গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতা ব্যক্তিগত চেতনা। কেউ এই ধারণায় বিশ্বাস করেন, কেউ আবার করেন না। এই বোধ জাগ্রত করতেই আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন বিশেষ পর্বের তিন অতিথি। লোরেটো কলেজের অধ্যাপক দিনাজ় জিজিভয়, ডায়োসেশন স্কুলের অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা গায়েন এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজউদ্দিন আহমেদ। ‘লোকে কী বলবে? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিশেষ পর্ব ‘মঙ্গলবারতা’। নতুন বছরে পা রেখেছি আমরা। নতুন বছরে কিছু পুরনো মনন ও নতুন কিছু চিন্তন নিয়ে কী ভাবে এগোনো যায়, সোমবারের নতুন আড্ডায় সেই সুরের উদ্যাপনের চেষ্টা করলেন অনুত্তমা।
ভারতীয়রা যে ভাবে দুর্গাপুজো উদ্যাপন করেন, তেমনই বড়দিন উদ্যাপনেও সমান ভাবে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। তবে আমাদের চারপাশে ধর্ম নিয়ে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যা সব সমসময় মনোরম কিংবা সুন্দর হয় না। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন সময় নানা বৈষম্যমূলক, অসংবেদনশীল আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। তাজউদ্দিনেন কাছে মনোবিদ প্রশ্ন রাখলেন, ধর্ম থেকে তৈরি হওয়া ছোট ছোট আঘাতগুলি কী ভাবে সামলান তিনি? তাজউদ্দিন বলেন, ‘‘এক জন মুসলিম হিসেবে আমার কখনও কখনও মনে হয়, ভারতের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে হয়তো আমাদের এক দিন লুকিয়ে যেতে হবে। আমরা যতটা দুর্গাপুজোকে আপন করে নিতে চাই, অন্য ধর্মের মানুষ কিন্তু আমাদের সে ভাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক থাকে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। রেড রোডে যখন আমরা নমাজ পড়তে যাই, তখন কিন্তু আমাদের ধর্মের মানুষ ছাড়া কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী যান নিজেদের স্বার্থের উদ্দেশ্যে। কয়েক জন ফোটোগ্রাফার যান ছবি তুলতে, তবে আমাদের আনন্দে ভাগ নিতে কত জন যান বলুন তো? এমন মানুষও আছেন, তবে সংখ্যায় কম। আমার সঙ্গে রেড রোডে উদয়ন মিত্র বলে এক জনের আলাপ হয়। তিনি ১৮ বছর ধরে প্রতি বছর সেখানে যান আমাদের নমাজ পড়া শুনতে। তাঁর কণ্ঠে শুনেছিলাম রসুলের নাথ (ধর্ম সঙ্গীত)। প্রাণের আবেগ দিয়ে গাওয়া তাঁর সেই গানে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই বলি ব্যতিক্রমও আছে। এই ব্যতিক্রম দেখেই মনে কোথাও বিশ্বাস জাগে হয়তো কোনও দিন এই ভালবাসা-আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়েই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব মিটে যাবে। বিশ্বাস করি, ভারতবর্ষের এই রূপ এক দিন বদলাবে। আলো এক দিন আসবেই।’’
একই অভিজ্ঞতা কি খ্রিস্টানদেরও? তাদেরও কি এমনই বৈষম্যের শিকার হতে হয় এখনও? ডায়োসেশন স্কুলের অধ্যক্ষ স্নিগ্ধা গায়েনের জন্ম খ্রিস্ট পরিবারে। মনোবিদের প্রশ্নের উত্তরে স্নিগ্ধা বলেন, ‘‘আমার নাম নিয়ে ছেলেবেলায় নানা রকম মন্তব্য শুনতে হয়েছিল আমার। আমার নাম শুনে এক জন প্রশ্ন করেছিলেন, তোর নাম স্নিগ্ধা কী করে হল? তুই খ্রিস্টান। আর খ্রিস্টান তো বিদেশি ধর্ম। তোর নামও তো বিদেশি হওয়া উচিত ছিল। তোর পোশাক দেখেও তো তা আঁচ করা যায় না? বাঙালি হয়েও যে খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাস করা যায়, সেই ধারণাই নেই অনেকের। তখন ছোট ছিলাম, আমার ধর্মের বিষয়ে সে ভাবে কাউকে বোঝাতে পারিনি। তবে এখন বলতে চাই, যিশুকে বিশ্বাস করি বলেই আমরা খ্রিস্টান। আমাদের কাপড়-জামা, খাওয়াদাওয়া, ভাষা, সংস্কৃতি পুরোটাই নির্ভর করে আমাদের দেশের উপর। আমরা খ্রিস্টান হলেও বিদেশি নই।’’
পার্সি পরিবারে জন্ম হয়েছে অধ্যাপক দিনাজ় জিজিভয়ের। শহরে এই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তাই বলে তাঁকে যে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে, এমনটা নয়। দিনাজ় মনে করেন, এর কারণ হয়তো অনেকে তাঁদের সম্প্রদায়ের বিষয় জানেন না তেমন ভাবে। দিনাজ়ের আক্ষেপ, ‘‘বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের উৎসব উপলক্ষে আলাদা করে ছুটি পায়। আমরা কিন্তু তা পাই না। ছেলেমেয়ের স্কুলেও ছুটি থাকে না। আমাদের নববর্ষের দিন আমরা ছুটি নিয়ে তা পালন করি। ছুটির বিষয় সে ক্ষেত্রে কারও কোনও আপত্তি থাকে না। তবে ওই মনে হয় যে, আমরাও ছুটি পেলে হয়তো আরও ভাল লাগত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy