হবে কী করে
• প্রথমত গরম জলের ভেপার নিতে হবে। জলে নুন বা কিছু মেশানোর দরকার নেই। ঘুম থেকে উঠে জল গরম করে স্টিম নিন।
• এ ছাড়া নাক দিয়ে জল টানতে পারেন। এর জন্য জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তাতে অল্প নুন মিশিয়ে নিন। এই স্টেরাইল স্যালাইন সলিউশন নাক দিয়ে টেনে ছেড়ে দিন। দু’নাকেই এই পদ্ধতিতে জল টানতে হবে এবং ছাড়তে হবে। এতে উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন: কোমর ও উরুর মেদে নাজেহাল? এই ক’টা উপায়েই ঝরবে ফ্যাট
• কিছু ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে ইনট্রানেজ়াল কর্টিকোস্টেরয়েড বা আইএনসি ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে নাকে স্প্রে করা হয়। এই ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। অ্যান্টিহিস্ট্যামিন ওষুধও দেওয়া হয়ে থাকে।
• অনেকেই বাজারচলতি নেজ়াল ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন, যা সাধারণত জ়াইলোমেটাজ়োলিন ড্রপ। কিন্তু এই ধরনের নেজ়াল ড্রপ একটানা সাত দিনের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এই ড্রপের প্যাকেটের গায়েই সতর্কবাণী দেওয়া থাকে। কিন্তু তা চোখ এড়িয়ে যায় অনেকেরই। এই ড্রপে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরে সমস্যা বাড়তে পারে।
রোগনির্ণয়
সাধারণত লাইফস্টাইলে বদল এনেই এই রোগ অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায়। তাতেও যদি সমস্যা না কমে, তখন সিটি স্ক্যান করতে হতে পারে। চিকিৎসক চাইলে এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে নাকে ক্যামেরা ঢুকিয়েও দেখতে পারেন। অনেক সময়ে অ্যালার্জি টেস্টও করতে হতে পারে।
সার্জারি কখন করতে হবে?
জীবনযাপনের ধরন বদলে এবং সতর্ক থাকলে কিন্তু সাইনাসাইটিস কমে যায়। তবে দীর্ঘদিন এই সমস্যা না কমলে তখন সার্জারির শরণাপন্ন হতে হবে। কলকাতায় দু’টি পদ্ধতিতে এই সার্জারি করা হয়।
ফেস বা এফইএসএস, পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি। এই অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর নাক দিয়ে এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে সাইনাসের গহ্বরগুলি বড় করে দেওয়া হয়।
এতে সহজেই মিউকাস নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে।
এ ছাড়া বেলুন সাইনোপ্ল্যাস্টিও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির মতোই নাকের গহ্বর দিয়ে সাইনাসের জায়গায় বেলুন ঢুকিয়ে, তা ফুলিয়ে সেই প্যাসেজটা বড় করে দেওয়া হয়। তবে এই পদ্ধতি একটু খরচসাপেক্ষ।
যে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
• ঠান্ডার সঙ্গে এই অসুখের যোগাযোগ তো আছেই। ঠান্ডায় মিউকাস জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শীত পড়ার আগে থেকেই সাবধান হতে হবে। রাতে বা ভোরবেলা অটো, ট্রেন অথবা বাসে যাতায়াত করলে কান-মাথা-নাক চাদর বা স্কার্ফ দিয়ে ভাল করে মুড়িয়ে নিন।
• কর্মক্ষেত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে, মাঝেমাঝে উঠে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় একটু ঘুরে আসুন। খুব ঠান্ডায় বসে কাজ করতে হলে স্কার্ফ দিয়ে মাথা-কান ঢেকে রাখুন।
• ডাস্ট, পোলেন বা কোনও রকম অ্যালার্জি থাকলে, তা থেকেও কিন্তু সাইনাসাইটিসের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। সে বিষয়েও সচেতন হন।
• অনেকেরই ধারণা, সাঁতারে সাইনাসাইটিসের সমস্যা কমে। সাধারণ জলে সাঁতার কাটলে তা শরীর খুব ভাল রাখে। কিন্তু সুইমিং পুলের ক্লোরিনেটেড জলে সাঁতার কাটলে অনেক সময়ে সাইনাসাইটিস বাড়তে পারে। বিশেষত যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্লোরিনের জলে এই সমস্যা বেড়ে যায়।
জীবনযাপনে একটু বদল আনলেই কিন্তু এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। তবে সমস্যা বাড়লে শুধু নেজ়াল ড্রপে ভরসা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্য: ই এন টি অ্যান্ড এন্ডোস্কোপিক সার্জন ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy