পুজোর সাজে সুহোত্র। নিজস্ব চিত্র।
বছরের বেশির ভাগ সময়ে অভিনেতাদের কাটে সাজঘরে। চরিত্র অনুযায়ী প্রসাধন আর পোশাকে সেজে উঠতে হয়। কিন্তু সে সাজের সঙ্গে পুজোর সাজের কোনও তুলনাই চলে না। দুর্গাপুজো হল বাঙালির আবেগ। আর সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হল সাজগোজ। সাধারণ মানুষ থেকে তাবড় তারকা— পুজোর সাজ নিয়ে আলাদা একটা প্রস্তুতি থাকে সকলেরই। এই সময় পাশের বাড়ির চেনা ছেলেটিও ধুতি-পাঞ্জাবিতে কেমন যেন বদলে যায়। সারা বছর অবিন্যস্ত থাকলেও পুজোর সময় শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় ফুল লাগাতে ভোলে না চেনা মেয়েটিও। ঠিক তেমনই সারা বছর সাজগোজ নিয়ে বিশেষ উৎসাহ না থাকলেও, পুজোর সাজ নিয়ে বেশ উত্তেজিত অভিনেতা সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ও।
বাপিবাবুর সাজ
বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশের পর থেকে পুজোর উদ্যাপন অনেকটাই বদলে গিয়েছে সুহোত্রের। কৈশোর কেটেছে হাওড়ায়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই কলকাতার সঙ্গে আলাপ একেনের ‘বাপি বাবুর’। তবে বছর তিনেক হল হাওড়ার পাট চুকিয়ে নিউ টাউনের বাসিন্দা হয়েছেন। স্কুলে পড়াকালীন গোটা হাওড়া চষে ফেলে ঠাকুর দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে টইটই করা, হুল্লোড়, মজা— এখন অবশ্য সব বদলে গিয়েছে। সুহোত্রের পুজো কাটে বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠকী আড্ডায় কিংবা বাড়িতেই। তবে পরিকল্পনা থাক কিংবা না থাক, পুজোর চারটি দিনের সাজ নিয়ে একটা প্রস্তুতি সকলেরই থাকে। সুহোত্রেরও আছে। কিন্তু ওই যে ব্যস্ততা, পঞ্চমী পর্যন্ত টানা শুটিং চলবে। ফলে আলাদা করে পুজোর সাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিশেষ সুযোগ নেই। আর তাই সুহোত্রকে সাজানোর দায়িত্ব নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
বছরভর জিন্স, কিন্তু পুজোয় চাই ধুতি
ছবির শুটিং থেকে শুরু করে লং ড্রাইভ— বছরভর জিন্স, একরঙা টিশার্টেই স্বচ্ছন্দ সুহোত্র। কিন্তু পুজোর সাজ তো একটু অন্য রকম হবেই। সারা বছর পশ্চিমি পোশাক পরনে থাকলেও পুজোর সাজে সাবেকিয়ানা না থাকলে ঠিক পুজো পুজো মনে হয় না। তবে সাবেকি পোশাকে মানাবে কি না, তা নিয়ে খানিক সংশয় ছিল অভিনেতার। সেই সংশয় এবং জড়তা অবশ্য ম্যাজিকের মতো দূর করে দিয়েছেন পোশাকশিল্পী রুদ্র সাহা। সুহোত্রকে মানাবে এমন পোশাকই তিনি বানিয়েছেন।
সুহোত্র ধুতি পরতে ভালবাসেন। বাড়ির পুজোয় দু-এক বার ধুতি পরেছেন। ছবির প্রচারেও ধুতি-পাঞ্জাবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শাড়ি দিয়ে ধুতি কি তিনি কখনও পরেছেন? সুহোত্র কথায় কথায় জানালেন, আলমারির অন্ধকারে ন্যাপথলিনের গন্ধ জড়ানো ঠাকুরমার সাদা শাড়ি দিয়ে কয়েক বার ধুতি পরেছেন। কিন্তু তা বাড়িতে। পরিজনদের ছত্রছায়ায়। তা সত্ত্বেও সেই ধুতি সামলাতেও তাঁকে খানিক বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু জমকালো শাড়ির সঙ্গে রং মিলিয়ে পাঞ্জাবি পরার কথা এর আগে কখনও ভাবেননি। কিন্তু এ বার ভাবলেন, পরলেনও।
বেনারসির কুঁচি দিয়েই হোক ধুতির কোঁচা
পোশাকশিল্পী সুহোত্রকে গাঢ় সবুজ রঙের কাতান বেনারসি দিয়ে পরালেন ধুতি। সঙ্গে পেস্তা রঙের জমকালো পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিতে বুকের কাছে জরির জমকালো কাজ। শাড়িকে ধুতি হিসাবে পরার চল খুব নতুন নয়। মায়ের গরদের শাড়ি কিংবা দিদার বিয়ের সিল্কের শাড়ি ধুতি হিসাবে পরেছেন অনেকেই। তবে সেই ‘ট্রেন্ড’ যেন নতুন রূপে ফিরছে। শাড়ি মানেই তার উপর মেয়েদেরই অধিকার, সেই ভাবনার ভিত খানিক নাড়িয়ে দিয়েছে এই শৈলী। পোশাক যে লিঙ্গবৈষম্যের উর্ধ্বে, সে কথা মনে করায় শাড়ি দিয়ে ধুতি পরার চল। শাড়ি এমন এক পোশাক, যা ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী আবেদন বাড়িয়ে তোলে। তাই শুধু নারী নয়, অন্য কায়দায় পুরুষও সেজে উঠতে পারেন বারোহাতি এই বস্ত্রখণ্ডে। নতুন রূপে নিজেকে দেখে বিস্মিত সুহোত্র নিজেও। ধুতি-পাঞ্জাবিতে নিজেকে কেমন লাগবে সে কথা ভেবে প্রথম দিকে যে টানাপড়েন চলছিল মনে, প্রথম লুকের ছবি ওঠার পর সেই অস্থিরতা একেবারেই কেটে গিয়েছে তাঁর। খুব বেশি মেক আপ করতে একেবারেই পছন্দ করেন না সুহোত্র। রূপটানশিল্পী সৌরভ দাস তাই পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা মেক আপ করে দিয়েছেন সুহোত্রকে। চিত্রগ্রাহক শুভদীপ ধরের ক্যামেরার লেন্সে নিজেকে নতুন বেশে দেখে খুশি সুহোত্র। শাড়ি দিয়ে ধুতি পরার এই কায়দা তাঁর নাকি মনে ধরেছে। এর পরে অন্য কোনও পার্বণে তাঁকে এমন বেশে দেখা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিন বছর পর আবার ‘অষ্টমীতে প্রথম দেখা’
পুজোর সাজ বলে কথা, একটা পোশাকে কি মন ভরে! তাই সুহোত্রের জন্য তৈরি হল আর এক সেট জামাকাপড়। গত দু-তিন বছরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেননি সুহোত্র। তবে এ বার দেবেন বলে ভেবেছেন। অষ্টমীর দিন বাঙালি পুরুষ লাল পেড়ে সাদা ধুতি আর লাল পাঞ্জাবিতে না সাজলে, পুজোর আমেজটাই যেন নষ্ট হয়। সেই মতো সুহোত্রও সাজলেন মনের মতো পোশাকে। জরির সুতোর কাজ করা তসরের পাঞ্জাবিতে বেশ দেখাচ্ছিল সুহোত্রকে। পর্দায় এর আগে এমন রূপে তাঁকে দেখা যায়নি। কলার দেওয়া টিশার্ট কিংবা গোল গলা জামা, এমন সাজেই সুহোত্রকে দেখেছেন দর্শক। কখনও কখনও পাঞ্জবির সঙ্গে জিন্স গলিয়ে চলে এসেছেন। তবে এমন সাবেকি সাজে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় প্রথম ধরা দিলেন তিনি। পাঞ্জাবির সঙ্গে লাল চওড়া পাড়ের ধুতিতে একেবারে বাঙালি বাবু। সুহোত্রের ঠোঁটের চওড়া হাসি বলে দিচ্ছে, লাল-সাদায় মিশে গিয়ে তিনি যারপরনাই আনন্দিত। তবে পোশাকের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের একটা সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। সেই জন্যে অনুষ্ঠানের ধরন এবং স্থান অনুযায়ী পোশাক বাছাই করার কথা বলে থাকেন পোশাকশিল্পীরা। বাঙালির খাবারের রেস্তরাঁ ‘বাবু কালচার’ কিন্তু সুহোত্রের সাজের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে।
ধুতি পরেই বাইক সফর
সুহোত্র বাইক চালাতে ভালবাসেন। শুটিং না থাকলে মাঝেমাঝেই এ দিক-ও দিক বেরিয়ে পড়েন বাইক নিয়ে। পুজোর সময় রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, পূজাবার্ষিকীতে ডুবে যাওয়ার পরেও যদি হাতে খানিকটা সময় বেঁচে যায়, তা হলে বাইক নিয়ে কোথাও একটা বেরিয়ে পড়বেন বলে ঠিক করেছেন সুহোত্র। পুজোয় ধুতিও পরবেন আবার বাইকও চালাবেন? অভিনেতা রহস্যের জন্ম দিয়ে বললেন, ‘‘সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য।’’
ভাবনা,পরিকল্পনা এবং প্রয়োগ: রিচা রায়
চিত্রগ্রাহক: শুভদীপ ধর
পোশাক এবং সাজ : রুদ্র সাহা
রূপটান শিল্পী: সৌরভ দাস
স্থান সৌজন্যে: বাবু কালচার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy