Advertisement
E-Paper

উপসর্গ স্ট্রোকের, স্তন ক্যানসারের টিউমার বাদ দিতেই সাড়া চিকিৎসায়

চিকিৎসকদের মতে, প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সেরিবেলার ডিজেনারেশনের আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। স্তন ক্যানসারের চিকিৎসাতেই সেটি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

breast cancer.

—প্রতীকী ছবি।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১০
Share
Save

স্বাভাবিক ছন্দেই জীবন চলছিল বছর তেতাল্লিশের মহিলার। কিন্তু হঠাৎ এক দিন বুঝতে পারলেন, হাঁটতে গিয়ে পা বেঁকে যাচ্ছে, গিলতে সমস্যা হচ্ছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, বমিও হচ্ছে। স্ট্রোক মনে করে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন পরিজনেরা। কিন্তু মস্তিষ্কের ছবিতে দেখা গেল, স্ট্রোক হয়নি মহিলার! চিকিৎসকেরা আরও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। কিন্তু কোনও পরীক্ষাতেই এমনটা হওয়ার প্রকৃত কারণ সামনে এল না। এ দিকে, স্ট্রোকের চিকিৎসা শুরু হলেও সাড়া দিচ্ছিলেন না রোগিণী। অবশেষে পেট সিটি স্ক্যান করে জানা গেল, মহিলার শরীরের ডান দিকের স্তনে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার।

কিন্তু সেই ক্যানসার তখনও অন্য অঙ্গে ছড়ায়নি। ফলে শল্য চিকিৎসক সৌমেন দাসের মনে হয়েছিল, প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সিন্ড্রোমের একটি ধরন হতে পারে এটি। প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সিন্ড্রোম সাধারণত দেখা যায় ফুসফুসের ক্যানসারে, তার পরেই নিউরো এন্ডোক্রিন ক্যানসারে। স্তন ক্যানসারে এটা কম দেখা যায়। আরও নিশ্চিত হতে মহিলার রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করান সৌমেন। প্রায় এক মাস পরে ফলাফলে আসে, অ্যান্টি ওয়াইও অ্যান্টিবডি এটি, যা পার্কিনজি অ্যান্টিবডি নামেও পরিচিত। সৌমেন জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের মেটাস্টেসিস বা চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছনোর আগেই রোগীর অন্যান্য অঙ্গ প্রভাবিত হতে থাকে। এই প্রভাবের কারণ ক্যানসারের কোষ থেকে নির্গত বিশেষ অ্যান্টিবডি বা হরমোন।

সৌমেনের কথায়, ‘‘ওই মহিলার বিশেষ অ্যান্টিবডি থেকে বোঝা যায় যে, তাঁর ক্ষেত্রে এটি প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সেরিবেলার ডিজেনারেশন (পিসিডি)। যেটি প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সিন্ড্রোমের একাধিক ধরনের একটি। এটি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে ধ্বংস করছিল। উপসর্গ এবং পেট সিটি-র রিপোর্ট দেখে সন্দেহ হওয়ায় রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় বোঝা যায়, চিকিৎসা ঠিক পথেই এগোচ্ছে।’’

চিকিৎসকদের মতে, প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সেরিবেলার ডিজেনারেশনের আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। স্তন ক্যানসারের চিকিৎসাতেই সেটি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে, কেমো বা অস্ত্রোপচারের পরে পিসিডি-র সমস্যা মিটে যায়। ওই মহিলার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে ছ’টি কেমো দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু তাতে টিউমারের আকার ছোট হলেও স্নায়ুর সমস্যার উন্নতি ঘটেনি। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পিসিডি-র কারণ যেটি, অর্থাৎ ওই অ্যান্টিবডির উৎসস্থল, টিউমারটি আগে বাদ দিতে হবে। সেই মতো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যানসার হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সৌমেন দাসের নেতৃত্বে কমলেশ রক্ষিত এবং রাহুল আগারওয়াল টিউমারটি বাদ দেন। অ্যানাস্থেশিয়ায় ছিলেন চিকিৎসক সুমিতাভ সর্দার ও স্বাগতা বিশ্বাস।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর স্নায়ুজনিত সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। রোগিণীর পরিবার তাঁদের এ কথা জানিয়েছেন। যা শুনে ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সেরিবেলার ডিজেনারেশন সচরাচর শোনা যায় না। ফলে এর চিকিৎসাও তত পরিচিত নয়। তা সত্ত্বেও এটির ঠিক ডায়াগনসিস করে রোগীর চিকিৎসা শুরুর বিষয়টি প্রশংসনীয়। এমনও যে হয়, সেই সচেতনতা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক— উভয়েরই দরকার।’’ ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্যারানিয়োপ্লাস্টিক সেরিবেলার ডিজেনারেশন যথেষ্ট বিরল। এমন ছক ভাঙা চিকিৎসার ক্ষেত্রে টিউমার বোর্ড গড়ে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Breast Cancer Health

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}