‘প্রেগনেন্সি ক্রেভিং’।
গর্ভে সন্তান বেড়ে উঠছে— এই খবর নিশ্চয়ই খুবই আনন্দের। একই সঙ্গে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে হবু মা-র জীবন, শরীর ও মনে পরিবর্তনের ঝড় বয়ে যায়। এরই একটি ‘প্রেগনেন্সি ক্রেভিং’। হয়তো মুখে স্বাদ নেই, সব রকমের খাবার খেতে পারছেন না, এ দিকে দিনের কোনও সময়ে হঠাৎ করে বিশেষ কোনও খাবারের প্রতি তুমুল আকর্ষণ বোধ করলেন। তা জাঙ্ক ফুড, কিংবা কোনও বিশেষ শরবত, আগে খেতেন না এমন খাবার, এমনকি একেবারে অখাদ্য-কুখাদ্যের প্রতিও টান জন্মাতে পারে। এমন ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনিকলজিস্ট ডা. গৌতম খাস্তগীর।
কখন ও কেন দেখা দেয়?
প্রধানত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে প্রেগনেন্সি ক্রেভিং বেশি দেখা দেয়। বস্তুত, অনেকেরই মতে, গর্ভাবস্থার এই সময়টাই সবচেয়ে কঠিন ও ঝুঁকিবহুল। সে সময়ে এমন হঠাৎ চোখের খিদের কারণ হিসেবে ডা. খাস্তগীর বললেন, “এই সময়ে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ওলটপালট হয়ে যায়। তবে, মূলত প্রোজেস্টেরন হরমোন এই হঠাৎ খাওয়ার ইচ্ছের জন্য দায়ী। এই হরমোন ক্ষুদ্রান্ত্রের নড়াচড়াকে শ্লথ করে দেয়। ফলে গ্যাস, অম্বল, বদহজম, বমি ভাব দেখা দেয়। জিভের স্বাদ চলে যায়। খিদে কমে যায়, অন্য রকম খাবার খেতে ইচ্ছে হয়। এ সময়ে মস্তিষ্ক থেকে গোনাডোট্রপিন হরমোনও কম-বেশি ক্ষরিত হতে থাকে। খাওয়ার ইচ্ছে বা অনিচ্ছাকে মস্তিষ্কের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, এই গোনাডোট্রপিনের ক্ষরণ তার আশপাশেই হয়। তা ছাড়া, এই প্রবণতার একটি মনোবৈজ্ঞানিক কারণও আছে। মানুষকে যেটা করতে নিষেধ করা হয়, মানুষ সেটাই বেশি করে করতে চায়। যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অনেক সাবধানতা মানতে হয়, সেহেতু সেই নিয়ম ভাঙার প্রবণতাও দেখা দেয়।”
কী খেতে ইচ্ছে করে?
স্বাদ বদলাতে বেশির ভাগ সময়েই টক জাতীয় মুখরোচক খাবার যেমন চাট, ফুচকা, কখনও দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। মানুষভেদে এই চাহিদাও বদলায়। কেউ চকলেট পেস্ট্রি খেতে চান, কেউ লেবু জাতীয় ফল, আচার, আইসক্রিম, ডিম। জাঙ্কফুড, চিপস চাখার ইচ্ছে হয়। আবার দেখা যায়, আগে হয়তো দুধ, মিষ্টি অপছন্দের ছিল, সেটাই এখন বেশি ভাল লাগছে। যিনি মাছ-মাংস ছাড়া খেতেন না, তাঁর মাছ-মাংসে অরুচি দেখা দিতে পারে। খাদ্যে আসক্তির পাশাপাশি বিকৃতির কথাও শোনা গিয়েছে বলে জানালেন চিকিৎসক। মাটি, চক, বরফ খেতেও ইচ্ছে হয় অনেকের। তবে তা বিরল।
ক্রেভিং নিয়ন্ত্রণের উপায়
রোজ ঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট করুন। সকালেই পেটটা ভরে গেলে, সারা দিন নানা রকম খাবারের ইচ্ছে কম হয়। তবে বমির ফলে পেট খালি হয়ে গেলে সারাদিন খিদের ভাব থাকে। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সারা দিন অল্প অল্প খান। ড্রাই ফ্রুটস, দই, ফল ঘরে মজুত রাখুন। খেতে ইচ্ছে করলে অল্প করে খান। আইসক্রিম খেতে মন চাইলে ঠান্ডা ইয়োগার্ট খান, কোল্ড ড্রিঙ্কের বদলে ডাবের জল বা ফলের রস।
ডা. খাস্তগীরের পরামর্শ, প্রথমে খাওয়ার ইচ্ছেটা দমন করতে চেষ্টা করুন। না পারলে, ওগুলো অল্প অল্প খান। তবে, মাত্রাতিরিক্ত নয়। গোটা চকলেটের বদলে ছোট এক টুকরো ভেঙে খান। সামান্য কয়েকটি চিপস মুখে দিন। আর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে অবসন্ন ভাব, মানসিক উদ্বেগ কমবে। তাতেও এই চোখের খিদে নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ সময়ে বাইরের খাবার এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তার কারণ, বাইরে খাবারের স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হয়, তাই নিয়ে সংশয় থাকে। খুব ভাল হয়, যা খেতে ইচ্ছে করছে তা যদি বাড়িতে বানিয়ে খান। বাড়ির তৈরি চাউমিন, স্যান্ডউইচ খান। কখনও কখনও শসা, পেঁয়াজ, ছোলা, চানাচুর, নারকেল দিয়ে মুড়ি মেখে খেতে পারেন। বাইরের খাবার কম খেলে ভাল। খেলে ভাল রেস্তরাঁ থেকে খান। চিনা খাবার খেতে ইচ্ছে করলে বাড়িতেই রেঁধে নিন।
রোজ এক খাবার না খেয়ে ঘুরিয়েফিরিয়ে নানা রকম খান। কোনও দিন জলখাবারে মশলা মুড়ি খেলে, পরের দিন লেবুর রস দেওয়া ভুট্টা, তার পরের দিন অল্প ঘিয়ে নাড়া গাজরের হালুয়া খান। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো একটি ডায়েট চার্ট বানিয়ে মেনে চলুন। পরিমাণ মতো জল খান। এ সবে ক্রেভিং-এর সমস্যা কমবে। আপনি ও আপনার গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy