প্রতীকী ছবি।
সন্ধে হলেই ঘুমে চোখ জুড়ে আসে, কিন্তু রাতে আসল ঘুমের সময়টাই শুরু হয় সমস্যা। বারে বারে প্রকৃতির ডাক। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ঘুমের দফারফা। প্রৌঢ়ত্বের এক সাধারণ উপসর্গ। অনেকেই বিশেষ আমল দেন না, কিন্তু ক্রমশ বেড়ে গিয়ে আচমকা বিপদের সম্ভাবনা থাকে। প্রস্টেটের অসুখ পুষে রাখতে মানা করলেন ইউরোলজিস্ট ডা অমিত ঘোষ।
রিটায়ারমেন্টের পরে আয়েশ করে অবসর যাপনের পরিকল্পনা ছিল সুশীল বাবুর। কিন্তু এক বিরক্তিকর সমস্যা মতো রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। অবশেষে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হল। জানা গেল প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে। ওষুধ আর জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে আপাত জব্দ হল প্রস্টেটের অসুখ। তবে নির্দিষ্ট সময় চেক আপ না করালে সমস্যা ফিরে আসতে পারে। এ ছাড়া প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে প্রায় একই উপসর্গ হওয়ায় দ্রুত রোগ ধরা পড়ে।
ব্যাপারটা ঠিক কী
আখরোটের থেকে সামান্য বড় আকৃতির প্রস্টেট গ্রন্থি আদতে একটি মেল রিপ্রোডাক্টিভ গ্ল্যান্ড। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ওজন ৭ থেকে ১৬ গ্রামের মধ্যে। ইউরিনারি ব্লাডারের ঠিক নিচে ইউরেথ্রা অর্থাৎ মূত্রনালীর চারপাশে থাকে এই গ্রন্থিটি। এর প্রধান কাজ প্রস্টেটিক ফ্লুইড তৈরি করা। ঘন সাদাটে এই ফ্লুইডটি স্পার্ম বা শুক্রাণু বহন করতে সাহায্য করে। সিমেনের ৩০ শতাংশ প্রসটেটিক ফ্লুইড। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। একই সঙ্গে গ্রন্থিটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। প্রথমে গ্ল্যান্ডুলার এলিমেন্টস ও ক্রমশ গ্র্যান্ডুলার নডিউলগুলি বড় হয়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি মূত্রথলির ঠিক নীচে থাকে বলে ব্লাডার আউটলেট অবস্ট্রাকশন শুরু হয়। অন্য দিকে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি ইউরেথ্রা অর্থাৎ মূত্রনালীর চারপাশে ঘিরে থাকায় লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিম্পটম্পস দেখা দেয়। অনেক সময় ম্যালিগন্যান্সি অর্থাৎ ক্যানসারের জন্যেও প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যেতে পারে। তাই সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
আরও পড়ুন: পুরুষদেরও জীবনে আসে ‘মেনোপজ’!
কী অসুবিধা হয়
কয়েক বছর আগেও যে মানুষটি নিশ্ছিদ্র নিদ্রা যেতেন, যার জন্য কুম্ভকর্ণ উপাধি পর্যন্ত পেয়েছিলেন, হঠাতই তাঁর রাতের ঘুম কমে গেল। রাতে কম করেও বার তিন চার বাথরুম দৌড়তে হয়। প্রস্টেটের অসুখের এটাই উপসর্গ। পঞ্চাশ উত্তীর্ণ পুরুষদের প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে গেলে বারে বারে বাথরুমে ছুটতে হয়। প্রস্টেটের অসুখের এটাই প্রাথমিক উপসর্গ। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়া বা বিপিএইচ। আসলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কোষ বাড়তে শুরু করায় ইউরেথ্রার ওপর চাপ পড়ে। অন্য দিকে ব্লাডারের পেশী ক্রমশ মজবুত ও অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ইউরিন যাতে ব্লাডারে কোনওমতেই জমতে না পারে, সেই জন্যে শরীরের মেকানিজম কিছুটা পাল্টে গিয়ে ব্লাডারকে বাড়তি সতর্ক করে দেয়। এর ফলে সামান্য ইউরিন জমলেই ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার তা দ্রুত বের করে দিতে চায়। ফলে মানুষটির ঘুম ভেঙে যায় ও বাথরুম দৌড়ন।
আরও পড়ুন: অবসাদ কাটানোর দাওয়াই হতে পারে বীর্য, বলছেন গবেষকরা
কী কী উপসর্গ দেখলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার
বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়ার অন্যতম উপসর্গ প্রস্রাব চেপে রাখতে না পারা। বার বার বাথরুম দৌড়তে হয়। বিশেষ করে রাতে একাধিকবার ঘুম ভেঙে যায়। প্রবল বেগে প্রস্রাব পেলেও শুরু হতে দেরি হয় এবং ধারা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। প্রস্রাব করার পরেও মনে হয় আর এক বার বাথরুমে গেলে ভাল হতো। ব্লাডার খালি হতে চায় না। প্রস্রাবের সময় জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। রাতে বারে বারে বাথরুম দৌড়তে হয় বলে ঘুমের দফারফা হয়ে যায়। অনেক সময় প্রস্রাব আটকে গিয়ে প্রচন্ড কষ্ট হয়। ক্যাথিটারের সাহায্যে ইউরিন বার করে দেওয়া ছাড়া গতি থাকে না। ইউরিনের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে, একে বলে হিমাচ্যুরিয়া। ব্লাডারে ইউরিন জমে জমে স্টোন হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। ব্লাডারে ইউরিন জমে জমে ব্লাডার বড় হয়ে যেতে পারে।
কী কী পরীক্ষা করানো দরকার
ইউরোলজিস্ট প্রস্টেটের অসুখ সন্দেহ করলে প্রথমে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এর ডাক্তারি নাম ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন। এরপর প্রয়োজন মতো পিএসএ অর্থাৎ প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এরপর রোগীকে একটি ফর্ম ভরতে দেওয়া হয়। তাতে আটটি প্রশ্ন থাকে। এর নাম ইন্টারন্যাশনাল প্রস্টেট সিম্পটম স্কোর বা আইপিএসএস। এই স্কোর দেখে ইউরিন কালচার, রুটিন ইউরিন টেস্ট, ইউরিন ফ্লো-রেট ও রেনাল ফাংশন টেস্ট করাতে হতে পারে। রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসা মানেই সার্জারি নয়
বেশি বয়সের অসুখ বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়া বা বিপিএইচ অনেকটা হাই ব্লাড প্রেশার বা ডায়াবিটিসের মতো। রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সারানো যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ওষুধের সাহায্যে রোগের বাড়বাড়ন্ত রুখে দেওয়া যায়। অনেক সময় প্রস্টেট গ্ল্যান্ড অনেকটা বড় হয়ে গেলে টিইউআরপি ব ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অফ প্রস্টেট করা হয়। পেট না কেটেই প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি কুরে বের করে দিলে সমস্যা উধাও হয়ে যায়। কিন্তু সার্জারির ভয়ে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অকারণে ভয় পেয়ে রোগ গোপন করলে জটিলতা বেড়ে যায়। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৫০ বছর বয়সের পর প্রস্রাব সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে একবার ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রস্টেটের সমস্যা হলে সন্ধের পর থেকে জল, চা, কফি জাতীয় পানীয়ের মাত্রা কমিয়ে দিন। ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy