বিয়েতে সিঁদুরদানের মুহূর্তে অভিনেত্রী আলিয়া ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।
সারা সপ্তাহ অফিস করে ক্লান্ত সপ্তপর্ণা। এ দিকে বিয়ের আর বেশি দিন বাকি নেই। পোশাক, বিয়ের অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটা তো চলছেই। সহকর্মীদের কাছে নানা রকম খুঁটিনাটি জেনে, ডেস্কের ‘থিঙগ্স টু ডু’-র তালিকায় লিখেও রাখছেন মাঝে মধ্যেই। কিন্তু সপ্তপর্ণা সাজগোজের বিষয়ে একেবারেই কিছু জানেন না। কাজল আর লিপস্টিক ছাড়া অন্য যে সব প্রসাধনী দোকানে কিনতে পাওয়া যায়, তা কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই তাঁর। ডেস্কে পাশেই বসেন চিরশ্রী। তিনি সাজগোজের ব্যাপারে খুবই দক্ষ। নতুন নতুন প্রসাধনী ব্যবহার করেন। সেগুলি নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রিভিউ-ও দেন। মাঝে মধ্যেই তার লালচে গাল দুটো দেখে সপ্তপর্ণা জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘‘এই তুই গালে কী লাগিয়েছিস রে?’’ প্রথম দিকে উৎসাহ নিয়ে প্রসাধনীর নাম বললেও পরে বেশ বিরক্ত হয়ে বলতেন, ‘‘তুই ও সব বুঝবি না।’’
বেশি বোঝেন না বলেই বিয়ের দিন সাজানোর সব দায়িত্ব এক পেশাদার রূপটান শিল্পীর হাতেই তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছেন সপ্তপর্ণা তবে, অনেকেই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন যতই রূপটান শিল্পী থাকুন, বিয়ের অন্যান্য দিন বা গায়ে হলুদের সকালে একটু সাজগোজ করার জন্য কিছু প্রসাধনী নিজের কাছেও রাখতে হবে। কিন্তু তার জন্য কী কী লাগতে পারে, তা-ই তো জানেন না সপ্তপর্ণা। শুধু বিয়ে নয়, তার পরেও কাজে লাগতে পারে এমন কী কী প্রসাধনী কিনবেন, সেই তালিকা শেষে বানিয়ে দিলেন চিরশ্রীই।
১) প্রাইমার
ত্বক যত মসৃণ হবে, মেকআপ তত ভাল বসবে। দেখতেও সুন্দর লাগবে। মুখ ভর্তি ‘ওপেন পোর্স’। তার মধ্যে যদি ফাউন্ডেশন ঢুকে থাকে, দেখতে খারাপ লাগবে। তাই প্রাইমার অবশ্যই কিনতে হবে। দোকানে বিভিন্ন সংস্থার প্রাইমার কিনতে পাওয়া যায়। প্রথমেই ‘ম্যাক’, ‘ক্রাইলন’, ‘ববি ব্রাউন’, ‘স্ম্যাশবক্স’-এর মতো দামি প্রসাধনী না কিনে ‘কালারবার’, ‘নায়কা’, ‘সুগার’, ‘ল্যাকমে’র মতো তুলনায় কম দামের প্রাইমার বেছে নিতে পারেন।
২) ফাউন্ডেশন
এই প্রসাধনী ছাড়া মেকআপ শুরুই করা যাবে না। নিজের ত্বকের রঙের সঙ্গে মানিয়ে কিনতে হয়। কিন্তু ‘স্টিক’ কিনবেন না ‘লিক্যুইড’ না ‘পাউডার’, তা নির্ভর করবে আপনার ত্বকের ধরনের উপর। তবে মেকআপ করার অভ্যাস না থাকলে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করাই ভাল। মেলাতে সুবিধা হবে। রূপটান শিল্পীরা সাধারণ ‘ম্যাক’, ‘হুডা বিউটি’, ‘ক্রাইলন’-এর মতো সংস্থার প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এগুলি বিয়ের বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের দিনের জন্য ভাল। পেশাদার হাত ছাড়া এ সব প্রসাধনী ব্যবহার করতেও সমস্যা হতে পারে। তাই একেবারে ‘ল্যাকমে’, ‘সুগার’, ‘মেবিলিন’ ব্যবহার করে দেখতেই পারেন। দাম কম হলেও মান খারাপ নয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী একাধিক শেড রয়েছে। সেখান থেকে বেছে নিলেই হল।
অনেকেই আবার প্রাইমার, ফাউন্ডেশন আলাদা করে ব্যবহার করতে চান না। কোনটা কার পর ব্যবহার করবেন, তা ভুলে যান। তাঁরা ‘ল্যাকমে’ বা ‘নায়কা’র প্রাইমার এবং ফাউন্ডেশন একসঙ্গে দেওয়া রয়েছে এমন প্রসাধনীও ব্যবহার করতে পারেন।
৩) কনসিলার
মুখের খুঁত ঢাকতে গেলে কনসিলার রাখতেই হবে। তবে কাঁচা হাতে পেনসিল কনসিলার মিলিয়ে দিতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লিক্যুইড বা ক্রিম কনসিলার কেনাই ভাল। ‘মেবিলিন’, ‘নায়কা’, ‘ফেসেস কানাডা’র মতো সংস্থার প্রসাধনী ব্যবহার করে দেখতে পারেন। চবে কনসিলারের কাজ দু’ধরনের। নিজের শেডের চেয়ে গাঢ় রং ব্যবহার করতে হবে ব্রণ বা কালচে দাগ ঢাকতে। গায়ের শেডের চেয়ে হালকা রং ব্যবহার করতে হবে চোখের নীচের কালি ঢাকতে।
৪) প্রেস পাউডার
মুখের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে মসৃণভাব বজায় রাখে এই প্রেস বা কম্প্যাক্ট পাউডার। মেকআপ বসেও ভাল। তবে যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, চাইলে তাঁরা এই প্রসাধনীটি বাদ দিতে পারেন। এই পাউডার ব্যবহার করতে খুব একটা দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তাই ‘ম্যাক’, ‘মেবিলিন’, ‘সুগার’, ‘কে বিউটি’, ‘নায়কা’— অজস্র সংস্থা রয়েছে। ত্বকের রং অনুযায়ী যে কোনও একটা বেছে নিলেই হয়। ‘ম্যাক’-এর স্টুডিয়ো ফিক্স কম্প্যাক্ট পাউডার পেশাদাররা ব্যবহার করেন। তবে আপনি ‘মেবিলিন’-এর ‘ফিট মি’-র প্রেস পাউডার দিয়ে শুরু করতে পারেন। অনেক রকম শেড রয়েছে। তাই সহজেই নিজের গায়ের রঙের কাছাকাছি পেয়ে যাবেন।
৫) ব্লাশ অন
মুখে লালচে আভা আনতে গেলে ব্যবহার করতে হবে ব্লাশ-অন। সাধারণত দু’রকম ব্লাশ পাওয়া যায়। একটি ক্রিম বেস্ড এবং অন্যটি পাউডার বেস্ড। ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তা হলে ক্রিম বেস্ড প্রসাধনী কিনবেন এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাউডার বেস্ড ব্লাশ অন কেনাই ভাল। ‘কে বিউটি’, ‘পিক্সি’, ‘ফেসেস কানাডা’, ‘মেবিলিন’, ‘নায়কা’— এগুলির মধ্যে থেকে ত্বকের রং অনুযায়ী কিনে ফেলতে পারেন।
৬) কাজল, লাইনার, মাস্কারা
কাজল পরলেই তা ঘেঁটে যায়। এমন কাজল চাই যা ‘স্মাজ’ না করেই দীর্ঘ ক্ষণ চোখে থাকবে। ‘ম্যাক’, ‘ববি ব্রাউন’, ‘মেবিলিন’, ‘ল্যাকমে’, ‘নায়কা’, ‘সুগার’, ‘কালারবার’— এর মতো অনেক সংস্থাই রয়েছে। সঙ্গে লাইনার বা মাস্কারাও কিনতে পারেন। লাইনার পরতে গেলে অনেকেরই হাত কাঁপে। তাঁরা পেনসিল লাইনার বা লাইনার পেন ব্যবহার করতে পারেন। বাড়তি টিপ, চোখ আরও উজ্জ্বল দেখাতে সাদা রঙের পেনসিল লাইনার কিনুন। একের পর এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্লান্তি চেহারায় পড়া স্বাভাবিক। তখন চোখের নীচের পাতায় ভিতর দিকে সাদা লাইনার লাগাতে পারেন।
৭) লিপস্টিক
বিয়ের দিন পোশাকের রঙের সঙ্গে মানানসই লিপস্টিক কিনতে হয়। তবে এমন কয়েকটা রঙের লিপস্টিক কিনে রাখুন যা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য পোশাকের সঙ্গেও পরা যায়। যাঁদের লিপস্টিক খেয়ে ফেলার অভ্যাস, তাঁরা ‘মেবিলিন’ বা ‘সুগার’-এর লিক্যুইড লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও ‘ম্যাক’, ‘ল্যাকমে’, ‘মেবিলিন’, ‘নায়কা’, ‘কে বিউটি’, ‘নিক্স’, ‘কালারবার’-এর হরেক রকমের লিপস্টিক পাওয়া যায়। ‘সুগার’-এর লিক্যুইড লিপস্টিক খুব ভাল। কম দামে সেরা ‘মেবিলিন’-এর যে কোনও রেঞ্জের লিপস্টিক। একটু অন্য রকম রং পাবেন ‘কে বিউটি’ এবং ‘হুডা বিউটি’-তে। তবে বিয়ের অনুষ্ঠান তো? ‘ম্যাক’-এর রেট্রো ম্যাটের ‘রুবি উ’ বা ‘মেহের’ অবশ্যই রাখবেন মেকআর ব্যাগে।
৮) আইশ্যাডো
পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে চোখের উপর একটু শ্যাডো দিতে চাইলে, চার রকম রঙের ছোট বা ছয় রকম রঙের মাঝারি মাপের প্যালেট কিনতে পারেন। তবে কেনার আগে ত্বকের ধরন বুঝে নেওয়া জরুরি। তৈলাক্ত ত্বক হলে পাউডার এবং শুষ্ক ত্বক হলে ক্রিম বেস্ড শ্যাডো কিনতে হবে। ‘ল্যাকমে’ এবং ‘মেবিলিন’-এর প্যালেট কিনতে পারেন। তবে আইশ্যাডো প্যালেট সেরা পাবেন ‘মেকআপ রেভোলিউশন’-এর। ব্রাই়ডার প্যালেটও বাজেটে পেয়ে যাবেন।
৯) ফিক্সিং স্প্রে
মেকআপ তো হল। কিন্তু তা দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রাখার জন্য ফিক্সার চাই। এ ক্ষেত্রে একটু দামি ফিক্সার ব্যবহার করাই ভাল। ‘ম্যাক’, ‘প্যাক’, ‘ডেইলি লাইফ’-এর মতো সংস্থার স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy