Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
কোমরে ব্যথা হলে সাবধান হোন। কোমরে ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে টেলবোন ইনজুরি বা ককসিক্সে চোট। পরামর্শ নিন চিকিৎসকের
tailbone

Tailbone Injury: টেলবোনে আঘাত, প্রয়োজন যত্নের

অর্থোপেডিক সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানান, কেউ যদি নিজের পশ্চাদ্‌দেশের উপর পড়ে যান, তা হলেই টেলবোনে চোট লাগে।

টেলবোন বা ককসিক্সে চোট।

টেলবোন বা ককসিক্সে চোট।

শ্রেয়া ঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৮:২৯
Share: Save:

কোমরে ব্যথা... গড়পরতা বাঙালির মুখে ‌এই লব্জটি একে বারে বাঁধা। তবে সত্যি কথা বলতে কী, কোমরে ব্যথা বললে আদতে এই শারীরিক সমস্যার অনেক দিককে ‘ব্ল্যাঙ্কেট স্টেটমেন্ট’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। কোমরে ব্যথা তো উপসর্গ মাত্র, কারণ অন্তর্নিহিত থাকে অনেক গভীরে। সেই কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল টেলবোন বা ককসিক্সে চোট।

ককসিক্স বা টেলবোন কাকে বলে?

মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে স্যাক্রামের নীচের অংশকে সাধারণত টেল বোন বা ককসিক্স বলা হয়। সাধারণত প্রাইমেটদের ক্ষেত্রে ওই অংশ থেকে লেজ শুরু হয়, তাই হাড়টির নাম টেলবোন। মানুষ-সহ যে সমস্ত প্রাইমেটের লেজ নেই তাদের ক্ষেত্রে ককসিক্সকে বলা হয় ভেস্টিজিয়াল টেল। তিন থেকে পাঁচটি অপূর্ণাঙ্গ কশেরুকা নিয়েই মূলত ককসিক্স তৈরি হয়। স্যাক্রাম ও ককসিক্স এক সঙ্গে দেহের ওজন সামলে বসা, দাঁড়ানো ও হাঁটাচলা নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি, চেয়ারে বসা বা পিছন দিকে হেলে বসার নিয়ন্ত্রণও রয়েছে ককসিক্সের হাতে।

ককসিক্সে চোট, সামলাবেন কী ভাবে?

অর্থোপেডিক সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানালেন, কেউ যদি নিজের পশ্চাদ্‌দেশের উপর পড়ে যান, তা হলেই টেলবোনে চোট লাগে। মানুষ মূলত নিজের ‘ট্রাইপড’-এর উপরে বসে। এই ট্রাইপড হল দুটো ইশ্চিয়াল টিউবারসিটি (পেলভিক বোনের অংশ) ও ককসিক্স মিলিয়ে তৈরি। সেই জন্য মানুষ পশ্চাদ্‌দেশের উপর পড়ে গেলে ট্রাইপডে চোট লাগার পাশাপাশি টেলবোনেও চোট লাগে।

টেলবোনের আকার অনেকটা ‘সি’-এর মতো। পড়ে যাওয়ার ফলে অনেক সময়েই আরও বেশি বেঁকে যেতে পারে সেটি। অথবা ভেঙে সামনের দিকেও চলে আসতে পারে। দু’টি ক্ষেত্রেই শুরু হয় তীব্র ব্যথা। টেলবোন ভেঙে গেলে বসা তো দূরস্থান, হাঁটাচলাও বেশ সমস্যার হয়ে ওঠে।

গর্ভাবস্থায় ককসিক্সে চোট

ডা. মুখোপাধ্যায় এ-ও জানালেন, গর্ভাবস্থায় ককসিক্সে চোট পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত নর্মাল ডেলিভারির সময়ে বা ফরসেপ ডেলিভারির সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই টেলবোন ডিসলোকেটেড হয়ে যায়। তখন যথাযথ চিকিৎসা না হলে মোবিলিটি তথা হাঁটা-চলা-বসায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে শুধু পড়ে গেলেই টেলবোনে চোট লাগতে পারে এমনটা নয়।

গর্ভাবস্থায় ককসিক্সে চোট পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

গর্ভাবস্থায় ককসিক্সে চোট পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

ককসিডাইনিয়া বা টেলবোনের যন্ত্রণা

দীর্ঘক্ষণ এক ভাবে বসে থাকতে থাকতে ককসিক্সের পেশিগুলিতে ইনফ্ল্যামেশন ঘটে। নিয়মিত চলাফেরার অভাবে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে পেশি। ফলে শুরু হয় যন্ত্রণা। দেহের ওজন যদি বেশি থাকে তা হলে পেশির চোট তথা ইনফ্ল্যামেশন আরও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি, মাত্রাতিরিক্ত ওজনের জন্য চাপ পড়ে স্যাক্রাম ও ককসিক্সে। দুই মিলিয়ে যন্ত্রণা তীব্রতর হয়। বর্তমান প্রজন্মের টেলবোনে চোটের এটি অন্যতম কারণ। নিয়মিত চিকিৎসা, শরীরের কোর স্ট্রেংথ বাড়ানো ও ফিজ়িয়োথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ককসিডাইনিয়া।

ডা. মুখোপাধ্যায় একই সঙ্গে জানালেন, ককসিক্সের সমস্যা যে সব সময়ে একই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়। বিশেষ করে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বা যাঁদের হাড় দুর্বল তাঁদের যদি ককসিক্সে সমস্যা থাকে তা হলে পুরো শিরদাঁড়া পরীক্ষা করানোই বাঞ্ছনীয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেক সময় পড়ে যাওয়ার জন্য টেলবোনে চোটের পাশাপাশি কনকমিটেন্ট স্পাইনাল ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সম্পূর্ণ মেরুদণ্ড পরীক্ষা করানোই সমীচীন।

ককসিক্সের চোট পুরোপুরি সারে কি?

এর উত্তরে ডা. মুখোপাধ্যায় জানালেন, বিষয়টা অত সহজ নয়। ধরা যাক তিন-চার মাসের বিশ্রাম এবং চিকিৎসায় ব্যথা ও সমস্যা কমল। কিন্তু আবার যদি কোনও ভাবে অল্প চোটও লাগে, তা হলে ব্যথা ফিরে আসতে পারে। তাই একবার ককসিক্স যদি কোনও ভাবে আহত হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ওজন কমানোর দিকেও নজর দিতে হবে।

মেনে চলার সাধারণ কয়েকটি নিয়ম হল—* হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে সচল রাখা।

* যে সমস্ত এক্সারসাইজ় বা কাজ করলে লোয়ার ব্যাকে চাপ পড়ে, সেগুলি না করা।

* নিজের অ্যাবডমিনাল কোর মাসল স্ট্রেংথ তৈরি করতে পারলে ভাল।

* বসার বা শোয়ার সময়ে ঠিকঠাক পশ্চার বজায় রাখা।

* অস্টিয়োপোরোসিস হচ্ছে কি না, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে, তা নিয়মিত খেয়াল রাখা।

শেষ কথা হিসেবে ডা. মুখোপাধ্যায় জানালেন, তীব্র ব্যথা সামলাতে এক-দু’বার ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যায়। কিন্তু ব্যথা হলেই পেনকিলারের শরণাপন্ন হওয়া মানে নিজের অসুখটাকে চেপে রেখে আরও বাড়তে দেওয়া। তাই যদি ক্রমাগত কোমরে বা লোয়ার ব্যাকে ব্যথা হতে থাকে, অবশ্যই চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

tailbone Injury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy