Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
পাহাড়ে ওঠার সময়ে উচ্চতা ও নিজের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে
High Altitude Sickness

Altitude Sickness: হাই অলটিটিউড সিকনেস হালকা ভাবে নেবেন না

পাহাড়ে যত উপরে ওঠা যাবে, বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ততই কমবে। যাঁরা সমতলে থাকেন, তাঁদের শরীর যথেষ্ট অক্সিজেনের মধ্যে কাজ করে অভ্যস্ত।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ ০৮:২৪
Share: Save:

বেড়াতে গিয়ে পাহাড়ে ওঠার সময়ে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কেউ মুখে-চোখে জল দিচ্ছেন, কেউ বা বিধ্বস্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়েছেন। আবার কেউ বমি করে একশা! আট থেকে দশ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠলেই মাথা ঘোরা, মাথায় যন্ত্রণা, বমিভাব বা শ্বাসকষ্টে নাজেহাল হয়ে পড়েন অনেকে। এই সমস্যার নাম হাই অলটিটিউড সিকনেস বা মাউন্টেন সিকনেস। কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বিপদ ডেকে আনে। তাই আগাম প্রস্তুতি নিন।

কেন হয়?

পাহাড়ে যত উপরে ওঠা যাবে, বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ততই কমবে। যাঁরা সমতলে থাকেন, তাঁদের শরীর যথেষ্ট অক্সিজেনের মধ্যে কাজ করে অভ্যস্ত, তাই হঠাৎ কম অক্সিজেনের মধ্যে পড়লে কাবু হয়ে যান। তখন হার্ট দ্বিগুণ পরিশ্রম করে শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক রাখতে। এই সমস্যা পাহাড়ি মানুষদের হয় না। “তাঁদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নিয়ে যায়। ফলে শরীর ঠিক মতো কাজ করে। এ দিকে সমতলের বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা পাহাড়ের তুলনায় বেশি, তাই সেখানে মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক। তাই সমতলবাসী হঠাৎ হাই অলটিটিউডে গেলে কম অক্সিজেনের মধ্যে হিমোগ্লোবিন ঠিক কাজ করতে পারে না, তখনই শরীর বিদ্রোহ করে,” বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার।

মাউন্টেন সিকনেস বা অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেস-এর তিনটি ভাগ আছে। মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়র। মাইল্ড হলে সামান্য মাথা ধরে, ক্লান্ত লাগে, কিন্তু স্বাভাবিক কাজকর্মে খুব অসুবিধে হয় না। মাথা ঘোরা, মাথার ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা, বমিভাব এগুলো মডারেটের লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে নীচের দিকে নামতে থাকলে সমস্যা কমে যায়। সিভিয়র পর্যায়ে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁটাচলা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এমনকী ফুসফুসে জল জমে পালমোনারি এডিমা বা মস্তিষ্কে জল জমে সেরিব্রাল এডিমা হওয়ারও আশঙ্কা থাকে! এই সমস্যা কি বয়স বা লিঙ্গভেদে বেশি কম হতে পারে? উত্তরে ডা. তালুকদার বললেন, ‘‘হাই অলটিটিউড সিকনেস নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও বয়সে হতে পারে। দেখা গিয়েছে, সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তি বিনা সমস্যায় ট্রেক করে আসছেন, আবার নিয়মিত খেলোয়াড় বা শারীরিক ভাবে ফিট ব্যক্তি এই সমস্যায় কাবু। এমনকী হাই অলটিটিউডে গিয়ে প্রথমবার সমস্যা হয়নি বলে পরেরবারও যে হবে না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।’’ কম উচ্চতাতেও গাড়ি করে পাহাড়ে ওঠার সময়ে অনেকের বমি পায়। ‘‘একে মোশন সিকনেস বলে। গাড়ি করে পাহাড়ি রাস্তায় পাক খেতে খেতে উঠলে সমস্যাটা হয় প্রবল দুলুনির জন্য। সমতলেও এই সমস্যা হতে পারে,’’ বললেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল।

কী করে এড়িয়ে চলবেন

সমতলের শরীর পাহাড়ে গিয়ে বিদ্রোহ করলেও, দু-একদিন ওই উচ্চতায় থাকলে সে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। একে বলে অ্যাক্লাইমেটাইজ় হওয়া। হাই অলটিটিউডে যাওয়ার প্ল্যান এমন ভাবে করবেন যাতে রোজ একটু একটু করে উচ্চতায় ওঠা যায়। উচ্চতার দিক থেকে ৫০০ মিটারের বেশি একদিনে না ওঠাই ভাল, সে ট্রেক করে হোক বা গাড়ি করে। ডা. তালুকদার বললেন, ‘‘অনেকেই সরাসরি কলকাতা থেকে প্লেনে লাদাখ চলে যান। আড়াই-তিন ঘণ্টার মধ্যে এতটা উপরে উঠে যাওয়া বেশ ঝুঁকির। এ ক্ষেত্রে দিল্লি পর্যন্ত প্লেনে গিয়ে, সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে হল্ট করতে-করতে যান। এতে অনেক জায়গা দেখা হবে, শরীরও নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে।’’

মেনে চলুন

প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। হাইপ্রোটিন খাবার কম খান, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, যা সহজপাচ্য তাই থাকুক রোজকার মেনুতে। মদ্যপান বা ধূমপান একেবারেই নয়। বড় অসুখ থেকে সেরে উঠেই বেশি উচ্চতায় ঘুরতে যাবেন না। ‘‘যাঁদের হাঁপানি, সিওপিডি, নেজ়াল ব্লক, কার্ডিয়াক সমস্যা আছে তাঁরা হাই অলটিটিউডে যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষত যাঁদের হার্টের সমস্যা আছে। কম অক্সিজেনের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য হার্ট দ্রুত চালিত হয়, এই পরিস্থিতিতে হার্ট দুর্বল হলে হার্টফেল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,’’ বললেন ডা. মণ্ডল ।

সঙ্গে রাখুন

প্যারাসিটামল, নেজ়াল স্প্রে, বমি বন্ধের ওষুধ রাখুন ব্যাগে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ইনহেলার নেবেন। নিতে পারেন পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান। এমন কিছু ওষুধ আছে যা বেশি উচ্চতায় ওঠার আগে খেলে হাই ব্লাডপ্রেশারজনিত সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেই ওষুধ খাবেন।

বাচ্চাদের জন্য

‘‘সাত বছর বয়স হওয়ার আগে হাই অলটিটিউডে কখনওই নিয়ে যাবেন না। খুব ছোট বয়সে ফুসফুস সম্পূর্ণ তৈরি হয় না। বাচ্চারা তাদের শরীরের সমস্যা পরিষ্কার বলতে পারার মতো হলে তাদের অফবিট জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাববেন। ছোটরা যেখানে আনন্দ পাবে সেরকম জায়গা নির্বাচন করুন, অন্যথায় বাড়িতে দাদু-ঠাকুরমার কাছে তাদের রেখে বাবা-মা ঘুরে আসুন,’’ পরামর্শ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

High Altitude Sickness Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy