ছবি: শাটারস্টক।
বছরের অন্য সময়ের সাজগোজ এক রকম। আর শীতের সাজ অন্য রকম। গরমের অতি সাধারণ টি-শার্টই সোয়েটার, মাফলার, স্কার্ফের দৌলতে বাড়তি স্মার্ট। তবে শীতের সাজ মানে তো শুধু সোয়েটার-মাফলার-টুপি নয়। ঠান্ডার রকমফেরে বদলায় জুতোজোড়াও। ফ্যাশনে তাদের ভূমিকা নেহাত কম নয়।
শীতে ধুলো, ঠান্ডা আর তা থেকে জন্মানো রুক্ষতা থেকে পা বাঁচাতে ঢাকা দেওয়া জুতো পরাই দস্তুর। অনেকেই স্নিকার্স, পাম্প শ্যু বা লোফার জাতীয় জুতো বেছে নেন। তবে শীতের কেতাকে কয়েক ধাপ বাড়িয়ে নিতে চাইলে একটু খরচ করে এক জোড়া ভাল বুট কিনে নিতে পারেন। তারকা স্টাইলিস্টরা বলছেন, শীতের ফ্যাশনকে এক ধাক্কায় কয়েক গুণ স্মার্ট করে তুলতে পারে এক জোড়া ভাল বুট।
পুরুষদের বুটের নানা রকমফের অল্পবিস্তর সকলেরই জানা। তা ছাড়া কর্মরত পুরুষেরা বছরভর পেশার প্রয়োজনে বুট জুতো পরেই থাকেন। কর্মরতা মহিলাদের অবশ্য তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। তাঁদের জুতো ঋতুভেদে বদলে বদলে যায়। কখনও স্যান্ডাল, কখনও পাম্প বা স্টিলেটো, কখনও সাধারণ ফ্লিপফ্লপ, নাগরা জুতো, কোলহাপুরি চপ্পল বা ক্লগ্স। মেয়েদের জুতোর স্টাইলের অন্ত নেই। যদিও এর অধিকাংশই শীতের সাজগোজের উপযোগী নয়। শীতের ফ্যাশনের জন্য রইল মেয়েদের বুট জুতোর সুলুক সন্ধান।ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে বলা হয় ‘পার্টি মান্থ’। বর্ষশেষ এবং বর্ষশুরুর উদ্যাপন তো রয়েছেই। তার পাশাপাশি বড়দিন, পিকনিক, ছুটির বেড়ানোও রয়েছে। সেই সব বেড়ানোর সাজে বা পার্টিতে পছন্দের পোশাকের সঙ্গে বুট পরে বদলে ফেলুন আপনার অবতার। স্টাইলেও টক্কর দিন বাকিদের।বুটের রকমফের
লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়ার্ডরোব স্টাইলিস্ট এবং তারকা ফ্যাশন কনসালট্যান্ট সারা নিয়ারিস বলছেন, ‘‘মহিলাদের বুট বিভিন্ন রকমের হয়। তবে চার-পাঁচ রকমের বুট অল্পবিস্তর সব পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যায়।’’ তেমনই কিছু বুট এবং তা কোন পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরা যেতে পারে, তার একটি পরিকল্পনা ছকে দিয়েছেন সারা।
১। জ়িপার অ্যাঙ্কল বুট: সাধারণত অ্যাঙ্কল অর্থাৎ গোড়ালির উপরে পায়ের গোছ পর্যন্ত ঢাকা থাকে যেকোনও অ্যাঙ্কল বুটে। পা গলানোর সুবিধার জন্য পাশে জ়িপার থাকলে তাকে বলা হবে জ়িপার অ্যাঙ্কল বুট। জ়িপার থাকার জন্য এই ধরনের বুটের গড়ন পায়ের আকারের থেকে খুব বেশি চওড়া হয় না। ছিমছাম ওই বুটে হিল থাকলে আরও সুন্দর দেখায়। ফ্লেয়ার্ড জিন্স, স্কার্ট, মিডি ড্রেসের সঙ্গে সুন্দর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করা যেতে পারে।
২। নি-হাই বা থাই হাই বুট: নামেই বোঝা যায় বৈশিষ্ট্য। হাঁটু বা ঊরু পর্যন্ত লম্বা বুট। হাঁটু-ঝুল পোশাক, মিনি ড্রেস, শার্ট ড্রেস, এ লাইন ড্রেসের সঙ্গে ভাল লাগবে। আবার লেগিংসের সঙ্গেও এই ধরনের বুট ভাল লাগবে। সারার মতে, সাধারণ পোশাককে অসাধারণ করে তোলার ক্ষমতা আছে ওই বুটের।
৩। শিয়ারলিং বুট: খুব ঠান্ডায় আরামের জুতো হল শিয়ারলিং বুট। ভিতরে ফারের লাইনিং দেওয়া বাইরে সোয়েডের আবরণ। সাধারণত প্ল্যাটফর্ম হিল বা ফ্ল্যাট হিল বিশিষ্ট ওই জুতো স্কিন ফিটেড জিন্স, মিডি ড্রেস বা স্কার্টের সঙ্গেও ভাল দেখাবে।
৪। চেলসি বুট: চেলসি বুট অনেকটা অ্যাঙ্কল বুটের মতোই তবে এতে জ়িপারের বদলে পাশে থাকে ইলাস্টিকের প্যানেল। সাধারণত ব্লক বা ফ্ল্যাট হিল বিশিষ্ট চেলসির বিশেষত্ব ওই প্যানেলেই। কথিত আছে, রানি ভিক্টোরিয়ার জন্য ওই বুট বানানো হয়েছিল ১৮৫১ সালে। কারণ, তিনি ফিতে না-বাঁধা বুট চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য চেলসি বুট আধুনিক ফ্যাশনেও নিজের জায়গা করে নেয়। ‘ক্যাজ়ুয়াল লুক’-এর চেলসি বুটও স্কার্ট, জিন্স-সহ যে কোনও ধরনের পোশাকের সঙ্গে পরা যায়।
৫। কমব্যাট বুট: কমব্যাট মানে যুদ্ধ। এক বিশেষ ধরনের জুতো বানানোও হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের জন্যই। সেনাবাহিনী এখনও ওই জুতোই ব্যবহার করে। তবে তাঁদের কাজের জুতো আপন করে নিয়েছেন সাধারণ নাগরিকেরাও। কমব্যাট বুট অ্যাঙ্কল বুটের থেকে সামান্য উঁচু, চওড়া এবং ফিতে বাঁধা। টাইট জিন্স বা লেগিংসের সঙ্গে ওভারসাইজ়ড সোয়েটার বা জ্যাকেট এবং কমব্যাট বুট ‘ক্লাসিক লুক’ দিতে পারে।
৬। কাউবয় বুট: সূচলো ডগা কাউবয় বুটের বিশেষত্ব। আরও একটি বিশেষত্ব হল, উপরের অংশটি হয় চওড়া। প্রায়শই তাতে নানা রকম নকশাও করা থাকে। একটু অন্য রকম স্টাইল করতে চাইলে এই বুট পরতে পারেন। রঙিন নকশা না হলে হাঁটু ঝুল বা মিডি ড্রেসের সঙ্গে কাউবয় বুট ভাল লাগবে।
৭। লিটা বুট: সাজগোজে একটু নাটকীয়তা আনতে চাইলে পরা যেতে পারে লিটা বুট। উঁচু হিলের পাম্পের মতো দেখতে এই বুটের উপরের অংশে রয়েছে বিস্তৃত ফিতের প্যানেল। শর্ট ড্রেস আর স্টকিংসের সঙ্গে পরা যেতে পারে। আবার লম্বা ঘের দেওয়া ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গেও পরা যেতে পারে।
৮। হিলড অক্সফোর্ড: নামের মতোই অক্সফোর্ড বুট কিছুটা ‘ফরম্যাল’। ফিতে বাঁধা, ‘ক্লাসিক ব্রোগ’ স্টাইলের পাশাপাশি মেয়েদের অক্সফোর্ড বুটে হিল থাকলে তা আরও আকর্ষণীয় দেখতে লাগে। অফিসে পরার জুতো হিসাবে অক্সফোর্ড বুট মাননসই তো বটেই। টাইট জিন্স, লেগিংস, স্টকিংসের সঙ্গেও অক্সফোর্ড বুট ভাল মানায়। গোড়ালি থেকে সামান্য উঁচু যে কোনও প্যান্টের সঙ্গে অক্সফোর্ড বুট ভাল দেখাবে। প্লিট দেওয়া অথবা এ-লাইন স্কার্টের সঙ্গেও ভাল লাগবে।
কোথায় পাবেন?
শীতকালে বিভিন্ন জুতোর শোরুমেই মহিলাদের বুট রাখা হয়। বড় ব্র্যান্ডের দোকানে সারা বছরই বুট পাওয়া যায়। মেট্রো, মোচি, বাটা, ক্যাটওয়াক, ক্লার্ক, কিউপিড, ইঙ্ক ফাইভের মতো ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে প্রায় সমস্ত শহরেই। এ ছাড়া অনলাইনেও দেখেশুনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতো কিনতে পারেন।
কী রকম দাম?
ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করবে দাম। জুতো কী দিয়ে তৈরি, তার উপরেও। চামড়ার তৈরির জুতোর দাম স্বাভাবিক ভাবেই বেশি হবে। তবে এখন ভাল মানের কৃত্রিম চামড়ার মজবুত জুতোও পাওয়া যায় ভাল ব্র্যান্ডের। সেগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত কম। মোটামুটি ভাল মানের বুটের দাম শুরু দুই-আড়াই হাজার টাকা থেকে। ভাল ব্র্যান্ডের ভাল বুটের দাম ১০-১৫ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও সীমা নেই। খানিকটা ‘গুড় ঢাললেই মিষ্টি’ দর্শনে যত দামি, তত ভাল বুট মিলতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy