কাপিং থেরাপি। —ফাইল চিত্র।
উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন বাংলার জনপ্রিয় এক তারকা। তাঁর পিঠের উপরে বসানো রয়েছে ছোট ছোট কাপের আকৃতির কয়েকটি কাচের পাত্র। সম্প্রতি এমনই একটি ছবি ঘুরছিল সমাজমাধ্যমে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই সব কাচের পাত্রগুলি কী এবং সেগুলি কেন পিঠে বসানো, তা নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই।
ফিজ়িয়োথেরাপিস্টরা জানাচ্ছেন, দেহের কোনও অংশে এই ভাবে ছোট ছোট পাত্র বসানো আসলে এক ধরনের থেরাপির অঙ্গ। প্রাচীন চিন, ইজিপ্ট এবং মধ্য প্রাচ্যে এর চল ছিল। বর্তমানে এই কাপিং থেরাপি আবার জনপ্রিয় হচ্ছে।
কাপিংয়ের ব্যবহার
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস জানাচ্ছেন, মূলত ব্যথা কমানোর জন্য এর ব্যবহার হয়। এ ছাড়া, দেহের কোনও অংশে শক্ত হয়ে থাকা পেশিতে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে নমনীয়তা ফেরাতেও কাপিং উপযোগী। অ্যাকনে, একজ়িমার মতো ত্বকের সমস্যা, দেহে ইনফ্লামেশন, ভ্যারিকোজ় ভেন থেকে উপশম মিলতে পারে এই পদ্ধতিতে। তা ছাড়া, এটির মাধ্যমে ডিপ টিসু মাসাজও সম্ভব।
কী ভাবে হয় কাপিং
থেরাপির নাম থেকেই স্পষ্ট, এতে কাপের মতো পাত্রের ভূমিকাই প্রধান। এই কাপ হতে পারে বিভিন্ন আকারের। সাধারণত এগুলি কাচ, মাটি, ধাতু বা বাঁশের তৈরি হয়। মূলত কাপের মধ্যে শূন্যস্থান (ভ্যাকুয়াম) তৈরি করে সেগুলি দেহের নির্দিষ্ট জায়গায় উল্টো করে বসিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে কাপগুলি চামড়ার সঙ্গে এঁটে বসে যায়। এই ভাবে সেগুলি রেখে দেওয়া হয় তিন-চার মিনিট। এর ফলে ওই অংশের শিরাগুলি ফুলে ওঠে, রক্ত চলাচল বাড়ে সেখানে। এর পরে কাপগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রয়োজন বুঝে নির্দিষ্ট সংখ্যার কাপ ব্যবহার করেন থেরাপিস্ট। এ সব ক্ষেত্রে কাপের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি করতে আগুনের ব্যবহার করা হলেও আধুনিক পদ্ধতিতে অনেক সময়েই ব্যবহার করা হয় পাম্প কাপ। এতে যন্ত্রের সাহায্যে কাপের ভিতরের বাতাস বার করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া, সিলিকন কাপের ব্যবহার করলে সেগুলি সহজেই ত্বকের উপর দিয়ে টেনে বিভিন্ন জায়গায় সরানো যায়। ডিপ টিসু মাসাজে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়।
সৌমেন জানাচ্ছেন, এ ছাড়াও ওয়েট কাপিং নামে একটি পদ্ধতির চল রয়েছে। এতে কাপ বসানোরকিছু ক্ষণ পরে সেগুলি সরিয়েনেওয়া হয়। এর পরে ফুলে ওঠা অংশে ধারালো কিছু দিয়ে অগভীর ভাবে কেটে সামান্য রক্ত বার করে নেওয়া হয়। মনে করা হয়, এতে দেহের টক্সিন সহজেই বেরিয়ে যায়। এর পরে আবার কাপ বসানো হয়। পরে ওই অংশে ওষুধ লাগিয়েহাল্কা করে টেপ বা ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়।
কারা করাতে পারেন
এই থেরাপি মূলত খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত বা ফিটনেসপ্রেমীরা করিয়ে থাকেন। তবে দ্রুত ব্যথামুক্তির জন্য সকলেই করাতে পারেন এটি। রিউম্যাটিক, অ্যানিমিক রোগীরা, ত্বকের সমস্যা বা মাইগ্রেনে ভোগেন যাঁরা, সকলেই উপকার পেতে পারেন এই থেরাপিতে। যাঁরা দ্রুত ব্যথার উপশম চান, তাঁদের জন্য উপযুক্ত এই থেরাপি।
কী কী সাবধানতা দরকার
কাপিং সাধারণত নিরাপদ হলেও কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা দরকার। একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট অতনু হালদার বললেন, “কাপ দিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরির জেরে থেরাপির পরে ত্বকের উপরে গোল দাগ বেশ কিছু দিন থাকে। যাঁরা এই থেরাপি করাতে যাবেন, তাঁদের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। থেরাপিস্টের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই যাওয়া উচিত। কারণ, এর জন্য মানবদেহে পেশি, রক্তবাহী শিরা-ধমনীর অবস্থান সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ওয়েট কাপিংয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা বেশি দরকার, কারণ এতে সংক্রমণের ভয় থাকে। ব্যবহৃত কাপ ও অন্য জিনিস ঠিক মতো জীবাণুমুক্ত করা কি না, খেয়াল রাখতে হবে সেই দিকে।” এ ছাড়া, কাপ বসানোর সময়ে ব্যথা বা ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। অতনু জানান, কাপের ভ্যাকুয়ামের চাপ সহ্য করার জন্য কারও ত্বক উপযুক্ত কি না, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে থেরাপিস্টকে।
কত দিন দরকার
সমস্যার গুরুত্ব বুঝে সেশনের প্রয়োজনীয়তা ঠিক করেন থেরাপিস্ট। সাধারণত, তিন-চারটি সেশনের প্রয়োজন পড়ে। তবে প্রথম বার থেকেই ফল মিলতে শুরু করে বলে জানাচ্ছেন থেরাপিস্টরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy