করিনা কপূরকে করসেট ব্লাউজ় পরিয়েছেন মনীশ মলহোত্র। ছবি : ইনস্টাগ্রাম।
কিছু দিন আগেও ‘করসেট’ শব্দটা শুনলে মনে হত মেয়েদের অন্তর্বাস। যাঁরা পোশাক-আশাক নিয়ে একটু খবর রাখেন, তাঁরা আরও একটু এগিয়ে ভাবতেন, ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্তর্বাস। যে অন্তর্বাস মেয়েদের পরানো হত কোমর সরু দেখানোর জন্য। যাতে পোশাক পরলে স্পষ্ট হয় বালুঘড়ির আদল। ‘টাইটানিক’ ছবির দৃশ্যে কেট উইন্সলেটকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে করসেট বাঁধার দৃশ্য মনে পড়ছে কি! সেই করসেটই এখন ‘ইন ফ্যাশন’। তবে অন্তর্বাস হিসাবে নয়। করসেটের প্রত্যাবর্তন হয়েছে পুরোদস্তুর পোশাক রূপেই।
প্যারিস ফ্যাশন উইকের মার্জার সরণি রুপোলি রঙের করসেট পরে মাতিয়ে দিয়েছেন আলিয়া ভট্ট। আবার মনীশ মলহোত্র, তরুণ তেহলানি, আবু জানি-সন্দীপ খোসলার মতো পোশাকশিল্পীরাও শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ় হিসাবে করিনা কপূর, জাহ্নবী কপূরদের মতো তারকাদের পরাচ্ছেন করসেট। ভারতীয় ধনীশ্রেষ্ঠ মুকেশ অম্বানীর ছোট বৌমা রাধিকা মার্চেন্টও তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে লেহঙ্গার সঙ্গে পরছেন করসেট ব্লাউজ়। সব মিলিয়ে ব্লাউজ়ের ফ্যাশনে এ বার করসেটেরই বোলবোলাও।
নতুন ঢেউয়ে গা ভাসিয়েছেন বাঙালি পোশাকশিল্পীরাও। টলিউডের তারকাদের চাহিদা মেটাতে তাঁরাও তৈরি করছেন করসেট। বুটিক, ডিজ়াইনার ব্র্যান্ড পিছিয়ে নেই কেউই। পোশাকশিল্পী অভিষেক রায় প্রিন্ট এবং সিল্ক ব্রোকেডের করসেট তৈরি করেছেন। কেন করসেট ব্লাউজ় নিয়ে এত মাতামাতি? অভিষেক বলছেন, ‘‘করসেটের ভাবনা এসেছে পশ্চিমের দেশ থেকে। আর ভারতীয় শাড়ির সঙ্গে তো অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে। করসেটই বা নয় কেন? করসেট যে হেতু শরীরকে একটা নির্দিষ্ট গড়নে বাঁধতে পারে, তাই যে কোনও ফ্লোয়িং পোশাকই তার সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করবে। মানাবেও ভাল। শাড়ি তো বটেই।’’
পোশাক আর ব্লাউজ়ের বুটিক সোহাগ আবার করসেটের ভাবনাকে নিজেদের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে। সুতির পোশাক আর ব্লাউজ় বানায় সোহাগ। করসেটও তারা তৈরি করেছে সুতির কাপড়েই। সোহাগ ব্র্যান্ডের কর্ণধার সোহিনী গুপ্ত বলছেন, ‘‘এই ধরনের ব্লাউজ়ের সুবিধা হল, যে কোনও পোশাকের সঙ্গেই বেশ মানিয়ে যায়। যে কোনও চেহারাতেই ভাল লাগে। সুতির করসেট ব্লাউজ় যেমন শাড়িকে একটা ওয়েস্টার্নাইজ়ড আদল দেবে, তেমনই একটা মাটির কাছাকাছি থাকার অনুভবও দেবে।’’
করসেট ব্লাউজ় নিয়ে সমালোচনারও কমতি নেই। রক্ষণশীলদের অনেকই করসেটকে অযথা শরীর প্রদর্শনের চেষ্টা বলে কটাক্ষ করেছেন। ফলে প্রশংসার পাশাপাশি বিতর্কেরও কেন্দ্রে চলে এসেছে করসেট। তবে মহিলাদের ওই পোশাক নিয়ে বিতর্ক তার জন্মের সময় থেকেই। আঠারোশো শতকে যখন প্রথম মহিলাদের জন্য করসেট বানানো হয়েছিল, তখনই করসেটের বিরুদ্ধে মহিলাদের শরীরের ছাঁদ অযথা বদলানো এবং বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছিল।
আসলে মোটা কাপড় বা চামড়া দিয়ে তৈরি করসেটকে ফিতে দিয়ে টান টান করে বেঁধে রাখা হত মহিলাদের ঊর্ধ্বাঙ্গে। কেউ কেউ সেই প্রক্রিয়াকে মহিলাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা বলেও আপত্তি তুলেছিলেন। কেউ আবার বলেছিলেন মহিলাদের মানুষ হিসাবে নয়, যৌনতার প্রতীক হিসাবেই দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ওই পোশাকে। কিন্তু সেই সব বিতর্ক পেরিয়েও বেঁচে থেকেছে করসেট। শুধু মাঝেমধ্যে বদলে গিয়েছে তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া ধারণা।
যেমন একটা সময়ে করসেটকে মহিলাদের সৌন্দর্যবর্ধক, এমনকি মর্যাদার প্রামাণ্য পোশাক হিসাবেও দেখা শুরু হয়। তখন ভাবা হত, নিজেকে ওই ভাবে বেঁধে রাখা মহিলারা আদতে ধরাছোঁয়ার বাইরে। করসেট তখন প্রায় মহিলাদের বর্মের মর্যাদাও পেয়েছিল। আরও পরে করসেটকে মহিলাদের শারীরিক আবেদনবৃদ্ধির সহায়ক হিসাবেও বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ! বলেছিলেন, ওই পোশাক খোলার মধ্যেও নাকি রয়েছে সেই আবেদন। সেই ভাবনা থেকেই সম্ভবত অন্তর্বাস হিসাবে করসেটের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে।
কিন্তু করসেট আপাতত আর পোশাকের অন্দরে না থেকে বাইরে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, একেবারে পোশাকের পর্যায়েই উত্তরণ হয়েছে তার। প্রশ্ন হল, আপনি করসেটকে কী ভাবে দেখবেন? নতুন ঢেউয়ে গা ভাসাবেন কি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy