রোমহীন, মসৃণ ত্বক পেয়ে লেজ়ার থেরাপি করাতে ভরসা পান না অনেকেই। বদলে প্রতি মাসে মুখে থ্রেডিং বা ওয়াক্সিংই করান বেশির ভাগ মহিলাই। এর ফল কতটা সাংঘাতিক হতে পারে, সে নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেকেরই। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, মুখে রোম তোলার জন্য নানা রকম পদ্ধতি চলে এসেছে, যেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। বিশেষ করে থ্রেডিং ও ওয়াক্সিং ঘন ঘন করালে ত্বকের কোলাজেন নষ্ট নয় এবং রোমের গোড়ায় সংক্রমণ হতে পারে। পরবর্তী কালে যা নানা রকম চর্মরোগের কারণ হতে পারে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মুখে ওয়াক্সিং করে রোম তোলার ৩০ মিনিটের মধ্যে ত্বকে প্রদাহ তৈরি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা ‘এরিথেমা’। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা হারিয়ে ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে। ৪৮ ঘণ্টা পরে ত্বকের প্রদাহ আরও বেড়ে যায় এবং ‘পোস্ট-ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন’ (পিআইএইচপি) হতে দেখা যায় অনেকের। তখন ত্বকে ব্রণ-ফুস্কুড়ি বেরোয়, অ্যালার্জি হতে পারে, আবার ত্বকে চাকা চাকা দাগও বেরোতে দেখা যায়। চর্মরোগ চিকিৎসকেরা বলেন, প্রতি মাসে যাঁরা ফেশিয়াল ওয়াক্সিং করান, তাঁদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে রোমের আধিক্য বাড়ে। কেবল তাই নয়, ত্বকে পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে।
আরও পড়ুন:
পিসিওএস হলে মুখের রোমের আধিক্য নয়। তখন অনেকেই রোম তুলতে নিয়মিত থ্রেডিং বা ওয়াক্সিং করান। এই অভ্যাস পরবর্তী কালে গিয়ে নানা রকম চর্মরোগের কারণ হতে পারে। এমনকি ওয়াক্সিং-এর পরে ত্বকের ঠিকমতো যত্ন না নিলে তা থেকে ত্বকে দাগছোপ পড়া, রোদে বেরোলে ত্বক পুড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়তে পারে।
ওয়াক্সিং ঘন ঘন করালে তা থেকে রোজ়েশিয়া নামক চর্মরোগও দেখা দিতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়। ত্বক খুব শুষ্ক ও রুক্ষও হয়ে যায়। আর ত্বকে শিরাও খুব স্পষ্ট বোঝা যায়। ত্বকে লালচে ব্রণ দেখা দেয় ও তার মধ্যে পুঁজও হতে পারে।
এর থেকে বাঁচতে কী করণীয়?
১)ত্বক খুব শুষ্ক ও স্পর্শকাতর হলে ওয়্যাক্সিং একেবারেই করাবেন না।
২) ওয়াক্সিং-এর আগে ভাল করে স্ক্রাবিং ও ময়শ্চারাইজ়িং করে নিতে হবে। ত্বকের রোমকূপে যেন ময়লা জমে না থাকে।
৩) ওয়াক্সিং-এর পরে নিয়মিত ত্বকের পরিচর্চা করতে হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক দেওয়া সাবান বা প্রসাধনীর ব্যবহার ত্বকের আরও ক্ষতি করতে পারে।
৪) ত্বকে আগে থেকেই ব্রণ বা ফুস্কুড়ি থাকলে, ওয়াক্সিং না করানোই ভাল।
৫) নিজে ওয়াক্সিং করাতে গেলে ভুল হতে পারে। তাই যদি ওয়াক্সিং করাতেই হয়, তা হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নেওয়াই ভাল। আর কী ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, তা দেখে নেবেন।
৬) রোমের আধিক্য থাকলে লেজ়ার থেরাপি করানো যেতে পারে। এখনকার লেজ়ার থেরাপি যন্ত্রণাহীন ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে তা খরচসাপেক্ষ।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। রোম তুলতে যে কোনও পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার আগে ত্বক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। থ্রেডিং, ওয়াক্সিং বা লেজ়ার থেরাপি সকলের ত্বকের জন্য কার্যকরী না-ও হতে পারে।