ভারসাম্য খুব জরুরি একটা শব্দ। জীবনে চলার পথে আমরা ব্যালান্স বজায় রাখার কথা বলে থাকি। এই ব্যালান্স শারীরিক ভাবেও বজায় রাখা জরুরি। অনেকেরই ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা থাকে। মূলত অসুস্থতা থেকেই এই সমস্যা দেখা দেয়। মাথার অপারেশন বা আঘাত, স্ট্রোক, ভেস্টিবিউলার ডিজ়অর্ডার, নার্ভজনিত সমস্যা, স্পন্ডিলোসিস, রক্তচাপের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা... এ ছাড়া বয়সজনিত এবং ওজন বাড়ার ফলেও ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা দেখা যায়।
মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, হঠাৎ করে টাল খেয়ে পড়ে যাওয়া... এগুলো বারবার হতে থাকলে ব্যালান্সিং প্রবলেম আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই সমস্যা ছোট-বড় সকলেরই হতে পারে। প্যাথলজিক্যাল সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে ঠিক করতে হবে। তার সঙ্গে চলবে এক্সারসাইজ়। দু’ধরনের চিকিৎসা সমান্তরালে চললেই কিন্তু ফল মিলবে।
ছোটদের ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা
ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সোনালি সেনগুপ্ত জানালেন, অসুস্থতার কারণেও অনেক শিশুর ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা দেখা দেয়। ‘‘সেরিব্রাল পলসি বা ডুসিন ম্যাসকুলার ডিসট্রফির মতো অসুস্থতায় ছোটদের ব্যালান্সিং প্রবলেম হয়। এগুলো কিছুটা জটিল রোগ। তবে টিএ টাইটনেসের মতো সমস্যা শিশুদের মধ্যে আকছার দেখা যায়। অনেকে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। গোড়ালি থেকে কাফ পর্যন্ত যে মাসল রয়েছে, সেটা যদি শক্ত হয়ে থাকে তা হলে হাঁটার সময়ে মেঝে থেকে গোড়ালি উঠে থাকে। এটাও ব্যালান্সিং প্রবলেম,’’ বললেন সোনালি। শিশুদের শরীরে ক্যালশিয়াম কম থাকলে হাড়ের জোর থাকে না। তখনও হাঁটাচলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
সমুদ্রের ধারে বালিতে হাঁটলে পায়ের মাসলের যে ব্যায়াম হয়, সেই এফেক্ট আনার জন্য ছোটদের স্যান্ড ওয়াকিং করান ফিজ়িয়োথেরাপিস্টরা। চেয়ারে বসে পায়ের তলায় ফোম রোলার দিয়ে রুটি বেলার মতো এক্সারসাইজ় করানো হয়। ছোটদের আলাদা এক্সারসাইজ় বল পাওয়া যায়। তা দিয়ে নানা রকম ব্যালান্সিং ব্যায়াম করানো হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং রয়েছে। ছোটদের পা ঢাকা ভাল জুতো পরানোর কথা বলেন চিকিৎসকেরা।
ভারসাম্যের নেপথ্যে কান
কানের সঙ্গে মাথার গুরুতর যোগ রয়েছে। কানের ইনফেকশন থেকে শরীরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সুরজিৎ রায় ভেস্টিবিউলার ফাংশনের সমস্যার কথা উল্লেখ করলেন। কানের ইনফেকশন বা ফ্লুয়িড ইমব্যালান্স হলে শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হয়। সাধারণত টনসিলাইটিস থেকে ভেস্টিবিউলার ফাংশনসের সমস্যা দেখা দেয়। এটা ছোট-বড় সকলেরই হতে পারে। ওষুধ এবং ব্যায়ামে এর নিরাময় সম্ভব।
নজরে স্পন্ডিলোসিস
শরীরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার একটা বড় কারণ স্পন্ডিলোসিস। সমস্যার উৎস খুঁজে সেই মতো এক্সারসাইজ় করানো হয়। ‘‘আইসোমেট্রিক এবং আইসোটনিক— দু’রকমের এক্সারসাইজ় দিয়েই স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করি,’’ বলছেন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সুরজিৎ রায়।
ওজন এবং বয়সজনিত সমস্যা
সুরজিৎ বলছেন, ‘‘ওজন বেড়ে গিয়ে মাসলের যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তার সমাধানের জন্য ব্যায়াম আছে। প্রথমে ওজন কমাতে হবে। তার পর পা এবং পিঠের মাসল টোন করে তার জোর বাড়াতে হবে।’’ সিঙ্গল লেগ লিফট, সাইড ওয়াইড ওয়াকিং, স্কোয়াট, হিল-টো ওয়াকিং, স্ট্রেট লেগ রাইজ়িং... ব্যালান্সিং বাড়াতে সাহায্য করবে।
চল্লিশের পর থেকেই অনেকের হাড়ের সমস্যা দেখা যায়। হাঁটুর জোর কমে যায়। এ ছাড়াও আঘাতজনিত সমস্যা থাকতে পারে। এবং সর্বোপরি নার্ভের সমস্যা। ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সোনালি সেনগুপ্তর বক্তব্য, ‘‘ফিজ়িয়োথেরাপিতে নিউরো ডায়নামিক এক্সারসাইজ় করানো হয়। বিশেষ ধরনের স্ট্রেচিং থাকে। ওষুধ এবং ব্যায়ামে হাড়, নার্ভ, আঘাতজনিত যে ভারসাম্যের সমস্যা তা থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।’’ বল এক্সারসাইজ়, সাঁতার, রেলিং ধরে ওঠা-বসা, মেঝেতে একটা লাইন করে দিয়ে, সেটার উপর দিয়ে হাঁটা এবং মেডিটেশনের পরামর্শ দিলেন সোনালি।
শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় ডায়েটেরও বিশেষ ভূমিকা আছে। এটা অবশ্যই দেখতে হবে শরীর যেন প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি, ই, ডি এবং ম্যাগনেশিয়াম পায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy