গাউচার’স ডিজ়িজ় নির্ধারণ করা খানিক কঠিন।
এটি একটি বিরল রোগ। তবে এর উপসর্গগুলি খুবই সাধারণ। ছোট বয়সে ধরা না পড়লে, গাউচার’স ডিজ়িজ় নির্ধারণ করা খানিক কঠিন। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নানা উপসর্গের পিছনে অন্য কোনও রোগ থাকতে পারে। গাউচার’স ডিজ়িজ়ের কারণেই যে সমস্যাগুলি হচ্ছে, সেটা তখন বোঝা যায় না।
গাউচার’স ডিজ়িজ় কী?
ডা. অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘গাউচার’স ডিজ়িজ় একটি বংশানুক্রমিক রোগ। বাবা-মায়ের থাকলে সন্তানের থাকবেই। বাবা বা মা কারও একজনের হলে, সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।’’ এই রোগীদের শরীরে ফ্যাট ভেঙে দেওয়ার মতো এনজ়াইম বা উৎসেচক থাকে না। ফলে শরীরের লাইসোজ়োম কোষগুলিতে ফ্যাট জমতে থাকে। মস্তিষ্ক, হাড়, রক্তকণিকা, লিভার, স্প্লিনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লাইসোজ়োম থাকে। গাউচার’স ডিজ়িজ় হলে এই কোষগুলিতে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এবং কোষগুলি আয়তনে বাড়ে।
ডা.তালুকদারের মতে, পূর্ব ইউরোপের ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা গিয়েছে। এই সম্প্রদায়ের বংশধররা যে দেশগুলিতে থাকেন, সেখানেই এই রোগ দেখা যায়। যেমন, আমেরিকা। পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে এখনও অবধি ভারতে এই রোগের প্রভাব বেশ কম।
প্রকারভেদ ও উপসর্গ
গাউচার’স ডিজ়িজ় সাধারণত পাঁচ রকমের হয়। টাইপ ওয়ান, টু এবং থ্রি। টাইপ থ্রি-এর তিনটি ভাগ রয়েছে (এ, বি, সি)। রোগীর এই পাঁচ রকমের যে কোনও একটি বা একাধিক ধরনের সমস্যা হতে পারে।
যে অঙ্গ প্রথম গাউচার’স ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হবে, সেই অঙ্গের উপসর্গগুলি স্পষ্ট হবে। যেমন, কারও অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রায়শই হচ্ছে। অথচ তার জুতসই কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারও লিভার বা স্প্লিন ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছে। বা কারও হাড় ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। হাড়ে ব্যথা হচ্ছে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে নার্ভের সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগের উপসর্গগুলি শুধুমাত্র একটি রোগভিত্তিক নয়। সেই কারণেই তা বুঝতে খানিক সময় লাগে।
রোগনির্ণয়
গাউচার’স ডিজ়িজ় সাধারণত ছোট বয়সে ধরা পড়ে। লোহিত রক্তকণিকার সঙ্গে এই রোগে প্লেটলেটের সংখ্যাও কমে। তাই কোনও শিশুর অ্যানিমিয়া বা লিভার বড় হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে এবং অন্য কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলে, চিকিৎসকেরা এই রোগের সন্ধান করেন।
শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে একটি বিশেষ উৎসেচকের পরিমাণ কমে গিয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। যদি সেই এনজ়াইম দশ শতাংশের কম থাকে, তবে তা গাউচার’স ডিজ়িজ় বলে ধরা হয়।
ডা.তালুকদার জানালেন, এই ব্লাড টেস্ট দেশের বিশেষ কয়েকটি ল্যাবরেটরিতেই হয়। এ ছাড়া রোগীর জেনেটিক স্টাডিও করা হয়।
দুই থেকে আট বছর বয়সি শিশুদের এই রোগ নির্ধারণ করা হয়। তবে আগেই বলা হয়েছে, এটি বিরল রোগ। তাই প্রথমেই চিকিৎসকেরা এই রোগের সন্ধান করেন না।
চিকিৎসা
এই রোগ থাকলেও সত্তর বছর বয়স অবধি কোনও ব্যক্তি বেঁচে থাকতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে রোগটা কত দ্রুত ছড়ায়, তার উপরে। কারও যদি কোষে ফ্যাট জমার প্রক্রিয়া খুব ধীর গতিতে হয়, তা হলে কিছু উপসর্গ ছাড়া তার আর কোনও সমস্যা থাকবে না।
যে এনজ়াইম কম থাকার কারণে এই রোগ হয়, তা এখন বাজারে ওষুধের আকারে পাওয়া যায়। প্রতি দু’সপ্তাহ অন্তর তা ইনজেক্ট করতে হয় রোগীর শরীরে। এতে আর পাঁচটি শিশুর মতোই সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করতে পারে গাউচার’স ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত শিশুটি। তবে বিরল রোগ হওয়ায়, ওষুধটি দামি।
গাউচার’স ডিজ়িজ়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। প্রয়োজন সতর্কতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy