এ বার মহিলাদের ব্যাগে কোন ধরনের শাড়ি ঠাঁই পাচ্ছে বেশি? ছবি- নিজস্ব চিত্র।
গত দু’বছর করোনার ত্রাসে দুর্গাপুজো তেমন ভাবে উপভোগ করতে পারেনি বাঙালি। কেনাকাটাতেও ছিল মন্দাভাব! তবে এ বছর আবার কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুজোর বাজার করতে ভিড় জমাচ্ছে বাঙালি! দুর্গাপুজোর কেনাকাটায় শাড়ি থাকবে না, তা আবার হয় নাকি! গড়িয়াহাট থেকে কলেজ স্ট্রিট, হাতিবাগান থেকে বেহালা বাজার— সর্বত্রই ছবিটা এক। শাড়ির দোকানে থিক থিক করছে ভিড়।
এ বার মহিলাদের ব্যাগে কোন ধরনের শাড়ি ঠাঁই পাচ্ছে বেশি? অনলাইন কেনাকাটার যুগে আদৌ কি শহরের নামী-দামি শাড়ির দোকানগুলিতে বিক্রির বাজার ফিরেছে?
অনলাইনের যুগেও পুজোর আগে নিজের হাতে বাছাই করে, শাড়ির গুণাগুণ যাচাই করে তবেই শাড়ি কিনতে পছন্দ করছেন মহিলারা! গড়িয়াহাটে পুজোর বাজার করতে এসে আনন্দবাজার অনলাইনকে রুমিলা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে গড়িয়াহাটে এসে শাড়ি কিনব না, তা আবার হয় নাকি! ছোট থেকেই পুজোর কেনাকাটা মানে গড়িয়াহাট। অনলাইনে কয়েকটি কুর্তি কিনলেও শাড়ির গুণাগুণ একটু দেখেশুনে না নিলে ঠিক স্বস্তি হয় না।’’
এ বছর ক্রেতারা কোন শাড়ি কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন?
গড়িয়াহাটের ‘বেনারসি কুঠি’-র কর্মী লিপিকা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এ বছর সবচেয়ে বেশি চলছে তসর। ৩, ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০,০০০ টাকার তরসের সম্ভার রয়েছে আমাদের দোকানে। এ বছর ৫,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে প্রিন্টেড ও জরি তসরের চাহিদা বেশি। তবে তসর ছাড়াও বালুচরী, স্বর্ণচরী, কাঁথার মতো সাবেকি শাড়িও কিনছেন মহিলারা।’’
গড়িয়াহাটের মোড়ে ট্রেডার্স এসেমব্লির কর্ণধার বললেন, ‘‘এ বছর ক্রেতারা নরম শাড়ি কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ছত্তীসগঢ়ের ঘিচা তসর তার মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন দামের তসর রয়েছে আমাদের দোকানে। এ ছাড়া, ফ্যান্সি শাড়ির বাজারও ভাল। ১২০০-১৫০০, এর মধ্যে নানা ধরনের ফ্যান্সি শাড়ি, ঢাকাই, হ্যান্ডলুম বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এ বছর শাড়ি কেনার জন্য কেমন বাজেট রাখছেন মহিলারা?
ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউস এজেন্সিস-এর তরফে প্রতিভা দুধোরিয়া বললেন, ‘‘এখনও মানুষ করোনার ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি। তাই খুব বেশি দামি শাড়ি কেনার আগে দু’বার ভাবছেন তাঁরা। মোটামুটি ২০০০ থেকে ৮০০০ টাকার বাজেট নিয়েই লোকজন বেশি আসছেন। এই বাজেটে অরগ্যাঞ্জা, কোরা, চান্দেরী, কোনান সিল্ক, কাতান সিল্কের সম্ভার পাবেন আমাদের দোকানে। ইদানীং আট থেকে আশি, সবাই হালকা শাড়ি পরতেই বেশি পছন্দ করছেন। তাই স্বল্প দাম অথচ আরামদায়ক হবে, এমনই শাড়ির খোঁজ করছেন। অনলাইন হোক অথবা অফলাইন— দু’টি মাধ্যমেই এ বছরের বাজার বেশ ভাল। পুজোর আগে মন খুলে শাড়ি কিনছেন অনেকে।’’
এ বছর কি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শাড়ি পরার প্রবণতা বেড়েছে? কোন ধরনের শাড়ি বেশি কিনছেন তাঁরা?
কেয়া শেঠ এক্সক্লুজিভের কর্ণধার কেয়া শেঠ বললেন, ‘‘ইদানীং অল্পবয়সি মেয়েরাও কিন্তু শাড়ি পরতে বেশ আগ্রহী। তবে শাড়ি পরাটা অনেকের কাছেই বেশ ঝক্কির কাজ। তাই এ বছর কিন্তু রাফেল শাড়ি বা ‘রেডি টু ওয়্যার’ শাড়ির বাজার খুব ভাল। যাঁরা শাড়ি পরতে পারেন, তাঁরা কিন্তু হালকা ওজনের শাড়ির খোঁজ করছেন। অরগ্যাঞ্জা, টিসু, হ্যান্ডলুম শাড়ির চাহিদা অল্পবয়সিদের মধ্যে বেশি। ডিজাইনার ব্লাউজের বিক্রিও বেড়েছে। একটা ভাল ডিজাইজার ব্লাউজ কিনে তার সঙ্গে একটা একরঙা শাড়ি পরে নিলেই জমে যাবে আপনার পুজোর সাজ!’’
আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের এক কর্মী বললেন, ‘‘প্রতি বারের মতো এ বছরও কিন্তু অল্পবয়সিদের মধ্যে হ্যান্ডলুম শাড়ির চাহিদা রয়েছে। ১০০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হ্যাল্ডলুম শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ফ্যান্সি শাড়ির বাজারও বেশ ভাল। ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ডিজাইনার শাড়ির সম্ভার রয়েছে আমাদের দোকানে। খুব দামি নয়, ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যের শাড়ির চাহিদাই এ বছর বেশি। সে ক্ষেত্রে আসল সিল্ক বা হ্যান্ডলুম নয়, সিল্ক-সুতি মেশানো শাড়ি কেনার প্রতি বেশি ঝুঁকছে তরুণীরা!’’
গত দু’বছরের তুলনায় এই বছর শাড়ির বাজার বেশ ভাল। বিক্রেতারা অন্তত তেমনটাই বলছেন। তবে অনেক দোকানদারের মুখেই শোনা গেল, কারোনাকালের আগে যে বাজার ছিল, তা এখনও ফেরেনি। অনলাইনে কেনাকাটার প্রভাব তাঁদের ব্যবসায় খানিকটা হলেও পড়েছে। বাজারের মন্দাভাব কেটেছে তাই ব্যবসায়ীদের মুখেও চওড়া হাসি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy